জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার মিরপুর রোডের একটি বেসরকারি এনজিও অফিসের নিরাপত্তাকর্মী জুয়েল মিয়াকে (২০) ঘুমন্ত অবস্থায় নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন অপর নিরাপত্তাকর্মী আখতার হোসেন। এ ঘটনায় আখতারকে গ্রেপ্তার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
পুলিশ বলছে, ভাসমান যৌ.নকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে আখতারের। এমন একজনকে তিনি বান্ধবী বলে পরিচয় দেন। তার সঙ্গে আখতারকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় জুয়েল মিয়াকে তিনি নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানতে পারে মিরপুর রোডের বেসরকারি এনজিও ‘সিদীপ’ কার্যালয়ের পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভেতর থেকে নিরাপত্তাকর্মী জুয়েলের হাত-পা বাঁধা লাশ রয়েছে। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।’
ডিসি আজিমুল হক বলেন, ‘এই ঘটনার তদন্তে নেমে ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ। ভিডিওতে দেখা যায়, ২৩ জানুয়ারি ভোর ৫টা ৬ মিনিটের দিকে নিরাপত্তাকর্মী আখতার হোসেন একটি স্টিলের পাইপ হাতে ভবনের দক্ষিণ পাশে চেয়ারের ওপরে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে থাকা জুয়েল মিয়ার দিকে এগিয়ে যান। লাঠি দিয়ে জুয়েলকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। এতে জুয়েল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মাটিতে পরার পরেও আখতার তাকে নৃশংসভাবে পেটাতে থাকেন। এরপর জুয়েলের হাত ধরে টেনেহিচড়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের দিকে নিতে থাকেন। সে সময়ও তিনি স্টিলের পাইপ দিয়ে জুয়েলকে তিন দফায় পেটান। লাঠির আঘাতে জুয়েলের মাথা, চোখ, মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতে ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে জুয়েলের মৃত্যু হয়। এরপর তার হাত বেঁধে কম্বল মুড়িয়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভিতর ঢুকিয়ে রুমটি বন্ধ করে পালিয়ে যান আখতার।’
ডিসি তেজগাঁও আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় নিহতের পরিবার মামলা দায়ের করে। মামলা তদন্তে নেমে আখতারকে প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার এলাকার একটি কারখানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি জানান, আখতার হোসেন দেড় বছর ধরে ‘সিদীপ’ নামের এনজিও কার্যালয়ে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছেন। জুয়েল মিয়া চলতি মাসের এক তারিখ একই প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে যোগ দেন। জুয়েল ডিউটি চলাকালে প্রায়ই অফিসের বাইরে যেতে চাইলে আখতার বাধা দিতেন। এতে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আখতার আগে থেকে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার সু-সম্পর্ক ছিল। তিনি এর সুযোগ নিয়ে অন্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতেন। জুয়েল এটি মেনে নিতে পারেননি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আখতার তার বান্ধবী পরিচয়ে এক যৌ.নকর্মীকে রাতে অফিসে নিয়ে আসেন এবং জুয়েল তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন।
বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেবেন বলে আখতারকে ভয়ভীতি দেখান জুয়েল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধ জন্মায়। ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে আখতারের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন জুয়েল। উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। রাত ১টার দিকে আখতার এনজিও অফিসের পিওন সতেজ চাকমা ও আল আমিনকে বিষয়টি জানালে তারা নিচে আসেন। এসময় জুয়েল মোবাইলটি আল আমিনের কাছে জমা দেন। এই ঘটনার ক্ষোভের জেরে ঘুমন্ত জুয়েলকে লোহার পাইপ দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করেন। হত্যার সময় ভবনের অপর দুই নিরাপত্তাকর্মী অন্য রুমে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।