জিয়াউল হক : ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদ নির্মাণ চলছে। সেন্টারিংয়ে লোহার পাইপ ও স্টিলের পাত ব্যবহার করার কথা; কিন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ ও কাঠ। পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জেলা কার্যালয়ের ভবনের দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজে এমন চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। চেখের সামনে এ অনিয়ম চললেও কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা না দেখার ভান করছেন।
পিরোজপুরে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর জেলা কার্যালয়ের দুই তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে। বর্তমানে ভবন ও ছাদ নির্মাণে কাজ করছে মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে নির্মাণস্থলে গিয়ে তো চোখ ছানাবড়া। দ্বিতীয় তলার ছাদের সেন্টারিংয়ে লোহার পাইপ ও স্টিলের পাতের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ ও কাঠ।
২০২৩ সালের ০১ মে শুরু হওয়া কাজটি শেষ হবার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে। কাজটির চুক্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৬ টাকা। তবে চলমান এ কাজে এরই মধ্যে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র সামনে চলে এসেছে। কার্যাদেশে পাথর দিয়ে ঢালাই করা ছাদের সেন্টারিংয়ে লোহার পাইপ ও স্টিল পাতের ব্যবহার করার কথা উল্লেখ আছে; কিন্তু লোহার পাইপের বদলে বাঁশ আর স্টিলের পাতের বদলে কাঠের ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি ছাদ ঢালাইয়ের কাজে যে রড ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়েও আছে অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাউবোর একজন ঠিকাদার জানান, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এমন কার্যক্রম তাদের মাথার ওপরেই চলছে। সবাই বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন। লোহার পাইপের স্থানে জোড়াতালি দেয়া বাঁশ ব্যবহারের কারণে যে কোন সময় পাথর দিয়ে ঢালাই ছাদ ভেঙে পড়তে পারে। তাই এ কার্যালয়ে বর্তমানে কোন কাজের জন্য আসা সকলের জন্য অনিরাপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু অসাধু ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের কারণেই এ অনিয়ম হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপরস্থ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদার্সের কাউকে কথা বলার জন্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে অন্য কেউ কাজটি করছে।
অভিযোগের বিষয়ে পিরোজপুর পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু জাফর মো. আলমগীর জানান, কাজে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। তবে এতে কোন সমস্যা হবে না। তারা বিষয়টি দেখছেন।
এ বিষয়ে পিরোজপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন কোন কথা বলতে রাজি হননি।
শুধু পিরোজপুরে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নির্মাণ কাজে এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। রডের বদলে বাঁশ দিয়ে স্কুলের ভবন নির্মাণের মতো ঘৃণ্য কাজেও লিপ্ত থাকে কিছু অসাধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবন নির্মাণে অনিয়মের কারণে প্রায় দুর্ঘটনার খবরও পাওয়া যায়।
লোহার বদলে বাঁশ ব্যবহার করায় ২০২২ সালে রংপুর সড়ক বিভাগের নির্মাণাধীন একটি দোতলা ভবনের ছাদ ধসে পড়ে। এতে পাঁচ থেকে ছয় জন শ্রমিক আহত হয়।
ভবন নির্মাণে বাঁশের ব্যবহারসহ নির্মাণকাজে অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে অনেক আগে থেকেই দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের অভিমত, যে প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলেই এর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
তারা এ ব্যাপারে অভিযোগের অপেক্ষা না করে দুদককে একটি বিশেষ বিভাগ তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন, যে বিভাগ সরকারি বিভিন্ন নির্মাণকাজ নজরদারিতে রাখবে। সূত্র : সময় সংবাদ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।