জুমবাংলা ডেস্ক : দেবব্রত চক্রবর্তী প্রবাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স বিষয়ে বিবিএ ও এমবিএ করেছেন। পড়াশোনা শেষে বারবার চাকরির পরীক্ষায় ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি। কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতি শুরু করেন। সবশেষে দেখা পান সাফল্যের, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সহকারী পরিচালক’ (২০২২ ব্যাচ) পদে চাকরি পান তিনি। তাঁর চাকরি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে আজকের আয়োজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে বাংলাদেশের চাকরির বাজার নিয়ে জানা শুরু করি। তখন থেকেই মনের মাঝে সাধ জাগে ক্যাডার সার্ভিসে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকে জব করার। তবে বড় ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংকে দেখবেন। যদিও ক্যাডার সার্ভিসের একটা বিশেষ ক্যাডারের প্রতি চরম মাত্রায় দুর্বলতা অনুভব করতাম। বিসিএসে ব্যর্থ হওয়ার পর রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলাম।
তখন বড় ভাই সুব্রত চক্রবর্তী আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি, এ কথা মনে করিয়ে দেন। তারপর ভাইয়ের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারি। এ ছাড়া ব্যাংকে চাকরি করলে দেশের জন্য প্রত্যক্ষ অবদান রাখার সুযোগ আছে। অনার্স শেষ করে বারবার চাকরির পরীক্ষা দিয়েও ব্যর্থ হই। তখন বটবৃক্ষের ছায়ার মতো পরিবার এবং কাছের কিছু মানুষকে পেয়েছি। সেই মানুষদের আমার এই সাফল্য উৎসর্গ করছি।
বারবার ব্যর্থ হয়েও হাল ছাড়িনি
আমার মনে হয়, সফল হতে হলে ব্যর্থতার কারণ বা ব্যর্থ হওয়ার গল্প জানা জরুরি। আমি ঠিক পথে এগোচ্ছি, কিন্তু সাফল্য আসছিল না।হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এর মাঝে শুরু হলো করোনা মহামারি। একদিকে বারবার ব্যর্থ হওয়া, অন্যদিকে করোনার মাঝে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে সব থমকে যাওয়া—এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তবে সব প্রতিকূলতার মাঝে সৃষ্টিকর্তা ভালো কিছুও দিয়ে দেন। করোনা মহামারির সময়টা আমার জন্য শাপে বর হয়ে আসে। ওই সময়টায় পরীক্ষা না থাকায় বেশির ভাগ সময় ঘরেই ছিলাম। তখন আমার ব্যর্থতার সম্ভাব্য কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। এরপর সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করি।
ক্রিকেট মাঠে খেলোয়াড় বারবার ব্যর্থ হলে তাকে কিছুদিন বিশ্রাম দিতে হয়। একইভাবে চাকরির যুদ্ধের ময়দানে বারবার ব্যর্থ হলে, তারও কিছু সময়ের জন্য ভুল খুঁজে বের করতে থামা প্রয়োজন। বারবার ব্যর্থ হয়েও হাল ছাড়িনি। প্রস্তুতিতে কয়েকটা বই একসঙ্গে না পড়ে এক বিষয়ের জন্য একটা ভালো প্রকাশনীর বই পড়া উত্তম। এরপর বইটা অন্তত দুই থেকে তিনবার পড়ে শেষ করা এবং বারবার অনুশীলন করতে হবে।
প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি যেভাবে
প্রিলিমিনারিতে ভালো করতে হলে সবচেয়ে জরুরি প্রচুর পরিমাণে বিগত প্রশ্ন অনুশীলন করা। পাশাপাশি বাংলার জন্য নবম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বই (নতুন এডিশন) এবং বাংলা সাহিত্য বই (নবম-দশম শ্রেণি) থেকে কবি-সাহিত্যিকদের পরিচিতি ও যেকোনো প্রকাশনীর একটা গাইড বই পড়া। ইংরেজির জন্য নবম-দশম এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই ধরে শব্দার্থ পড়ে নেওয়া উপকারে আসে। এ ছাড়া বিগত সালে আসা শব্দগুলো সমার্থক, বিপরীত শব্দসহ জানা প্রয়োজন। সাধারণ জ্ঞানের জন্য বিগত সালের প্রশ্ন পড়া।
এর সঙ্গে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়ে আপডেট থাকা জরুরি। গণিতের জন্য সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির এবং নবম-দশম শ্রেণির বই থেকে পরিমিতি ও ত্রিকোণমিতির ম্যাথ এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বই থেকে বিন্যাস, সমাবেশ ও সম্ভাব্যতার অধ্যায়গুলো অনুশীলন করা।
পাশাপাশি যেকোনো প্রকাশনীর লিখিত গাইড বই থেকে বেশি বেশি অনুশীলন করা প্রয়োজন। ব্যাংকের প্রস্তুতিতে গণিতের ক্ষেত্রে শিখতে হবে লিখিত গণিত বই থেকে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির জন্য যেকোনো প্রকাশনীর বই ভালো করে পড়া এবং কয়েকবার শেষ করা। পাশাপাশি কিছু ওয়েবসাইট থেকে অনুশীলন করলে ভালো করা যায়।
লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে
চাকরি পাওয়া নির্ভর করে লিখিত পরীক্ষা কতটা ভালো হলো, তার ওপর। লিখিত পরীক্ষায় গণিতের ওপর অতি নির্ভরতা কারও জন্য বুমেরাং হতে পারে, যদি লিখিত বাকি অংশের ওপর গুরুত্ব না দেওয়া হয়। ফোকাস রাইটিং লেখার ক্ষেত্রে বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি বা পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপাত্ত ব্যবহার করলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। অনুবাদের ক্ষেত্রে খাতায় লেখার আগে নিজেকে শুনিয়ে অনুবাদ করে দেখা যায়, এটি শ্রুতিমধুর লাগছে কি না। পরীক্ষায় সব ম্যাথ না পারলেও অন্যান্য অংশে ভালো করতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকের চিঠিপত্রের ফরম্যাট ভালো করে দেখে যেতে হবে। কম্প্রিহেনশন থেকে প্রশ্নোত্তর করার সময় হুবহু লাইন তুলে না দেওয়া, সামারিটা যেন সত্যিই সামারির আকারের হয়—এগুলো মনে রাখা জরুরি।
ভাইভায় চাপমুক্ত থাকা চাই
মৌখিক পরীক্ষা অনেকটা বিচক্ষণতা এবং ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সব প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব হয় না। কোনো প্রশ্নের উত্তর না জানলে বা মনে না এলে হেসে বিনয়ের সঙ্গে বলা যায়, ‘স্যার, এটা আমার জানা নেই। কিন্তু অবশ্যই আমি এটা জেনে নেব।’ ভাইভায় আমাকে প্রশ্ন করা হয়, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর কে? হঠাৎ করে কেমন যেন মাথা ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যায়।
আমি কিছুতেই মহামান্য রাষ্ট্রপতির নামটা মাথায় আনতে পারছিলাম না। আমি হেসে জবাব দিয়েছিলাম, ‘স্যার, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর।’ এর মাঝের সময়টাতে স্নায়ুর চাপ কাটিয়ে উঠে উত্তর দিই ‘ওনার নাম জনাব মো. আবদুল হামিদ।’
ভাইভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতটা পারা যায় নির্ভার থাকা উচিত, না হয় অনেক সহজ তথ্য মনে না-ও আসতে পারে। চাকরির পরীক্ষায় অধ্যবসায়ের সঙ্গে কখনো কখনো ভাগ্যটাও জরুরি হয়ে যায়। কাজেই ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়া যাবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।