স্পোর্টস ডেস্ক : সংবাদকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় দলের ওপেনার লিটন কুমার দাশ। এবার তার হয়ে আনুষ্ঠানিক দুঃখপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও বাংলাদেশ দল।
পুনেতে টিম হোটেলে সোমবার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে লিটনের হুট করে খেপে যাওয়ার পেছনে কারণও ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক। তার মতে, দলের পরাজয় ও নিজে রান না পাওয়া এক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে।
সোমবার সকালে নিজের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি দেন লিটন।
ওই বিবৃতিতে তিনি জানান, টিম হোটেলে এত সংবাদকর্মী আছে বুঝতে পারেননি তিনি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি অল্পসংখ্যক সংবাদকর্মী থাকলে তার এই কাণ্ড সঠিক হতো? এমন প্রশ্নের বিপরীতে নিজের অবস্থান থেকে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন বিসিবির টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ।
‘আমরা জিনিসটাকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক, দুভাবেই নিতে পারি। তখনের তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি আমি জানি না। লিটন বা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার কখনও এমন করেছে কিনা, আমার জানা নেই। বা লিটনও আমার মনে হয়, ও এরোগেন্ট ছেলে, এমন আমি কখনও দেখিনি। কিন্তু ও কেন বলল ওই সময়ের কথাটা, সেটা তো বলেনি। যেটা ওর বিবৃতি ছিল, আমি যেটা বলেছি… ও আমাকে বলেছে, ‘স্যার আমি নির্দিষ্ট কোনো কারণে বলিনি। আমি শুধু তখন অস্বস্তিবোধ করছিলাম। যে কারণে আমি বলেছি।’ হয়তোবা যেটা হয়, একটা দল হারলে অনেক সময় অনেক নেতিবাচকতা কাজ করে। নিজেদের গুটিয়ে রাখতে চায়।’
সুজন আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, খেলোয়াড়দের বাইরে নিয়ে একসঙ্গে খাবার খেতে, একসঙ্গে সব কিছু করার চেষ্টা করছি। তবে দিন শেষে ক্রিকেট খেলাটা তো শারীরিক চাপের চেয়ে মানসিক চাপ বেশি যে, রান করতে পারছে না বা ধারাবাহিকতা হচ্ছে না। এটা একটা সমস্যা হচ্ছে। তো ওই কারণে কিছু (প্রতিক্রিয়া) এলো কি না জানি না। তবে আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ও বিসিবির পক্ষ থেকে এ ঘটনার ব্যাপারে আমি সরি বলছি। আমি এটার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলাম। আপনারা এটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েন।
এসময় সংবাদমাধ্যমের কাছে অন্য যে কোনো সময়ের মতো স্বাভাবিক সমর্থনের আশা প্রকাশ করেন সুজন।
‘আমরা চাই বাংলাদেশের যে বাকি ৬টা ম্যাচ, আপনারা যেমন সমর্থন করেন সবসময়, তেমনই করবেন। যাতে আমরা ইনশাআল্লাহ্ ভালো করতে পারি। আমরা এখানে এসেছি ভালো ক্রিকেট খেলতে। আমাদের অনেক ইচ্ছা ছিল এখানে ভালো কিছু করার। ইচ্ছাগুলো এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আমরা এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারি। দুটি বড় ম্যাচের মধ্যে যদি জিততে পারি, আমরা আমাদের লক্ষ্যে হয়তো পৌঁছাতে পারব।
টাইগাররা নিজেদের লক্ষ্যের মধ্যে অটুট জানিয়ে টিম ডিরেক্টর বলেন, লক্ষ্য থেকে আমরা এখনও বিচ্যুত হইনি। আমরা জানি, আমরা ভালো খেলছি না। স্বপ্ন দেখানোর কিছু নেই। তবে আমরা এখনও বাস্তবতা বিশ্বাস করতে চাই এবং সেরা ক্রিকেটটা খেলতে চাই। বাংলাদেশ যদি সেরা ক্রিকেটটা খেলে এবং তারপরও যদি হারি, আমি এটি মেনে নেব।
প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা কনরাড পুনে হোটেলে রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন লিটন।
প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন, এটি জানতে পেরে টিম হোটেলে যান বিশ্বকাপ কাভার করতে আসা সাংবাদিকরা। প্রধান নির্বাচক তখন হোটেল না থাকায় লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয় তাদের।
এই সময় ক্রিকেটারদের অনেকেই বাইরে যান দুপুরের খাবার খেতে ও ঘুরে বেড়াতে। সংবাদকর্মীরা তাদের ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন। মাহমুদউল্লাহ, তাসকিন আহমেদ, নাজমুল হোসেন শান্ত, হাসান মাহমুদসহ বেশ কজন ক্রিকেটার হাসিমুখে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে টুকটাক কথা বলেন। ছবি তোলা বা ভিডিও করা নিয়ে কোনো আপত্তি তারা জানাননি।
শেষ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচকের দেখা না পেয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর সংবাদকর্মীরা হোটেল ছাড়তে শুরু করেন। লিটন যখন লবির বাইরে আসেন, ততক্ষণে অনেক সংবাদকর্মীই হোটেলের বাইরে চলে গেছেন। তিন-চারজন যারা ছিলেন তখনও, তারা লিটনের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। এই ওপেনার তখন হোটেলের নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে কিছু বলেন, হাত দিয়ে সাংবাদিকদের দিকে ইশারাও করেন।
সেখানে থাকা সংবাদকর্মীরা জানান, নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে লিটন জিজ্ঞেস করেন, ‘মিডিয়া এখানে কেন?’ পাশাপাশি আরও কিছু বলেন। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা এসে সাংবাদিকদের চলে যেতে বলেন ওখান থেকে। টিম হোটেলে সাংবাদিকদের যাওয়া নিয়ে অনেক সময় বিধি-নিষেধ থাকলেও এ দিন হোটেল কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা বাধা ছিল না।
বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওই ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হতে থাকে। এ ঘটনায় আজ দুঃখ প্রকাশ করলেন লিটন ও বিসিবি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।