জুমবাংলা ডেস্ক : গাইবান্ধার বাসিন্দা আনারুল ইসলাম পেশায় রডমিস্ত্রি। কাজ করেন নারায়ণগঞ্জে।স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও এক সন্তানকে নিয়ে সেখানেই থাকেন। তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ায় প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের এক মাস আগেই মনোয়ারার বাবার বাড়ি লালমনিরহাট শহরের শাহজাহান কলোনির বাড়িতে রাখতে গত সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর কমলাপুর থেকে আন্তঃনগর ‘লালমনি এক্সপ্রেসে’ রওয়ানা দেন। তারা আসন নেন ‘গ’ বগিতে।
পথিমধ্যে চলন্ত ট্রেনেই প্রসববেদনা শুরু হয় মনোয়ারার। এসময় ওই নারী কান্নায় ‘গ’ বগির ঘুমন্ত যাত্রীরাও জেগে ওঠেন। বগিটির ৪-৫ নম্বর আসনে স্বামীসহ বসেছিলেন মনোয়ারা। পাশের যাত্রীরা জানতে পারেন, ওই নারী প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছেন। ফলে পুরুষ যাত্রীরা আশপাশ থেকে সরে যান। ছুটে আসেন বেশ কয়েকজন নারী যাত্রী। তারা চাদর-গামছা দিয়ে আসনটি ঘিরে ফেলেন।
এসময় প্রয়োজন পড়ে একজন চিকিৎসকের। ভাগ্যক্রমে ওই ট্রেনে ছিলেন একজন তরুণ চিকিৎসকও। ডাকে সাড়া দিয়ে তিনিও এগিয়ে আসেন। সবার সহযোগিতায় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে এক পর্যায়ে নিজের আসনেই মনোয়ারা জন্ম দেন একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান। পুরো ট্রেনজুড়ে যেন উচ্ছ্বাসের ঢেউ খেলে যায়। ধর্মীয় রীতি মেনে সদ্যজাত শিশুটির কানের কাছে আজান দেন এক যাত্রী।
গত সোমবার টাঙ্গাইল জেলা এলাকায় চলন্ত ‘লালমনি এক্সপ্রেসে’র এই ঘটনা ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। জানা যায়, পরে ট্রেনটি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে পৌঁছালে রেলওয়ে পুলিশের সহায়তায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে ওই নারীকে পাঠানো হয় উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে চিকিৎসা শেষে সদ্যজাত সন্তানকে নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাতে লালমনিরহাট শহরের শাহাজাহান কলোনিতে বাবার বাড়িতে পৌঁছেন মনোয়ারা ও তার স্বামী।
ঘটনার সময় ওই ট্রেনে দায়িত্বপালনকারী রেলওয়ের ভ্রাম্যমাণ টিকেট পরীক্ষক (টিটিই) জাকিরুল ইসলাম বলেন, কমলাপুর থেকে ট্রেনে উঠে ওই দম্পতির লালমনিরহাট আসার কথা ছিল। ‘গ’ বগিতে চেঁচামেচি শুনে সেখানে গিয়ে দেখি ওই মায়ের প্রসববেদনা উঠেছে। পরে তাকে সাহায্যের জন্য অন্যান্য নারী যাত্রী, রেলওয়ে পুলিশসহ সবাই এগিয়ে আসে। ভাগ্যক্রমে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. জহির উদ্দিন মো. বাবরকেও আমরা সেখানেই পেয়ে যাই।
ট্রেনের যাত্রী আদিতমারী উপজেলা যুবলীগ নেতা রবিউল ইসলাম বাবুল বলেন, আমি ওই বগিতেই কিছুটা দূরে বসেছিলাম। রাতে চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে ঘটনা জানতে পারি। কয়েকজন নারী যাত্রী কাপড় দিয়ে প্রসূতিকে আড়াল করে ধরার পর ডা. বাবরের সহায়তায় নিরাপদে সন্তান জন্ম দেন ওই মা।
ডা. জহির উদ্দিন মো. বাবর বলেন, আমি কাজ শেষে পাটগ্রামে ফিরছিলাম। রাতে ট্রেনে অনেকেই একজন চিকিৎসক খুঁজছিলেন, ফলে আমি এগিয়ে যাই সেখানে। বাচ্চাটা প্রসবের পর ‘জরায়ুর ফুল (প্ল্যাসেন্টা)’ সম্পূর্ণ আটকে ছিল। এটা দ্রুত বের করতে না পারলে রক্তক্ষরণের কারণে মায়ের মৃত্যু হতে পারতো। ফলে সেটা আমার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে অনেকটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে আমি তা নিরাপদে বের করতে সক্ষম হই। মা-সন্তান এখন দুজনেই ভালো আছেন।
লালমনিরহাট রেলওয়ে থানার পরিদর্শক ফেরদৌস আলী জানান, প্রসবের পর চিকিৎসকের পরামর্শে মা-সন্তানকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে নামিয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের টহল গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। পরে তাদের ওই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মনোয়ারার স্বামী আনারুল ইসলাম বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ নানা পরীক্ষার পর চিকিৎসক সম্ভাব্য প্রসবের দিন আগামী ২৮ ডিসেম্বর বলে জানিয়েছিলেন। তাই এক মাস আগেই স্ত্রীকে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসছিলাম নিরাপদ প্রসবের জন্য। কিন্তু ট্রেনেই আমার ছেলের জন্ম হয়।
মনোয়ারা বেগম বলেন, এমনটি হবে আমি বুঝতে পারিনি। তবে ট্রেনে অনেক মানুষের সাহায্যে আমি বেঁচে গেছি। তাদের কথা আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।