স্পোর্টস ডেস্ক : কোনো কোনো ক্ষেত্রে মমিনুল হক আর বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাগ্য প্রায় কাছাকাছিই। সেটি অসাধারণ থেকে খুব সাধারণের কাতারে নেমে আসার। বোঝাতে গেলে মমিনুলের টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেও ফিরে যেতে হয়। প্রথম ৫ টেস্টে এই বাঁহাতি ব্যাটারের গড় (৮৩.৪২) এমন অবিশ্বাস্য ছিল যে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গেও তুলনা শুরু হয়ে যায় যায় অবস্থা।
কিন্তু ম্যাচের সংখ্যা দুই অঙ্কে পৌঁছতে না পৌঁছতেই তা অনেকটা নেমে যায় (১০ ম্যাচে ৫৮.১২)। ৫৮ টেস্ট খেলে ফেলার পর এখন যা মাত্র ৩৮.৬৮। তাতে ব্যাটিং গড়ের দিক থেকে সাবেক এই টেস্ট অধিনায়ক দেশের সেরা পাঁচের মধ্যে থাকলেও বৈশ্বিক বিবেচনায় তিনি অসাধারণ কিছু অবশ্যই নন।
মমিনুলের মতোই একসময়ের অসাধারণ বাংলাদেশ দলও সময়ে খুব সাধারণ পর্যায়ে নেমে আসার নজির রেখেছে সম্প্রতি।
পয়েন্ট তালিকার ৩ নম্বরে থেকে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ শেষ করা দলটির ভরাডুবি হয়েছে বিশ্বকাপে গিয়ে। আগের চারটি আসরেই তিনটি করে ম্যাচ জেতা বাংলাদেশ এবার ফিরেছে মাত্র দুই জয় নিয়ে। স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্সে মুখ থুবড়ে পড়া দল নিউজিল্যান্ডকে সিলেট টেস্টে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র দারুণভাবেই শুরু করেছে। পয়েন্ট টেবিলেও পাকিস্তানের পরই তাদের অবস্থান।
কিন্তু এর আগে বাংলাদেশের শুরু আর শেষের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান খুব সহজেই এবার আশাবাদী হতে দিচ্ছে না। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের দুই চক্রেও তারা ছিল তলানির দল। বিশেষ করে দ্বিতীয় চক্রে কিউইদের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই বিজয়ে টেস্ট জাগরণের যে স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, সেটিও কঠিন বাস্তবতায় আছড়ে পড়ার পর নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই যে এবার বাংলাদেশ অসাধারণ কিছু করবেই।
যদিও সিলেট টেস্ট শুরুর আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বড় স্বপ্ন দেখছেন বলেই জানিয়েছিলেন। র্যাংকিংয়ের চার-পাঁচের মধ্যে থেকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্র শেষ করার লক্ষ্যের কথা বলা এই বাঁহাতি ব্যাটার নেতৃত্বের অভিষেকেই দেখেছেন জয়ের মুখ।
ভারতে থাকতেই হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেও বলে এসেছিলেন যে তাঁর আসল কাজ শুরু হবে বিশ্বকাপের পর। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর সিলেটের জয় হাওয়া কিছুটা তাঁর অনুকূলে নিয়ে এলেও এই শ্রীলঙ্কান কোচের কাজ কিন্তু শেষ নয়, সবে শুরুই! এই চক্রের শেষেও বাংলাদেশের অবস্থা যেন সাধারণ মানের দল হিসেবেই ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষ করার মতো না হয়, সেই চ্যালেঞ্জও কোচ-খেলোয়াড়-নির্বিশেষে অপেক্ষা করছে আসছে নতুন বছরে। এই চক্রে ছয়টি দুই টেস্টের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। তিনটি দেশে এবং তিনটিটি দেশের বাইরে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজের পর বাকি থাকে যে পাঁচটি, এর সব কয়টিই বাংলাদেশকে খেলতে হবে ২০২৪ সালের মধ্যে। এর মধ্যে তিনটি সিরিজ পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এই তিনটি দল ছাড়া টেস্ট খেলুড়ে আর সব দেশের বিপক্ষেই ম্যাচ জেতা হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তার ওপর পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে খেলতে হবে তাদের মাটিতে গিয়ে। প্রোটিয়ারা অবশ্য খেলবে বাংলাদেশে এসে। এখানে এসে খেলার কথা আছে শ্রীলঙ্কারও। আগামী বছরের শেষে বাংলাদেশ যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজেও। অবশ্য ২০২৪ সালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরেও দুটি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ, যেখানে নিজেদের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও আছে দুটো টেস্ট ম্যাচ ও দেশের বাইরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আছে ২টি ম্যাচ। এই এক বছরেই ১৪টি টেস্ট খেলবে তারা। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের চক্রে ভাগ্য বদলের জন্য খুব বেশি সময় পাচ্ছে না বাংলাদেশ। পাচ্ছে মাত্র ১৩ মাস!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।