বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরি যেন হাজারো তরুণ-তরুণীর জীবনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নপূরণের প্রধান সেতুবন্ধন হলো বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে লাখো শিক্ষিত তরুণের জীবনের মোড় ঘুরে যায়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের নানা অনিয়ম, জবাবদিহির অভাব এবং ধীর গতির কার্যক্রম এই প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ঠিক তখনই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের জোরালো অবস্থান তুলে ধরে যেন পরীক্ষার্থীদের স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি): স্বচ্ছতা ও গতিশীলতার দাব
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) হলো সেই প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে বিসিএস ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক চাকরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল—প্রশ্নপত্র ফাঁস, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, কোটাব্যবস্থায় বৈষম্য ও ভাইভায় পক্ষপাতিত্বের মতো সমস্যা। এর ফলে পিএসসির স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
Table of Contents
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল এই অনিয়মের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমেছিল। এনসিপি দাবি করেছে, এই অভ্যুত্থানই প্রশাসনিক সংস্কারের সূচনা করেছে এবং পিএসসিকে আরও স্বচ্ছ ও গণমুখী হতে বাধ্য করেছে।
পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেমের সঙ্গে এনসিপি নেতারা বৈঠকে বসে তাদের দাবি পেশ করেছেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশ, কাট মার্কস ও সঠিক উত্তর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা, ভাইভার নম্বর চূড়ান্ত ফলাফলের সঙ্গে প্রকাশ করা ইত্যাদি। এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থা ফিরবে এবং পিএসসি কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
বিসিএস পরীক্ষার ভবিষ্যৎ ও এনসিপির সুপারিশসমূহ
এনসিপি তাদের দাবিপত্রে উল্লেখ করেছে, ৪৪তম থেকে ৪৭তম বিসিএস পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও সময়ানুগ ফলাফল প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। যেমন:
- ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে শেষ করে ৩০ জুনের মধ্যে ফল প্রকাশ।
- ৪৫তম বিসিএসের লিখিত ফলাফলও জুনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
- ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা জুনের শেষ সপ্তাহ অথবা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে নিতে হবে।
- ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ৪৬তম লিখিত পরীক্ষার এক মাসের মধ্যে নিতে হবে।
এছাড়াও ভাইভার নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশ, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ সার্কুলারে অন্তর্ভুক্ত করা, এবং নন-ক্যাডার নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনর্বহাল করার দাবি জানানো হয়।
ভবিষ্যতের বিসিএস পরীক্ষায় এনসিপির প্রস্তাবিত সংস্কার
এনসিপি দাবি করছে যে, প্রার্থী-সুলভ পিএসসি প্রতিষ্ঠা করাই এখন সময়ের দাবি। ভাইভা নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব। একইসঙ্গে, দীর্ঘসূত্রতা রোধে এক বছরের মধ্যে বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
এনসিপি নেতারা বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি পিএসসি ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে হাঁটছে। কিন্তু সেই পথকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে পরীক্ষার্থীদের দাবি মেনে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
পিএসসি’র ইতিবাচক পদক্ষেপ
পিএসসি ইতোমধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ৪৪তম বিসিএস ভাইভা ও ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে সমস্যা না হয়। এ ধরনের পরিকল্পনামূলক সময় নির্ধারণ প্রশাসনিক পেশাদারিত্বেরই ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া যদি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে, তবে পিএসসি তার হারানো বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
এই বিষয়ে বিস্তারিত আরও জানতে পড়ুন বিসিএস ভাইভা শেষে ফলাফল চাই নিবন্ধটি।
FAQs
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) কী?
বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) হলো একটি সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যা সরকারি চাকরির পরীক্ষাসমূহের মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া পরিচালনা করে।
এনসিপি কী কারণে পিএসসির বিরুদ্ধে দাবি তুলেছে?
বিভিন্ন অনিয়ম, পক্ষপাত, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ও কোটাব্যবস্থায় বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অসন্তোষকে ভিত্তি করেই এনসিপি এই দাবি তুলে ধরে।
বিসিএস পরীক্ষার স্বচ্ছতা আনার জন্য কী পদক্ষেপ প্রয়োজন?
প্রথমত প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে দেওয়া, নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশ এবং ভাইভা নম্বর প্রকাশ করা জরুরি।
নন-ক্যাডার ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার গুরুত্ব কী?
যেসব প্রার্থী ভাইভাতে উত্তীর্ণ হলেও ক্যাডার পান না, তাঁদের জন্য নন-ক্যাডার চাকরি একটি বিকল্প সুযোগ। এটি পুনরায় চালু হলে অনেকের কর্মসংস্থানের পথ খুলবে।
পিএসসি কি ইতিবাচকভাবে এনসিপির দাবি গ্রহণ করেছে?
হ্যাঁ, পিএসসি চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম বলেছেন যে, এসব দাবি ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করা হবে এবং বাস্তবায়নে আগ্রহী।
ভবিষ্যতের বিসিএস পরীক্ষায় কী পরিবর্তন আসতে পারে?
সময়সীমা নির্ধারণ, ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা, নন-ক্যাডার ব্যবস্থা চালু ও পরীক্ষার্থীবান্ধব পিএসসি গঠনের দিকেই অগ্রসর হতে পারে ভবিষ্যতের বিসিএস ব্যবস্থা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।