লাইফস্টাইল ডেস্ক : কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি। এটি দেখতে অনেকটা মোমের মতো নরম। এটি আমাদের দেহের কোষের দেয়ালে থাকে। আমরা যখন চর্বিজাতীয় খাবার খাই, তখন আমাদের যকৃতে এই কোলেস্টেরল তৈরি হয় এবং রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে আমাদের দেহের সব রক্তনালিতে ছড়িয়ে পড়ে।
কোলেস্টেরল শরীরের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে। যেমন– হরমোন তৈরিতে, চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলোর পরিপাকে এবং ভিটামিন ডি তৈরিতে।
তবে যদি অধিক পরিমাণ চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া হয়, তা ধমনির দেয়ালে জমাট বেঁধে প্লাক তৈরি করে এবং রক্ত চলাচলে বাধা দেয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। যেমন– উচ্চরক্তচাপ, হৃৎপিণ্ডের নানা ধরনের অসুখ, হার্টঅ্যাটাক ইত্যাদি।
কোলেস্টেরল সাধারণত দুই ধরনের। এর মধ্যে ভালো ও খারাপ কোলেস্টেরল দুইই রয়েছে। চিকিৎসকদের কথায়, খারাপ (লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরল রক্তনালির মধ্যে জমতে থাকে। এতে রক্তপ্রবাহে বাধা তৈরি হয়। যার থেকে হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
খারাপ কোলেস্টেরল যেমন খারাপ, তেমন ভালো কোলেস্টেরলও শরীরের জন্য জরুরি। চিকিৎসকদের কথায়, ভালো কোলেস্টেরল হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে কিছু উপসর্গ দেখে তা বোঝা যায়। পা, জিভ ও চোখের বেশ কিছু বদল দেখে আগে থেকেই বোঝা সম্ভব কোলেস্টেরলের উপসর্গ।
পায়ে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়
পায়ের ধমনীতে কোলেস্টেরল জমতে থাকলে রক্ত চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে পায়ের পেশিতে মাঝে মাঝেই টান লাগে। এছাড়া হাঁটাচলা করলে পায়ের ব্যথা বেশ বেড়ে যায়। সাধারণত বিশ্রাম নেওয়ার সময় এই ব্যথা বাড়ে।
তবে চলাফেরার সময় অনেকটাই মারাত্মক হয়ে ওঠে পেশির টান। এছাড়া পায়ের লোম উঠে যাওয়ার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। ত্বকের রং আরও গাঢ় হয়ে যায়।
চোখে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়
চোখের পাতার হলদেটে ভাব রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের আরেকটি কারণ। এই লক্ষণের পোশাকি নাম জ্যান্থেলাসমাস। এক্ষেত্রে চোখের পাতায় হলদেটে রঙের ফ্যাট জমতে থাকে। তবে খুব বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল হলেই এই লক্ষণ ত্বকে ফুটে ওঠে।
জিভে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়
জিভের স্বাদ কোরক ফুলে যেতে থাকে কোলেস্টেরল বেশি হলে। এছাড়া, জিভ খরখরে হয়ে যায়। এর ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয় ও খাবারের স্বাদ ঠিকমতো পাওয়া যায় না।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে
শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল হটাতে হলে নিয়মিত শরীরচর্চা অপরিহার্য। সময়ের অভাবে কিছুই করতে না পারলে অন্তত প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় হাঁটুন। পাশাপাশি কিছু খাবার রয়েছে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন-
সবজি ও ফল
সবজি দেহের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং শক্তি জোগায়। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খেতে পারেন শুষ্ক সোয়া প্রোডাক্ট, মটরশুঁটি ও টফু। সব ধরনের সবজি ও ফল কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত যেসব সবজিতে ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন রয়েছে সেগুলো বেশি খেতে হবে।
মাছ
যারা সপ্তাহে তিন দিন অথবা এর বেশি সময় মাছ খায়, তাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কম থাকে। যারা উচ্চরক্তচাপ এবং বিভিন্ন হৃদরোগে ভুগছেন তাদের জন্য মাছ খুব উপকারী। এর মধ্যে হাই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।
অলিভঅয়েল বা জলপাইয়ের তেল
এতে রয়েছে মনো-আনসেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন-ই। মনো-আনসেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলকে কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএলকে বাড়াতে সাহায্য করে।
রসুন ও পেঁয়াজ
গবেষকরা বলছেন, রসুন, পেঁয়াজ ও পেঁয়াজজাতীয় খাবার শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখে। তরকারি ও সালাদে আমরা এটি ব্যবহার করতে পারেন। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে এই খাবার খাই না। এখন বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। শিমজাতীয় খাদ্য, ওয়ালনাট, জলপাই ইত্যাদির মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।