জুমবাংলা ডেস্ক : ‘ওয়ার্ল্ড সায়েন্স, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পিটিশন’-এর এবারের আসর বসেছিল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার প্যানকাসিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বের ৩১১টি দলের এই প্রতিযোগিতায় টেকনোলজি (প্রযুক্তি) ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক জিতেছে ‘কোড ব্ল্যাক’। নারীদের নিয়ে গঠিত দেশের প্রথম রোবটিকস দল এটি। দলনেতা জান্নাতুল ফেরদৌস ফাবিনের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন আয়শা জোহা পূর্ণতা
এবার ছিল প্রতিযোগিতার চতুর্থ আসর।
আয়োজক ইন্দোনেশিয়া ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইওয়াইএসএ) ও আইপিবি ইউনিভার্সিটি। প্রতিযোগিতায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, এনার্জি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তিসহ মোট সাতটি ক্যাটাগরিতে অংশ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ভারতসহ বিশ্বের ৩১১টি দল। ১২ মে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৮ মে। সেখানে টেকনোলজি ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছে বাংলাদেশে নারীদের প্রথম রোবটিকস দল ‘কোড ব্ল্যাক’।
তিন প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন তরুণীর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে দলটি। তাঁরা হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস ফাবিন ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের নুসরাত জাহান সিনহা। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তাহিয়া রহমান বিভোর এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের ছাত্রী নুসরাত জাহান নওরিন ও সনিয়া ইসলাম সারা।
‘টিম অ্যাটলাস’-এর দলনেতা সানি জুবায়েরের হাত ধরে ২০২১ সালের ৮ মার্চ যাত্রা শুরু করে কোড ব্ল্যাক।
দলের সদস্যদের প্রত্যেকের ঝুলিতেই আছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জেতা একাধিক পদক। তবে দল হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে উপস্থাপন এই প্রথম। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করেন তাঁদের বানানো রোবট ‘প্রহরী’ দিয়ে।
রোবটের নাম প্রহরী
প্রহরী একটি অ্যাডভান্সড রেসকিউ রোবট। যেকোনো দুর্যোগে এটি সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ অভিযান চালাতে সক্ষম।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটটি জরুরি পরিস্থিতিতে নিজে থেকে কিছু নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তও নিতে পারবে। এর রয়েছে ধ্বংসস্তূপে ভারসাম্য বজায় রেখে চলাচলের জন্য বিশেষ চাকা ও সৌরশক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা। রোবটের সঙ্গে সংযুক্ত ড্রোন দিয়ে বন্যাকবলিত স্থানে ত্রাণও পৌঁছানো সম্ভব।
ন্যানো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রকের কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে ডাটা সরবারহ করতে পারবে। এর বডি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে অগ্নিকাণ্ডের ভেতরেও এটির ভেতরের যন্ত্রাংশগুলো সুরক্ষিত থাকে।
সাধারণত অগ্নিকাণ্ডে আটকে পড়াদের পুড়ে মরার চেয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে মরার আশঙ্কা বেশি। তাই জীবিত ব্যক্তিকে ধোঁয়া থেকে বাঁচাতে রোবটটি ফার্স্ট এইড বক্স সরবরাহ করতে পারবে। এ ছাড়া এটি পারিপার্শ্বিক নানা তথ্য ক্লাউডে জমা রাখবে, লক্ষণ দেখলে তৎক্ষণাৎ নিয়ন্ত্রককে দুর্যোগের বার্তা পাঠাবে। নানা রকমের সেন্সর ও ডাটা বক্সের তথ্যের সমন্বয়ে রোবটটি জীবিত ও মৃত ব্যক্তিকে পৃথক করে আগে জীবিত ব্যক্তিকে রক্ষা করতে সক্ষম।
সমস্যার শেষ নেই
বাংলাদেশে ব্যাপক হারে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। সমাজ এখনো নারীদের এই ক্ষেত্রগুলোর জন্য উপযুক্ত মনে করে না। তাই কোড ব্ল্যাকের সদস্যদেরও নানা কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। এ দেশে একাডেমিক শিক্ষার তুলনায় সহশিক্ষা কার্যক্রমকে খাটো করে দেখার প্রবণতা আছে। শুরুতে অভিভাবকরাও ফাবিনদের কার্যক্রম ঠিক বুঝতে পারছিলেন না। তাই তাঁরা প্রথমে অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন। নিজেদের ল্যাব দেখিয়েছেন। স্বচক্ষে সব দেখার পর অভিভাবকদের মত বদলেছে। অভিভাবকদের সমর্থন পেলেও স্পন্সর পায়নি কোড ব্ল্যাক। প্রত্যেক সদস্যের অংশগ্রহণ বাবদ ৬৫০ মার্কিন ডলার বা ৭৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে আয়োজকদের। এ ছাড়া বিমানের টিকিট ও রেজিস্ট্রেশন ফি তো আছেই। শেষমেশ নিজেরাই নিজের ব্যয় বহন করেছে।
বহুদূর যেতে চান
এত প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে স্বর্ণপদক জেতায় দারুণ খুশি কোড ব্ল্যাকের সদস্যরা। ‘বিদেশের মাটিতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমরা যারপরনাই আনন্দিত। তবে আমরা শুধু একটি প্রজেক্ট বানিয়ে ক্ষান্ত হতে চাই না। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রজেক্টটি নিয়ে বৃহৎ পরিসরে কাজের সুযোগ আছে। দেশে ঘটে যাওয়া নানা দুর্যোগে এ ধরনের রেসকিউ রোবট বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।’ বলছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস ফাবিন। তিনি আরো যোগ করেন, ‘কোড ব্ল্যাকের যাত্রা সবে শুরু। আমরা বছরজুড়ে দেশের নানা প্রান্তের উদ্যমী মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে চাই। প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আরো আগ্রহী করে তুলতে চাই। তাদের নিয়ে যেতে চাই বহুদূর।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।