জুমবাংলা ডেস্ক : বৈশ্বিক স্বাধীনতা সূচকে ২৫ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এই সূচকে ২০২৩ সালে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম। আগে ছিল ১১৬তম।
দেশের নির্বাচন, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং আইনের স্বাধীনতার ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিল। রিপোর্টের নাম ‘গ্লোবাল ফ্রিডম ও প্রসপারিটি’। বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির অভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সমৃদ্ধির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম।
রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএস এআইডি ও এশিয়া ফাউন্ডেশন মঙ্গলবার এ রিপোর্ট প্রকাশ করে।
অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস জানান, এ অবস্থার উত্তরণে স্বাধীনতা নিশ্চিত জরুরি। আর এ কাজে বাংলাদেশের পাশে থাকবে তার দেশ। এক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনি স্বাধীনতা নিশ্চিতে সাহসী উদ্যোগ নিতে হবে।
এ সময় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের আগামী দিনের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এবং নাগরিক সমাজসহ সবাইকে অবশ্যই একটি সমঝোতায় আসতে হবে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, স্বাধীনতা সূচকে ২০০০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে নিæগামী বাংলাদেশ। এ সূচক কেবল নির্বাচন নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আইনের শাসন জড়িত। এসব বিবেচনায় বর্তমানে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নগামী। শক্তিশালী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকা দেশগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। আর যেসব দেশ তা নিশ্চিত করতে পারে না, বিদেশি উদ্যোক্তারা সেখানে আসতে চান না। তবে সমৃদ্ধির সূচকে কিছুটা ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। বর্তমানে এই অবস্থান ৯৯তম। তবে এখানেও অধিকাংশ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ অসমৃদ্ধ। এ অবস্থার উত্তরণে স্বাধীনতা নিশ্চিতের তাগিদ দেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। আর এসব কাজে ঢাকার পাশে থাকে তার দেশ। এক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনি স্বাধীনতা নিশ্চিতে সাহসী উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সমস্যাগুলো এড়িয়ে না গিয়ে স্বীকার করা জরুরি। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে ২০২৬ সালে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জনও কঠিন হতে পারে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পিছিয়ে থাকার রাজনৈতিক প্রবণতা আগামী দিনে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা হিসাবে দেখা দিয়েছে। সেটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল কিংবা নাগরিক সমাজ হোক, বাংলাদেশ উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে তাদের সবাইকে আবার একটি নতুন সমঝোতায় আসতে হবে। নিজ দেশের গল্প তুলে ধরে বাংলাদেশকে সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘স্বাধীনতাবঞ্চিত’ ক্যাটাগরিতে। সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৪টি দেশের মধ্যে ৯৯তম এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘অসমৃদ্ধ’ ক্যাটাগরিতে। সমৃদ্ধি সূচকের তালিকা তৈরিতে স্বাস্থ্য, বৈষম্য, পরিবেশগত অবস্থা, সংখ্যালঘু অধিকার এবং শিক্ষাসহ মাথাপিছু জিডিপির মতো বিভিন্ন কারণ বিবেচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীনতা সূচকের তালিকা তৈরিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আইনি অবস্থার পরিমাপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সমৃদ্ধি সূচকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ১২টি দেশের মধ্যে ভুটান, নেপাল, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে সাতটি ‘বেশি অসচ্ছল’ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে। এ অঞ্চলের শুধু দুটি দেশ শ্রীলংকা ও কাজাখস্তানকে ‘বেশি সমৃদ্ধ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকায় ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে ‘অসমৃদ্ধ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আর স্বাধীনতা সূচকে আটলান্টিক কাউন্সিল বাংলাদেশকে পাকিস্তান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানের সঙ্গে পাঁচটি ‘অধিকাংশ অমুক্ত’ দেশের মধ্যে রাখা হয়েছে। এ অঞ্চলে ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা ও কিরগিজস্তান ‘বেশির ভাগ মুক্ত’ এবং আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তান ‘অমুক্ত’।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি কর্তৃত্ববাদী দলীয় ব্যবস্থার শক্তিশালী পরিবর্তন এসেছে। বিরোধী দলকে বয়কট করে সেটি পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ তার ১৫ বছরের শাসনকাল টিকিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান হতে যাচ্ছেন। এটি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিলেও কর্তৃত্ববাদী দলীয় ব্যবস্থাগুলো প্রায়ই বিভিন্ন ঝুঁকির মুখোমুখি হয়, যা সুশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ ঝুঁকিগুলো কমানোর জন্য রাজনীতি, সরকারব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সম্মেলনের মূল বক্তা আটলান্টিক কাউন্সিলের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি কেন্দ্রের পরিচালক জোসেফ লেমোইন প্রতিবেদনের মূল ফলাফলগুলো তুলে ধরেন। প্রতিবেদনে স্বাধীনতা সূচক এবং সমৃদ্ধি সূচকের ওপর ভিত্তি করে গণতান্ত্রিক ও শাসন সূচক ব্যবহার করে একটি জাতির অর্থনৈতিক অবস্থানের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
জোসেফ লেমোইন বলেন, তথ্যগুলো থেকে দেখা যায়, অধিক স্বাধীনতার দেশগুলো বেশি সমৃদ্ধি উপভোগ করে এবং কম স্বাধীনতার দেশগুলোর সমৃদ্ধি নিচের দিকে। একটি দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে উন্নত করে একটি শক্তিশালী আইনি পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি স্বাগত জানাতে পারে।
সম্মেলনে সরকারের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, দাতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।