জুমবাংলা ডেস্ক : বনশ্রী, রামপুরা, ডিআইটি প্রজেক্ট, খিলগাঁওসহ আশপাশের এলাকায় হঠাৎ দুর্গন্ধ পাচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। এই গন্ধ প্রথম পাওয়া যায় গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে। মূলত সেই দিন ভোরেই গন্ধটা তীব্র ছিল। পরে মাঝে মাঝেই ওই গন্ধ পাচ্ছেন এসব এলাকার কেউ কেউ। তবে এই দুর্গন্ধ কোথা থেকে আসছে, কীসের গন্ধ তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই।
গেল কয়েকদিন ধরে এসব এলাকার বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন। এসব এলাকা কেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ, ব্যক্তিগত প্রোফাইলে এ বিষয়ে পোস্ট করছেন অনেকেই। সবাই জানতে চাইছেন, দুর্গন্ধটা কোথা থেকে আসছে? কীসের গন্ধ এটি। তবে কেউই এর সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না। দুর্গন্ধ নিয়ে করা ফেসবুক পোস্টগুলোতে সম্মতি জানিয়ে হাজার হাজার রিয়েকশন পড়ছে, সেই সঙ্গে শত শত কমেন্টের মাধ্যমে অনেকে এর ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বিভিন্নভাবে। তবে এসব কমেন্টে বেশিরভাগই উল্লেখ করেছেন, আমি এই দুর্গন্ধ পেয়েছি সেদিন ভোরে, মাঝে মাঝে পাওয়া গেছে। আবার অনেকে বলছেন, গন্ধ পেয়েছি তবে এর উৎস কোথায়, কোথা থেকে এই গন্ধ এলো?
রাজধানীর রাজধানীর বনশ্রীর ই ব্লকের একটি বাসায় পরিবারসহ ভাড়া থাকেন ইসরাত ফারহানা নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ঘটনাটি গত মঙ্গলবারের। ওইদিন ভোরে নামাজ পড়তে উঠে পুরো বাসায় একটা দুর্গন্ধ পাচ্ছিলাম। প্রথমে ভেবেছি শুধু আমার বাসা থেকেই এই দুর্গন্ধ আসছে। পরে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারি, আমাদের আশেপাশের বাসাগুলোর সবাই এমন দুর্গন্ধ পেয়েছে। এরপর এলাকার ফেসবুক গ্রুপগুলোতে দেখি, সবাই এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। কমেন্টে সবাই লিখছে দুর্গন্ধ পেয়েছি। তবে কেউই সঠিকভাবে বলতে পারছে না আসলে এই দুর্গন্ধটা কোথা থেকে এলো বা কীসের দুর্গন্ধ এটি। সেদিনই মূলত তীব্রভাবে এই দুর্গন্ধ পাওয়া গেছে। এরপর থেকে অতটা তীব্র গন্ধ পাওয়া না গেলেও মাঝে মাঝে গভীর রাতে বা ভোরে এমন গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
‘প্রিয় বনশ্রী’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, আজ রামপুরা, খিলগাঁও সব জায়গায় কেমন যেন একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বনশ্রীতেও কি এমন হচ্ছে? এই গন্ধ কীসের আর সব জায়গাতেই বা কেন?
ওই পোস্টে ৬১৮ জন রিয়েকশন দিয়েছেন। আর ৬১২ জন কমেন্ট করেছেন। কমেন্টে বেশিরভাগেই উল্লেখ করেছেন, তারা গন্ধটা পেলেও জানেন না কোথা থেকে গন্ধটা এসেছে। অনেকেই উল্লেখ করেছেন, রামপুরা, ডিআইটি প্রজেক্ট, খিলগাঁও, বনশ্রীসহ আশপাশের সব এলাকাতেই তারা এই দুর্গন্ধ পেয়েছেন।
মোস্তফা রাজি নামের একজন লিখেছেন, আমি রামপুরা, হাতিরঝিলের কাছে থেকে গত কয়েকদিন ধরে এই গন্ধ পাচ্ছি। কুকুর-বিড়ালের পায়খানার মতো বিকট গন্ধ। কিন্তু আমার ৮ম তলার ফ্লাটে এই গন্ধ আসবে কি করে!
নাদিয়া পারভিন নামে একজন লিখেছেন, আমি সি ব্লক থেকে এই গন্ধ মাঝরাত থেকে পেয়েছি। মনে করেছিলাম হয়ত বিড়াল সানসেটে মল ত্যাগ করেছে। সকালে মেয়েকে নিয়ে মাদ্রাসায় যাওয়ার সময়ও তীব্র গন্ধ বের হচ্ছিল পুরো রাস্তায়।
অনেকে এই দুর্গন্ধের সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করে পোস্ট করেছেন। মাসুদুর রহমান ইমন নামে একজন পোস্ট করে লিখেছেন, আমি আফতাবে থাকি। আমি প্রতিনিয়ত পাই এই গন্ধ, খুব বাজে, এটা আফতানগরের পয়ঃশোধনাগার প্রজেক্টের ধোঁয়ার গন্ধ। পানি পরিশোধন করছে, ফলে গন্ধটা বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে।
দিলরুপা বেগম নামের একজন লিখেছেন, সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে গন্ধটা আসছে। আমি প্রায়ই এমন গন্ধ পাচ্ছি।
অনেকেই বলছে, এটা মশা মারার ওষুধের গন্ধ। কেউ বলছেন, হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কার করার ওষুধের গন্ধ। আবার কেউ বলছেন, বনশ্রীর পাশ দিয়ে যাওয়া খালের ময়লা থেকে এমন গন্ধ আসছে। তবে বেশিরভাগেরেই মন্তব্য, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার থেকেই মূলত এই দুর্গন্ধ আসছে।
জানা গেছে, হাতিরঝিলের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে মোট ১১টি স্পেশাল স্যুয়ারেজ ডাইভারশন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস) আছে। এটা দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পয়োবর্জ্য এবং রান্নাঘরের পানি ও বর্জ্য চলে যাচ্ছে রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন স্যুয়ারেজ লিফটিং স্টেশনে। পয়ঃশোধনাগারের কাজ শুরু হয় এ লিফটিং স্টেশন থেকেই। এরপর এগুলো পাইপলাইনের মাধ্যমে চলে যায় দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারে।
রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন স্যুয়ারেজ লিফটিং স্টেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ এমন দুর্গন্ধ অনেকেই পেয়েছে। তবে কোথায় থেকে এমন দুর্গন্ধ এলো তা কেউ বুঝতে পারছে না। অনেকে ধারণা করছে, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার থেকে নির্গত ধোঁয়া বাতাসের চাপের কারণে নিচে চলে আসায় এমন দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছিল। এটা একটা কারণ হতে পারে তবে সঠিক কোন কারণে এমন দুর্গন্ধ হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না। মূলত দুর্গন্ধটা ওই দিনই পাওয়া গিয়েছিল, এরপর থেকে দুর্গন্ধটা আর নেই।
আসলেই কী দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার থেকে নির্গত ধোঁয়া বাতাসের চাপের কারণে নিচে নেমে আসায় এমন দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছিল? এ বিষয়ে জানতে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের প্রকল্প পরিচালক মহসিন আলীকে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
.
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার আসলে কী?
রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার পয়োবর্জ্য হাতিরঝিলের রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন স্যুয়ারেজ লিফটিং স্টেশন থেকে আফতাবনগর হয়ে চলে যাচ্ছে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারে। সেখানে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য পরিশোধন করা হচ্ছে।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার রমনা থানার অন্তর্গত মগবাজার, ওয়্যারলেস রোড, ইস্কাটন, নয়াটোলা, মৌচাক, আউটার সার্কুলার রোড, মহানগর হাউজিং এলাকা, কলাবাগান, ধানমন্ডি (পূর্বাংশ), তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও এলাকা, নাখালপাড়া, গুলশান, বনানী, বাড্ডা, আফতাবনগর, নিকেতন, সাঁতারকুল ও হাতিরঝিল এলাকার সৃষ্ট পয়োবর্জ্য পরিশোধন করা হচ্ছে।
হাতিরঝিলের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে মোট ১১টি স্পেশাল স্যুয়ারেজ ডাইভারশন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস) দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পয়োবর্জ্য এবং রান্নাঘরের পানি ও বর্জ্য চলে যাচ্ছে রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন স্যুয়ারেজ লিফটিং স্টেশনে। পয়ঃশোধনাগারের কাজ শুরু হয় এ লিফটিং স্টেশন থেকেই। প্রথমে সব ধরনের পয়োবর্জ্য এসে এখানে ঢোকে। তারপর পলিথিন, বোতলসহ এ ধরনের বড় বর্জ্য ছাকনির মাধ্যমে আলাদা করে রাখা হয়। আর পয়োবর্জ্য ও কিচেন ওয়াটারের বর্জ্যযুক্ত অংশ স্যুয়ারেজ লিফটিং স্টেশন থেকে আফতাব নগর হয়ে ট্রাংক স্যুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে চলে যাচ্ছে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারে।
দাশেরকান্দি শোধনাগারে প্রতিদিন প্রায় ৫০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য কয়েক দফায় পরিশোধন করে তা থেকে ৪৮ কোটি লিটার স্বচ্ছ পানি আলাদা করা হচ্ছে। সেই স্বচ্ছ পানি বালু নদে ফেলা হচ্ছে। এই পরিশোধনের মাধ্যমে প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টন ফ্লাই অ্যাশ বা ছাই, যা সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর কাছে কাঁচামাল হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারে বিশাল আয়তনের ১২টি গোলাকার ট্যাংক রয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন স্তরে পরিচ্ছন্ন করা হয় পয়োবর্জ্য। এরপর সেখান থেকে বের হওয়া অবশিষ্টাংশ (কাদাযুক্ত ময়লা বা স্লাজ) পুড়িয়ে শুকানোর ইউনিট বা বার্নিং সিস্টেমে ফ্লাই অ্যাশ তৈরি হচ্ছে। সূত্র : ঢাকা পোস্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।