জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারে ডাকাতির সময় অপহৃত ৮ মাসের শিশুকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করেছে র্যাব। ঐ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
অপহরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা তদন্তের স্বার্থে নজরদারিতে রাখা হয়েছে শিশুর বাবা আবু জাফরকে। আর অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী ফাতেমা আক্তার শাপলাকে শুক্রবার রাতেই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, অপহরণের দুই সপ্তাহ আগে বাসাটি রেকি করে অপহরণকারীরা। এরপর সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া নেয় ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে। বাসা ভাড়া নেয়ার একদিন পরই শিশুটিকে অপহরণ করে। অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করেনি চক্রটি।
শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
তিনি বলেন, ১৫ নভেম্বর সকাল ৯টার দিকে আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ফারজানা নামে এক নারীর বাসায় ডাকাতির সময় নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নেয়ার পাশাপাশি বাচ্চাটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য র্যাব-১০ এর কাছে সহায়তা চায়। এরপর জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব।
এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে পরিকল্পনাকারী ফাতেমা আক্তার শাপলাকে গ্রেফতার করে। এ সময় অপহৃত ৮ মাস বয়সী শিশু আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতি ও অপহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন গ্রেফতারকৃত ফাতেমা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, আরিসা জান্নাত জাইফার মায়ের নাম ফারজানা আক্তার। তিনি সরকারি চাকরি করেন এবং শিশুটির বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রাজধানীর আজিমপুরের লালবাগ টাওয়ার এলাকায় একটি বাসায় গত ৩ বছর ধরে বসবাস করছেন তারা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত নারী জানায়, অপহরণের ১ সপ্তাহ আগে অপহৃত শিশুর মায়ের সঙ্গে অফিসে যাতায়াত করার সময় শাপলার পরিচয় হয়। এ সময় শাপলা ভুক্তভোগী মায়ের কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় দেন।
ফাতেমা আক্তার শাপলা জানায়, সে অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করে।
র্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, ফাতেমা আক্তার শাপলা শিশুটির মা ফারজানা আক্তারকে আরো জানায়, তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুটিকে দেখভালও করতে পারবে। পরে ফাতেমা আক্তারকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য রাজি হয় শিশুটির মা। গত ১৪ নভেম্বর বিকেলে বাসায় যায় ফাতেমা এবং শিশুটির মাকে ২০০০ টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসেবে দিয়ে বাসায় রাতযাপন করে। পরদিন সকালে ফাতেমা শিশুটির মা ফারজানা আক্তারকে জানায়, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে তার বাসায় আসবে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফাতেমা তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে ৩ ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ভিকটিমের মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ সময় ফাতেমা ও তার সহযোগীরা বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে শিশু জাইফাকে নিয়ে চলে আসে এবং তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে। পরে নজরদারি ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে শিশু জাইফাকে উদ্ধার করে অপহরণের পরিকল্পনাকারী ফাতেমা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।
মুনীম ফেরদৌস বলেন, ফাতেমা ও তার সহযোগীরা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনাটি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে তারা মুক্তিপণ দাবি করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ফাতেমা আক্তার শাপলা একজন গৃহিণী। সে ২০১০ সালে তার পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসবাস শুরু করে। পরে রাজধানীর অপর একটি কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেনি। ২০২৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং ৩-৪ মাস আগে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় তার স্বামীর নিজস্ব ফ্লাটে বসবাস শুরু করে।
ফাতেমার বিগত সময়ের কোনো অপরাধ সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে মুনীম ফেরদৌস বলেন, ঐ বাসায় ফাতেমা ছাড়াও সুমন, হাসান, রায়হান নামে তিনজনের উপস্থিতি ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে ফাতেমা। তবে ভিকটিম শিশুর মা দাবি করেছে, বোরকা পরা আরো এক নারী ছিলেন। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, অপহরণ করে টাকা আদায়ই ছিল লক্ষ্য। ভিকটিম জাইফার মা ফারজানা আক্তার ও বাবা আবু জাফরের মধ্যে দাম্পত্য মনোমালিন্য ছিল। স্বামী জাফর ঐ বাসায় যাওয়া আসা করতেন। তবে তিনি বাসায় থাকতেন না। তদন্তের স্বার্থে সংশ্লিষ্টতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ভিকটিমের বাবা আবু জাফরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।