জুমবাংলা ডেস্ক : ছাত্র-জনতার কয়েক সপ্তাহের গণ-আন্দোলন এবং এক দফা দাবির মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে ভারতের দিল্লিতে বোন শেখ রেহানার সাথে ‘সেফ হাউসে’ রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। খবর রয়টার্সের।
কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভেই কেন পতন হল ১৫ বছর ধরে ক্ষমতা ধরে থাকা শেখ হাসিনার, এটা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স, ‘বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনীর অস্বীকৃতি হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়’ শীর্ষক শিরোনামে শেখ হাসিনার পতনের পেছনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা তুলে ধরেছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের আগের দিন রাতে জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান। সিদ্ধান্ত নেন কারফিউ বলবৎ রাখতে সেনারা বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালাবেন না।
বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে জানেন—এমন দুজন সেনা কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশত্যাগের দিন, সোমবার সকালে শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে যান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানান, দেশজুড়ে ডাকা কারফিউ বাস্তবায়নে অপারগ তাঁর সেনারা। বিষয়টি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে, এমন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওই ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, বার্তাটি পরিষ্কার ছিল, শেখ হাসিনার প্রতি আর সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল না।
এসব বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়ে রয়টার্স বলছে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে তিনি ভিন্নমত খুব কমই সহ্য করেছেন। গত সোমবার আকস্মিকভাবে শেষ হয়ে যায় তার শাসনকাল।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী রবিবার সন্ধ্যায় আলোচনার বিষয়টি রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন। তবে বৈঠকটিকে তিনি কোনো ঝামেলার পর তথ্য নিতে সেনাবাহিনীর নিয়মিত বৈঠক হিসেবে বর্ণনা করেন। তবে বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
রয়টার্স জানিয়েছে এ বিষয়ে শেখ হাসিনার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে মন্তব্যের জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স শেখ হাসিনার শাসনের শেষ ৪৮ ঘণ্টার পরিস্থিতি বোঝার জন্য গত সপ্তাহের ঘটনাবলি সম্পর্কে অবগত চারজন সেনা কর্মকর্তা এবং এসব ঘটনা কাছ থেকে দেখেছেন এমন দুটি সূত্রসহ ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে তাঁদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।
গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। হাজারো বিরোধী নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর গত জানুয়ারিতে চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। যদিও এই নির্বাচন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা বর্জন করেছিল।
তবে উচ্চ বেকারত্বের মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের জন্য আদালতের রুলের জেরেই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। তবে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হলেও শেখ হাসিনার দমন নীতি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে রূপ নেয়।
শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দেননি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। কিন্তু সাবেক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন, বিক্ষোভের মাত্রা এবং কমপক্ষে ২৪১ জন নিহত হওয়ার কারণে যেকোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করা যায় না।
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সেনাদের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল। সেটিই সম্ভবত সেনাবাহিনীর প্রধানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। কারণ, সেনারা বাইরে ছিলেন। কী ঘটছে, তা তাঁরা দেখেছেন।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী বলেন, সেনাপ্রধান ঘোষণা দেন, জীবন রক্ষা করতে হবে। তিনি কর্মকর্তাদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান। এটাই ছিল প্রথম ইঙ্গিত যে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জোরপূর্বক সহিংস বিক্ষোভ দমন করবে না। এই সিদ্ধান্তই শেখ হাসিনাকে অরক্ষিত করে ফেলে এবং তার পতন ডেকে আনে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা গত সোমবার কারফিউ অমান্য করে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খানও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের বাধা দেয়নি। তিনি যা অঙ্গীকার করেছিলেন, সেনাবাহিনী তা করেছে।’
‘স্বল্প সময়ের নোটিশ’
অনির্দিষ্টকালের কারফিউর মধ্যে গত সোমবার গণভবনের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। তবে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য লাখও আন্দোলনকারী কারফিউ ভেঙ্গে তার বাসভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন।
ভারতীয় কর্মকর্তা ও বিষয়টির সম্পর্কে অবগত দুই বাংলাদেশির তথ্য অনুযায়ী, পরিস্থিতি হাসিনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৭৬ বছর বয়সী এই নেত্রী সোমবার সকালে দেশ ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, কারফিউ উপেক্ষা করে সোমবার ঢাকায় জনতা জড়ো হওয়ায় হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। খুব সংক্ষিপ্ত নোটিশে তিনি ভারতে আসার জন্য অনুমোদন চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
ভারতের আরেক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশের পরবর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, এমন শংকায় খুবই অল্প সময়ের জন্য ভারত তাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়েছে।
যদিও এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চান বিক্ষোভকারী ছাত্ররা। তিনি নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে বলেছেন, ভারতের ‘ভুল লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল…দয়া করে আপনার পররাষ্ট্রনীতি পুনর্বিবেচনা করুন।’
বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনাকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের মধ্যে এখনো অসন্তোষ রয়ে গেছে বলছে রয়টার্স। অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শাহেদুল আনাম খান বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, তাঁকে নিরাপদে চলে যেতে দেওয়া উচিত ছিল না। এটা একটা বোকামি ছিল।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।