জুমবাংলা ডেস্ক : ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার দত্তেরবাজার ইউনিয়নে এক বাড়ি নিয়ে একটি গ্রাম; যার নাম শরীফগঞ্জ। এটি স্বল্পপুনিয়া মৌজাই অবস্থিত। গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক ও স্ত্রী মাহফুজা বেগম মেরী।
প্রায় ১৩০ বছর পূর্বে খান সাহেব আলী উনার বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে গ্রামের নামকরণ করেন। শরীফগঞ্জ গ্রাম হলো জনবসতির একটি একক। এটি প্রধানত কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে মনুষ্য সম্প্রদায়ের ছোট বসতি। যেখানে বসবাসরত সম্প্রদায়রা কৃষিভিত্তিক ও বিভিন্ন ছোটখাটো কাজের মাধ্যমে খুব সাধারণভাবে জীবনযাপন করে থাকেন।
একটি গ্রামে কৃষিজীবী ছাড়াও কামার, কুমার, মাঝি, মেথর, জেলে প্রভৃতি পেশার লোকের বসবাস থাকে। গ্রাম সাধারণত বড় শহর থেকে দূরে অবস্থিত হয়। গফরগাঁওয়ে উপজেলায় এমন একটি গ্রাম আছে, যার নাম শরীফগঞ্জ। যেখানে রয়েছে একটি বাড়ি, সেই বাড়িতে বসবাস করেন স্বামী-স্ত্রী।
বাড়িতে বসবাসকারীরা মূলত মোঘল সেনাপতি রাজা মানসিংহের বংশধর। মানসিংয়ের বংশধর যোজার সিং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এখানে বাড়ি নির্মাণ করে এখানে বসবাস করতে থাকেন। স্কুলশিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক যোজার সিংয়ের চতুর্থ বংশধর।
রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক আমীর আলীর (ডাবল এমএ) ছেলে। বর্তমানে স্কুলশিক্ষক রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক এই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক দীর্ঘদিন টাংগাব হাজী ইসমাঈল দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে অবসর নিয়ে কান্দিপাড়া আলিমুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পার্ট টাইম শিক্ষকতা করছেন।
৬ একর জায়গা নিয়ে শরীফগঞ্জ গ্রাম গড়ে উঠে। গাছ লতাপাতায় ঘেরা সবুজের একটি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ এখানে। গ্রামের পূর্বদিকে আছে স্বল্পপুনিয়া গ্রাম, উত্তর দিকে আছে নয়াবাড়ী গ্রাম, দক্ষিণ দিকে আছে ময়ড়া গ্রাম, পশ্চিমে আছে সতরবাড়ী গ্রাম।
শরীফগঞ্জে রয়েছে ছয়টি পুকুর। রয়েছে শতবর্ষী ২৫ থেকে ৩০ রকমের আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, আপেল, কমলা, স্ট্রবেরি, আঙুরসহ ফলজ ও ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। বাড়িতে রয়েছে আমীর আলী নামে ইসলামিক পাঠাগার।
পাশের গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, শরীফগঞ্জ গ্রাম একটি বাড়ি নিয়ে। বাড়িটিতে বর্তমানে শিক্ষক দম্পতির বসবাস।
পাশের গ্রামের কলেজছাত্র মোহাম্মদ আরমান বলেন, শরীফগঞ্জ গ্রামের পরিবেশ খুব সুন্দর। এই গ্রামে দুইজন মানুষ বসবাস করেন। তাদের দুই সন্তান ঢাকায় থাকেন। তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত।
বর্তমানে বাড়িতে বসবাসকারী রানা মোহাম্মদ মাসুদ মল্লিক বলেন, খান সাহেব আলী ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রথম মুসলিম ভাইস চেয়ারম্যান খান সাহেব আলী। উনার বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে শরীফগঞ্জ নামকরণ করেন। উনি আমার দাদা হন। ১৯২২ রাজা পঞ্চাদশ উনাকে রৌপ্যপদক প্রদান করে খান সাহেব উপাধি প্রধান করেন। সৌদি আরবের প্রথম কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার আবদুল্লাহ আমার ভাতিজা হন। ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আমার ভাগিনা হয়। মাহমুদউল্লাহ বিয়াদ খান সাহেব আলীর তৃতীয় মেয়ের নাতি। আমাদের বংশে বর্তমানে ৮ জন মাস্টার্স ও ৫ জন ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্স মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেছি। আমার বড় ছেলে ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্সে গোল্ড মেডেল পেয়েছে। দ্বিতীয় ছেলে ডুয়েট থেকে আর্কিটেক্টে পড়াশোনা করছেন।
গফরগাঁও আদর্শ বিদ্যানিকেতনের প্রিন্সিপাল এইচ কবীর টিটু বলেন, শত বছর পূর্বে উপজেলার টাংগাব ইউনিয়নে ঈশা-খাঁ ও মানসিংহের মধ্যে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধে ঈশা-খাঁ জয়লাভ করেন। মানসিংহের কিছু লোকজন এখানে থেকে যায়। তাদেরই বংশধর একটি বাড়ির গ্রাম শরীফগঞ্জে বসবাস করেন। এই বাড়ির সবাই উচ্চশিক্ষিত।
জনপ্রতিনিধিরা পলাতক থাকায় কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।