স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্বকাপের শুরুটা দাপটের সঙ্গেই করল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৯২ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে জয় পেয়েছেন সাকিব আল হাসানরা। ধর্মশালায় এই ম্যাচে বাংলাদেশই ফেবারিট ছিল। তবু এতটা দাপট দেখিয়ে জয়ের কথা মনে হয় না দলও আশা করেছিল। তো, কীভাবে এল এই জয়। চলুন দেখে নিই কারণগুলো-
উইকেটের ধরন দ্রুত বুঝতে পারা
ধর্মশালার উইকেট আজ চমকে দিয়েছে। পেসারদের সুবিধা দেওয়ার জন্য বিখ্যাত এই ভেন্যুতে আজ পেসাররা হতাশ হয়েছেন। শুরুতে পেসারদের গতি উল্টো ব্যাটসম্যানদের সুবিধা করে দিচ্ছিল। উইকেটে বল আটকে যাচ্ছে দেখে স্পিন দিয়েই আক্রমণ করে বাংলাদেশ। এবং পেসাররাও গতির তারতম্য ও স্লোয়ার ব্যবহার করা শুরু করেন।
উইকেটের ধরন দেখে সরাসরি আক্রমণ না করে ধৈর্য ধরে ডট বল দেওয়ার পরিকল্পনায় নামে বাংলাদেশ। এ কারণেই ১৫ ওভারের মধ্যে ৮০ পেরিয়ে যাওয়া আফগানিস্তান ধৈর্য হারিয়ে ৩৮তম ওভারে যখন অলআউট হয়েছে, তখন ১৬০ এর চেয়ে ৪ রান কম করেছে।
সাকিব
কোন কারণকে এগিয়ে রাখা হবে, সাকিবের বোলিং নাকি অধিনায়কত্ব? পেসাররা সুবিধা করতে পারছেন না দেখে সপ্তম ওভারেই বোলিংয়ে এসেছেন। দ্বিতীয় ওভারেই বেক থ্রু এনে দিয়েছেন। দ্বিতীয় দফা এসে আবারও বেকথ্রু দিয়েছেন। তৃতীয় উইকেটে আফগানদের শেষ ভরসাকে তুলে নিয়েছেন।
কিন্তু বোলার সাকিবের চেয়েও হয়তো মার্কস বেশি পাবেন অধিনায়ক সাকিব। প্রথমে পেসারদের পরিবর্তে নিজেকে নিয়ে এসেছেন, আবার যখন প্রতিপক্ষ চাপে পড়েছে, তখন পেসারদের ফিরিয়েছেন। উইকেটের চরিত্র বুঝে লাইনলেংথ মেনে বলের গতি কমিয়ে বল করার পরামর্শ দিয়েছেন মিরাজকে। একটু পর পর বোলিংয়ে পরিবর্তন এনেছেন। আবার চাইলেই আফগানিস্তানের লেট অর্ডারের বিপক্ষে বোলিং করতে পারতেন, কিন্তু তা না করে মিরাজকে দিয়ে বোলিং করিয়ে উইকেটপ্রাপ্তিতে সুবিধা করিয়ে দিয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাসটা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আফগানিস্তান ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা
ম্যাচের আগেই রশিদ খান বলেছিলেন, ভারত তাদের হোমগ্রাউন্ড ছিল অনেকদিন। আইপিএলেও তাঁদের অনেকেই খেলেন। কিন্তু ফরম্যাটটা যে ওয়ানডে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। এবং ম্যাচে সেটাই প্রমানিত হয়েছে। যতক্ষণ ব্যাটে বল আসছিল এবং বাংলাদেশের বোলাররা আক্রমণাত্মক বোলিং করেছেন, ততক্ষণ স্বচ্ছন্দে রান নিয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশের বোলাররা রক্ষণাত্মক হয়ে লাইন লেংথ মেনে বল করা শুরু করতেই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন তারা। অধিকাংশ ব্যাটসম্যান উইকেটের ধরণের সঙ্গে মানানসই ইনিংস খেলতে ব্যর্থ। স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। অথচ এই উইকেটে ২৩০ রানই যথেষ্ট, সেটা বুঝে ব্যাট করলেই আজ ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন করে তোলা যেত।
মিরাজকে উপরে খেলানো
দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেই দারুণ খেলায় তানজিদ হাসান তামিমকে আজ ওপেন করানো হয়েছিল। অন্যপ্রান্তে লিটন তো ছিলেনই। কিন্তু মুজিব উর রহমান ও ফজল হক ফারুকি দুজনকেই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছেন। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওপেন করতে নেমে সেঞ্চুরি করা মিরাজকে তিনে নামানোয় খেলার ছন্দ বদলে যায়। মুজিব ও ফারুকি-দুজনকে অনায়াসে খেলেছেন মিরাজ।
অন্যপ্রান্তে লিটন ও শান্ত অতটা স্বস্তিতে না থাকলেও মিরাজের ১০০ স্ট্রাইকরেটের শুরু বাংলাদেশের রানের গতিটা যেমন ধরে রেখেছ, তেমনি চাপটাও সরিয়ে রেখেছে। এ কারণেই মুজিব বা রশিদদের স্পিনে মাঝেমাঝেই ভয় জাগলেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে কখনো ধস নামার সম্ভাবনা জাগেনি।
শান্তর ফর্ম
আজ নাজমুল হোসেন শান্ত দারুণ খেলেছেন, এটা বলা কঠিন। বরং উল্টো, বেশ অস্বস্তি নিয়ে ইনিংস শুরু করেছেন শান্ত। বিশেষ করে রশিদ খান বারবার তাঁকে বিভ্রান্ত করেছেন। প্রথম ৫০ বলে ৩০ রান করা শান্ত শেষ পর্যন্ত ৫৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন। অস্বস্তিতে থাকলেও পরিস্থিতি বুঝে তাঁর টিকে থাকা বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মিরাজ ভালো ব্যাট করলেও অন্যপ্রান্তে আরেকজনেরও টিকে থাকা জরুরি ছিল। কারণ, আফগানিস্তান ইনিংসে রহমানউল্লাহ গুরবাজও চমৎকার খেলছিলেন, কিন্তু অন্য প্রান্তে সাহায্য না পাওয়ায় চাপে পড়ে যান এবং উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন। মিরাজের ক্ষেত্রে যেন এমন কিছু না হয়, সেটা নিশ্চিত করেছেন ফর্মে থাকা শান্ত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।