বিনোদন ডেস্ক : তাঁর অভিনয় ক্যারিয়ার ১৬ বছরের। এই লম্বা সময়ে যতটা না আলোচনায় ছিলেন, তার চেয়ে বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছেন গত দুই বছরে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ এবং বলিউড সিনেমায়ও তাঁর পা পড়েছে। নিজের জীবন নিয়ে একটা সময় সংশয়ে ভুগছিলেন। সেখান থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে ফিরে আসেন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ দিয়ে। এই সিনেমার পর বলা যায় রাতারাতি তারকাখ্যাতি জুটে তাঁর ভাগ্যে। তিনি আজমেরী হক বাঁধন। একটার পর এক সাফল্য যেন তাঁকে ধরা দিচ্ছে। নতুন বছরের শুরুতেই জানা গেল, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর সম্মাননা পাচ্ছেন তিনি। সব মিলিয়ে যেন তাঁর বৃহস্পতি তুঙ্গে। প্রথমেই এ অভিনেত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল- এ সিরিজ সাফল্য কেমন উপভোগ করছেন? হাসিমুখে বাঁধন বলেন, ‘বহু অর্জন হয়েছে রেহানা মরিয়ম নূর দিয়ে। অনেক স্বীকৃতি পেয়েছি। এটি আনন্দের। প্রতিটি অর্জনের কৃতিত্বই আমার টিম ও নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদকে দিতে চাই। বলিউডে কাজ করতে পারা অনেক ভালো লাগার। চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কারের বিষয়টি নিয়ে যেহেতু এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি, তাই এটি নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’
হারিয়ে যেতে নেই মানা
অভিনয় ও সংসারজীবন নিয়ে সবসময়ই ব্যস্ততায় কাটে বাঁধনের। তাই দু’দণ্ড অবসর পেলেই দূরে কোথাও হারিয়ে যান তিনি। নতুন বছরের শুরুটা মেয়েকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় কাটিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের সফরটি বাঁধনের কাছে একদম অন্যরকম। ছিল ক্রিসমাস আর থার্টিফার্স্ট। যে জন্য চারদিকে ছিল উৎসবের আমেজ। সব মিলিয়ে দেশটিতে মেয়েকে নিয়ে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই অনেক আনন্দঘন ছিল। মায়ের কাছে তুষারপাত দেখার আবদার করেছিল সায়রা। সেই বায়না পূরণেই মেয়েকে তুষারপাত দেখাতে যুক্তরাষ্ট্রে উড়াল দেন বাঁধন। মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে ভীষণ খুশি এই অভিনেত্রী। যুক্তরাষ্ট্রে একসঙ্গে তুষারপাত দেখছেন মা ও মেয়ে। সেই সঙ্গে অনেক আনন্দও করেছেন। মেয়ের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো জীবনের অন্যরকম অনুভূতি বাঁধনের কাছে।
সাহিত্যের আড্ডায়
অভিনয়ে চেনাজানা আঙিনার বাইরে বাঁধন যোগ দিচ্ছেন নানা আয়োজনে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেই ঢাকা লিট ফেস্টে অংশ নেন তিনি। ৫ থেকে ৮ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাহিত্যের আন্তর্জাতিক এ উৎসবে তিনি দুটি সেশনে অংশ নেন। ‘ধরাবাঁধার বাইরে’ ও ‘পুরুষত্ব বনাম পুরুষতন্ত্র’- এগুলো নিয়ে এতদিন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কথা বলেছেন। লিট ফেস্টের মতো আসরে বলার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগার কথা জানান বাঁধন।
ওটিটির চমক
ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কাজ নিয়ে নিজেকে যেন আবারও নতুন করে প্রমাণ করেছেন বাঁধন। সম্প্রতি চরকিতে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত ওয়েব ছবি ‘গুটি’। শঙ্খ দাশগুপ্তের এই সিরিজে তাঁর অভিনীত মাদক পাচারকারী সুলতানার চরিত্রটি দর্শকের মনে দাগ কাটছে। হাসপাতালে কাজ করলেও সেখানকার কর্তাব্যক্তির নির্দেশে কয়েক বছর ধরেই মাদক পাচার করেন তিনি ভয়াবহ তরিকায়। চ্যালেঞ্জিং কাজটির অভিজ্ঞতা জানিয়ে বাঁধন বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ থাকে বলেই তো কাজটি করছি। এ ধরনের কাজই আমাকে আত্মতৃপ্তি দেয়। সুলতানা শরীরের গোপন স্থানে মাদক লুকিয়ে সেটি পাচার করে। কাজটি করতে গিয়ে বেশ শারীরিক কষ্ট করতে হয়েছে। এটি একটি মেয়ের মানবিক জার্নি। চিত্রনাট্য হাতে পাওয়ার পর আমার কাছে এটা মনে হয়েছিল, আমাকে যে কোনো মূল্যে সুলতানা হয়ে উঠতে হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায়- সত্যিকারের লোকেশনে শুটিং করেছি। এই সময়ে চরিত্রের মধ্যে থেকেছি। খুব ভোরে আমরা ঘুম থেকে উঠে শুটিং করতাম। সবকিছুর মধ্যে চরিত্রটি ছিল। শুটিংয়ের বাইরেও আমি সুলতানার মতো আচরণ করেছি। এমনও হয়েছে, আমাকে দর্শক দেখছেন পা খুঁড়িয়ে হাঁটতে। এ চরিত্রটির মধ্য দিয়ে একজন নারীর কঠিন সংগ্রাম আমি অনুভব করেছি।’ কেমন সাড়া পাচ্ছেন? কাজটি মানুষ দেখছেন। মিশ্র কিছু প্রতিক্রিয়াও পাচ্ছি। দর্শক বাংলাদেশের কনটেন্ট দেখছেন, সেটা নিয়ে আলোচনা-সামালোচনা করছেন। দেখার পরই তাঁরা এটি বলছেন। এটাই ভালো লাগা। অনেকের অনেক কিছু ভালো নাও লাগতে পারে। এটি জানালে পরবর্তী কাজের ব্যাপারে আমি সচেষ্ট থাকব।
বলিউডে অভিষেকের অপেক্ষায়…
বলিউডে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন বাঁধন। তাঁর অভিনীত ‘খুফিয়া’ সিনেমাটি আগামী মার্চে মুক্তির কথা রয়েছে। বলিউডের খ্যাতিমান নির্মাতা বিশাল ভরদ্বাজ এ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন। সিনেমায় শুধু বাঁধন নন, থাকছেন টাবু ও আলি ফজলের মতো বড় অভিনেতা। গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে সিনেমার ৪৭ সেকেন্ডের টিজারে কয়েক ঝলক প্রকাশ হয় নেটফ্লিক্সে, যা বাঁধনকে আবার নিয়ে আসে নতুন করে আলোচনায়। বাঁধন জানান, ছবিটির শুটিংয়ে পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ তাঁকে বলেছিলেন, ‘আজমেরী, তুমি তো স্ট্ক্রিনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছ। রহস্য-রোমাঞ্চ ভরা টিজারে যেন সেই আগুন লাগানো বাঁধনকে দেখা গেল। ভক্তরা তাঁকে পর্দায় দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। খুফিয়ায় কাজ করতে গিয়ে অনেক ভালো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। অনেক গল্প তৈরি হয়েছে, যা ধীরে ধীরে বলবেন এই অভিনেত্রী। পরিচালক ও নেটফ্লিক্সের কর্তাদের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘পরিচালক বিশাল ভরদ্বাজ অসম্ভব ভালো ও বিনয়ী একজন মানুষ। শুধু শিল্পী নন, মানুষকে কীভাবে সম্মান করতে হয়, সেটা তিনি খুব ভালো করে জানেন। এটাই তাঁর চর্চা। তাঁর কারণে কাজ করা অনেক সহজ হয়েছে। নেটফ্লিক্সের কর্তাদের পেশাদারিত্বে আমার ভালো লেগেছে। সিনেমায় আমাকে এক বাংলাদেশি মেয়ের চরিত্রে দেখা যাবে। মেয়েটি মিশন নিয়ে ইন্ডিয়ায় যায়। ঘটে নানা ঘটনা। চরিত্র ছোট হলেও গুরুত্ব অনেক।’
নতুন কাজে
আপাতত নতুন কোনো সিনেমা হাতে নেই বাঁধনের। ওয়েব সিরিজ ‘গুটি’ নিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটছে এই তারকা অভিনেত্রীর। আবারও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চান তিনি। অপেক্ষায় রয়েছেন ভালো গল্প ও চরিত্রের। সে রকম কোনো প্রজেক্ট পেলে সবাইকে জানাবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য- ‘এখন আমার সুযোগ আছে, আমি বলতে পারছি যে এ রকম কাজটি করতে চাই। একটা সময় এসব কথা বলেও লাভ হয়নি। যখন এ সুযোগ আছে, তাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।