জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানো হবে, সেই আমদানির সময়সীমা একেবারেই অপ্রতুল বলে মনে করছেন ভারতের ইলিশ আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, ইলিশ ধরার ওপরে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বাংলাদেশ ভারতে আমদানির সময়সীমার মধ্যেই সেটা শুরু হয়ে যাবে। তাই তারা প্রকৃতপক্ষে মাত্র ২২ দিন সময় পাবেন এই বিপুল পরিমাণ ইলিশ আনতে। খবর বিবিসি বাংলা’র।
ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে যাতে বাকি পরিমাণ ইলিশ আনা যায়, সেই অনুরোধ করে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসকে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশী ইলিশের প্রথম চালানটি কলকাতায় পৌঁছেছে এবং শুক্রবার থেকেই তা কলকাতার বাজারে বিক্রি হতে শুরু করেছে।
দুর্গাপুজো উপলক্ষে এ বছর তিন হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রফতানি করার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ বছর দুর্গাপুজো ২১ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর। সেই সময়ে বাংলাদেশে ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে, ভারতে আমদানি হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তাই পুজোর মধ্যে বাংলাদেশের ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পাতে পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
সময় বৃদ্ধির আবেদন
মাছ আমদানিকারক এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা দুর্গাপুজোর সময় বাংলাদেশের ইলিশ পাবেন ভেবে খুবই আহ্লাদিত হয়েছিলেন। কিন্তু যেদিন ভারতে রফতানির নির্দেশনামা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। সেই একই দিনে তারা ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
কলকাতার ফিশ ইম্পোটার্স এসোসিয়েশন বলছে, এমনিতেই প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত ৩০ অক্টোবরের মধ্যে আমদানি করা কঠিন ছিল। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে ১২ নভেম্বর থেকে। তার মানে আমরা আমদানি করার সময় পাব ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। এই কয়েকদিনে এত ইলিশ কীভাবে আনা যাবে?’ এ প্রশ্ন এসোসিয়েশনের সচিব সৈয়দ আনোয়ার মকসুদের।
তার কথায়, ‘প্রাথমিকভাবে প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আনার অনুমোদনের সময়সীমা ছিল ৪০ দিনের। এখন তো সেটা দাঁড়াচ্ছে মাত্র ২২ দিনে। এদেশের আমদানিকারক আর বাংলাদেশের রফতানিকারক উভয় পক্ষেই তো এত মাছ আনা বা পাঠানো অসম্ভব।
মকসুদ বলেন,‘তাই আমরা আবেদন করেছি যে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আসুক। আর তিন হাজার ৯৫০ টনের মধ্যে যতটা বাকি থাকবে সেটা যেন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে ৩ নভেম্বর থেকে আবারো চালু করা যায়।’
এই আবেদন জানিয়ে তারা কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসকে একটি চিঠিও দিয়েছেন। উপ-দূতাবাসের প্রেস সেক্রেটারি রঞ্জন সেন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, যে চিঠিটা তারা পেয়েছেন এবং সেটি ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তারা পাঠিয়ে দেবেন।
কলকাতার বাজারে বাংলাদেশের ইলিশ
বৃহস্পতিবার রাতে বেনাপোল, পেট্রাপোল পেরিয়ে বাংলাদেশী ইলিশের প্রথম চালানটি এসেছে হাওড়ায়। সেখানেই পূর্ব ভারতে সবথেকে বড় মাছের পাইকারি বাজার। পাইকারি হারে শুক্রবার এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা দরে। আর একটু কম ওজনের মাছের পাইকারি দর ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে।
ওই মাছই উত্তর কলকাতার শোভাবাজারে বিক্রি হয়েছে এক কেজি ওজনেরগুলো এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় আর এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ২৫০ গ্রামের মাছের দাম ছিল দুই হাজার টাকা।
আশা করা যাচ্ছে শনিবার আর রোববার কলকাতার সব বাজারে ঢেলে ইলিশ পাওয়া যাবে। তবে তার দাম কীরকম হতে পারে, সে সম্বন্ধে এখনই কোনো ধারণা দিতে পারছেন না মাছ ব্যবসায়ীরা।
ইলিশ-হীন দুর্গাপুজো
দুর্গাপুজোর সময়ে ইলিশ মাছ খাওয়ার একটা চল রয়েছে বাঙালিদের মধ্যে। আর পদ্মার ইলিশ নিয়ে সব বাঙালির মতো পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদেরও সেন্টিমেন্ট আছে। বাঙালি হোটেল রেস্তরাঁয় তো বটেই, অনেক পশ্চিমা কায়দার হোটেলেও দুর্গাপুজোর স্পেশাল মেনুতে ইলিশের পদ থাকে। আবার পূর্ববঙ্গীয়দের বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর দিনে জোড়া ইলিশ খাওয়ার চল রয়েছে।
সে দিনই ইলিশ খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় প্রজননের সময় শুরু হয় বলে। আবার জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারিতে সরস্বতী পুজোর দিনে ইলিশ খাওয়া শুরু হয়। তবে এমন বহু পরিবারই রয়েছে যারা এই আচার না মেনে যে কোনো সময়েই ভাল ইলিশ পাওয়া গেলে খেয়ে থাকেন।
তবে এবছর সম্ভবত দুর্গাপুজোর সময়ে পাতে ইলিশ থাকবে না। খাদ্য-ইতিহাসের গবেষক ও লেখক নীলাঞ্জন হাজরা বলছেন, ‘এই সময়ে যে ইলিশ ধরার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তার একটা বৈজ্ঞানিক কারণ আছে, সেটা বুঝতে হবে। এটা হল ইলিশের ডিম পাড়ার সময়। তখন ইলিশ তো ধরা একেবারেই উচিত নয়।
হাজরা বলেছেন,‘যদি ইলিশের প্রজননের সময়তেই দুর্গাপুজো পড়ে যায়, কী আর করা যাবে, দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু তো বলার নেই। এ বছর না হয় দুর্গাপুজোয় বাঙালি ইলিশ বাদই দিল। ভবিষ্যতে যাতে আরো ভালো স্বাদের ইলিশ পাওয়া যায়, তার জন্যই এই স্যাক্রিফাইসটা করতে হবে বাঙালিকে।’
তার কথায়, ‘আমরা বরং ইলিশ না পাওয়ার এই ব্যাপারটাকে একটা জনমত তৈরির কাজে লাগাতে পারি। বেআইনিভাবে বহু খোকা ইলিশ ধরা আর বিক্রি করা হয়, যেটা ইলিশের স্বাদ আরো ভালো হওয়ার জন্য একেবারেই করা উচিত নয়।
হাজরা আরো বলেন, ‘আবার প্রজনন-কালীন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অনেকে চোরাগোপ্তা ইলিশ ধরেন, আর কেনেন। এগুলো যাতে না হয়, তার জন্য একটা জনমত গঠন করা হোক না এ বছর পুজোতে ইলিশ বাদ রেখে।’
এ বছর ইলিশের আকাল
পশ্চিমবঙ্গে মূলত ইলিশ আসে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ডায়মণ্ড হারবার এলাকার মাছের আড়ত থেকে। সুন্দরবন অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর সেই ইলিশ এ বছর ১৪ জুলাইতে হাজার টন উঠেছিল। তার পর থেকে আর ইলিশ আসেনি বাজারে।
খাদ্য-লেখক ও সাংবাদিক সুরবেক বিশ্বাস বলছিলেন, ‘ওই একটা ঝাঁকের পরে ডায়মণ্ড হারবার থেকে আর ইলিশ আসেনি একদম। এর মধ্যে একটা ইলিশ এসেছিল উড়িষ্যার কাসফল নদের, সেটা খুবই ভালো স্বাদ হয়েছিল। আর দীঘাতে যে ইলিশ পাওয়া যায় সেটা সমুদ্রের মাছ, একেবারই স্বাদ নেই, তবুও ওই জুলাইতেই একবার ৫০ টন মাছ এসেছিল।’
এই চেয়ারে বসার জন্য কেউ বেশিদিন বাঁচেনি, জানুন অভিশপ্ত চেয়ারের কাহিনী
তার কথায়, ‘তারপর থেকে বাজার থেকে ইলিশ উবে গেছে। তাই বাঙালি রেস্তরাঁগুলোতে ইলিশের দামও বেড়ে গেছে অনেকটা। আগে কলকাতার ভালো হোটেল-রেস্তরাঁয় যেখানে একপিস ইলিশের কোনো পদের দাম মোটামুটি তিন থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা ছিল, এখন ৫০০ কমে কোনো ইলিশের পদ নেই। বিশ্বাস বলছিলেন, ‘এই ঘাটতিটাই পূরণ করতে পারত বাংলাদেশের ইলিশ। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের যে এবারে ইলিশ খাওয়াই হবে না সেভাবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।