জুমবাংলা ডেস্ক : পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চলমান আন্দোলন দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় এক গভীর সঙ্কট তৈরি করেছে। গত ৮ দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ অবস্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাত দফা দাবি, বিশেষ করে আরইবি ও সমিতি একীভূতকরণ, অভিন্ন চাকরিবিধি এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের স্থায়ী নিয়োগ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-এর ভূমিকাই এখন আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
Table of Contents
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড: দায়িত্ব, কাঠামো ও বিতরণ কার্যক্রম
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB) একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, যার মূল দায়িত্ব হলো দেশের গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ নিশ্চিত করা। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বর্তমানে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে দেশের ৩ কোটি ৬৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, এবং শিক্ষা খাতেও REB গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
REB-এর কাঠামো কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সমিতির সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি সমিতি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হলেও নীতিনির্ধারণে কেন্দ্রীয় বোর্ডের প্রভাব রয়েছে। তবে এই কাঠামোর মধ্যেই একীভূতকরণ ও চাকরিবিধির অসামঞ্জস্যতা নিয়ে বারবার আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন কর্মচারীরা।
বর্তমান আন্দোলনের পটভূমি ও প্রভাব
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সময় সময় বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে কর্মচারীরা তাদের দাবি উত্থাপন করে আসছিলেন। তবে ২৮ মে থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সারাদেশে প্রায় ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় গ্রাহক সেবা ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে।
চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন যে, দাবি জানানোয় ২৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং ৪০ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ৬,০০০ এর বেশি কর্মীকে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে, যা পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলেছে।
আইনি ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ
আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৭২টি মামলার মধ্যে ১৭ জন গ্রেফতার হয়েছেন এবং পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মামলার কারণে অনেকে গা ঢাকা দিয়ে চলেছেন, ফলে অফিস ও মেরামতের কাজে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটছে। কর্মীদের মতে, এই পরিস্থিতিতে বৈদ্যুতিক লাইনে কাজ করতে গিয়ে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
জনগণের দুর্ভোগ ও ভেতরের সংকট
REB-এর গ্রাহকদের সংখ্যা দেশের মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের ৭৫ শতাংশেরও বেশি। তাই এই আন্দোলনের প্রভাব সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনে পড়ছে। কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, স্বাস্থ্যসেবা, ই-লার্নিং, এবং গ্রামীণ শিল্প সবখানেই বিদ্যুৎ সরবরাহে অসুবিধা দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে REB-এর প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কারের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের আন্দোলন রাষ্ট্রীয় সেবা খাতের জন্য হুমকি হতে পারে বলে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্মীদের অধিকার ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও সমাধানের পথ
REB-এর উচিত হবে কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো। তাদের দাবি যেমন বাস্তব, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। অভিন্ন চাকরিবিধি ও স্থায়ীকরণের মাধ্যমে কর্মীদের নিরাপত্তা ও মনোবল ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণও গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাব এড়িয়ে গঠনমূলক পদক্ষেপই পারে এই সংকট নিরসন করতে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-এর আধুনিকায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হয়ে উঠেছে। জনগণের বিদ্যুৎ সেবা যেন ব্যাহত না হয়, সে বিষয়টি সর্বাগ্রে নিশ্চিত করা উচিত।
FAQs
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কী?
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB) একটি সরকারি সংস্থা যা গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ করে। এটি ১৯৭৭ সালে গঠিত হয়।
REB-এর আওতায় কতজন গ্রাহক রয়েছে?
বর্তমানে প্রায় ৩ কোটি ৬৮ লাখ গ্রাহক REB-এর আওতায় বিদ্যুৎ সেবা গ্রহণ করছেন, যা দেশের মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের প্রায় ৭৫ শতাংশ।
চলমান আন্দোলনের প্রধান কারণ কী?
REB ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা একীভূতকরণ, অভিন্ন চাকরিবিধি এবং চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
এই আন্দোলনের কারণে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?
গ্রাহক সেবা ব্যাহত হচ্ছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব পড়ছে।
সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
প্রশাসনিক সংস্কার, চাকরি নিরাপত্তা এবং কর্মীদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপই হতে পারে সংকট সমাধানের পথ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।