ভারতের বৈদ্যুতিক স্পোর্টস ইউটিলিটি যান (এসইউভি) বাজারে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে মারুতি সুজুকি। দেশীয় বাজারে তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক মডেল মারুতি সুজুকি ই-ভিটারা (e-Vitara) আনতে জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে সংস্থা। রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর গাড়িটির আনুষ্ঠানিক উন্মোচন হবে। এটি মারুতি সুজুকির ইতিহাসে প্রথম বৈদ্যুতিক যাত্রীবাহী গাড়ি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এটি বাজারে বহুল প্রতীক্ষিত একটি মডেল হয়ে উঠেছে।
বাজারে কার সঙ্গে টক্কর দেবে?
মারুতি সুজুকি ই-ভিটারা বাজারে এলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলবে হুন্দাই ক্রেটা ইভি, মাহিন্দ্রা বিএই ৬, টাটা কার্ভ ইভি ও এমজি জেডএস ইভির মতো জনপ্রিয় মডেলগুলোকে।
ইতিমধ্যে এই গাড়িটি যুক্তরাজ্যে লঞ্চ হয়েছে। সেখানকার তথ্য অনুযায়ী, এটি একবার পূর্ণ চার্জে প্রায় ৪২৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে (ডব্লিউএলটিপি মানদণ্ডে)। এছাড়া ডিসি ফাস্ট চার্জার ব্যবহারে মাত্র ৪৫ মিনিটে ১০-৮০ শতাংশ চার্জ নেওয়া সম্ভব।
আধুনিক ও আকর্ষণীয় ডিজাইন
এই বৈদ্যুতিক এসইউভিতে থাকছে অত্যাধুনিক ডিজাইন ও স্টাইল। এর সামনে রয়েছে এলইডি প্রজেক্টর হেডলাইট, ওয়াই-আকৃতির ডে-টাইম রানিং লাইট এবং সামনের ফগ লাইট।
যেহেতু এটি বৈদ্যুতিক গাড়ি, তাই সাধারণ রেডিয়েটর গ্রিলের পরিবর্তে ক্লোজড ফ্রন্ট ডিজাইন রাখা হয়েছে। গাড়ির পাশে রয়েছে কালো প্লাস্টিক কভার ও ১৮ ইঞ্চির অ্যারোডাইনামিক অ্যালয় চাকা। পেছনে রয়েছে কালো বাম্পার, ত্রিস্তর বিশিষ্ট পেছনের বাতি এবং চকচকে কালো স্ট্রিপ যা দুটি বাতিকে যুক্ত করেছে।
আরামদায়ক ও প্রযুক্তিনির্ভর অভ্যন্তর
ই-ভিটারার কেবিনে রয়েছে দ্বি-আঙুলযুক্ত স্টিয়ারিং চাকা এবং ডুয়াল ডিসপ্লে যুক্ত ড্যাশবোর্ড। এতে ১০.১ ইঞ্চির টাচস্ক্রিন তথ্য-বিনোদন ব্যবস্থা ও ১০.২৫ ইঞ্চির ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার রয়েছে।
অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে আয়তাকার বাতাস প্রবাহের মুখ, স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলো কমানো রিয়ারভিউ আয়না, আধা-চামড়ার আসন, বৈদ্যুতিন হ্যান্ডব্রেক ও তারবিহীন মোবাইল চার্জার।
আরও থাকছে প্যানোরামিক সানরুফ, ১০-পদ্ধতিতে সমন্বয়যোগ্য চালকের আসন এবং ঠান্ডা করা সামনের আসন। নিরাপত্তায় গাড়িতে রয়েছে ৭টি এয়ারব্যাগ, ৩৬০ ডিগ্রির ক্যামেরা এবং উন্নত চালক সহায়ক প্রযুক্তি (ADAS)।
ব্যাটারি বিকল্প ও চার্জিং সময়
যুক্তরাজ্য সংস্করণ অনুযায়ী, ই-ভিটারায় দুটি ব্যাটারির বিকল্প পাওয়া যাবে—৪৯ কিলোওয়াট-ঘণ্টা ও ৬১ কিলোওয়াট-ঘণ্টা। ছোট ব্যাটারি সংস্করণে থাকবে সামনের চাকায় চালনার ব্যবস্থা, যা ১৪২ বিএইচপি শক্তি ও ১৯৩ এনএম ঘূর্ণনক্ষমতা উৎপন্ন করতে পারে এবং রেঞ্জ দেবে প্রায় ৩৪৪ কিমি। বড় ব্যাটারি সংস্করণে থাকবে সামনের ও সমস্ত চাকায় চালনার দুইটি বিকল্প।
সামনের চাকায় চালনার মডেলে পাওয়া যাবে ১৭১ বিএইচপি ও ৪২৬ কিমি রেঞ্জ, আর চারচাকা চালিত মডেলে থাকবে ১৮১ বিএইচপি, ৩০৭ এনএম ঘূর্ণনক্ষমতা ও ৩৯৫ কিমি রেঞ্জ।
চার্জিং সময়ের দিক থেকে, ৪৯ কিলোওয়াট-ঘণ্টা ব্যাটারিকে ৭ কিলোওয়াট এসি চার্জারে ১০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ নিতে লাগবে প্রায় ৬.৫ ঘণ্টা। ১১ কিলোওয়াট চার্জারে সময় লাগবে ৪.৫ ঘণ্টা।
৬১ কিলোওয়াট-ঘণ্টা ব্যাটারির ক্ষেত্রে সময় লাগবে যথাক্রমে ৯ ঘণ্টা ও ৫.৫ ঘণ্টা। দুই ব্যাটারিই ডিসি ফাস্ট চার্জারে মাত্র ৪৫ মিনিটে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ নিতে সক্ষম।
মারুতি সুজুকির প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি ই-ভিটারা শুধুমাত্র প্রযুক্তি ও পারফরম্যান্স নয়, ডিজাইন, আরাম এবং নিরাপত্তাতেও দারুণ চমক নিয়ে আসছে। ভারতের ইভি বাজারে এটি সংস্থার নতুন পথচলা শুরু করবে এবং ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে মারুতির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।