জুমবাংলা ডেস্ক : মো. রুহুল আমিন তোরন। জানুয়ারি ২০২২ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। বর্তমানে তিনি পড়াশোনা করছেন সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটির ইন্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। তোরন জানান, ওই ইউনিভার্সিটিতে ৬৫ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী গেছেন, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এ নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোকে বেছে নিলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানির মতো ভিন্ন ভাষার দেশগুলোর প্রতিও আগ্রহ বাড়ছে। তবে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। মার্কিন দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ থেকে ১৩ হাজার ৫৬৩ শিক্ষার্থী লেখাপড়ার জন্য দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছেন, যা আগের শিক্ষাবর্ষের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।
উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কেন বেছে নিলেন, জানতে চাইলে মো. রুহুল আমিন তোরন বলেন, আমি ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস) দিয়ে ৭ স্কোর অর্জন করি। প্রথমে যুক্তরাজ্যে সুযোগ পাই, কিন্তু পছন্দমতো সাবজেক্ট পায়নি। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করি। সেখানে স্কলারশিপসহ সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পাই। আমি যখন দেখলাম স্কলারশিপসহ একটি বিশ্ব র্যাংকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছি, তখনতো আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। এখানে এসে আমার ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা পদ্ধতি অনেক উন্নত জানিয়ে তিনি বলেন, এখানের শিক্ষার পরিবেশ আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে। আসার আগে এক বড় ভাইয়ের কাছে গল্প শুনেছি। তাতে উৎসাহ পেয়েছিলাম। বাস্তবে এসেও তাই দেখলাম। আমি ক্যাম্পাস জবের অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। তবে নতুন যারা আসছে, তারা পাচ্ছেন না। কারণ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে অনেক শিক্ষার্থী আসছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ দেয়। প্রতি ঘণ্টা কাজের মূল্য ১৫ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৬৫০ টাকা।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বাড়ছে, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যারা এইচএসসি ও অনার্স পাস করে বের হয়, তাদের জন্য দেশে উচ্চ শিক্ষার যে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য শিক্ষার্থীরা বিদেশে পাড়ি জমায়। এই সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে আরও অনেক বিষয় আছে, এই একবিংশ শতাব্দিতে আমরা হয়তো শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা ওইভাবে দিতে পারছি না। সব মিলিয়ে যেসব ছাত্র-ছাত্রী বিদেশে যাচ্চে, তাদের সংখ্যা কিন্তু বাড়বে। আর এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াটা আমাদের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।
উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়া ইতিবাচক জানিয়ে ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশে ফিরে আসেন, তাদের অভিজ্ঞতা দেশে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে সহায়ক হবে এবং তারা যদি তাদের প্রশিক্ষণ বিদেশেও কাজে লাগায়, তাহলেও দেশের জন্য ভালো। কারণ, উন্নত বিশ্বের কোম্পানিগুলোতে চাকরি করা বাংলাদেশর সম্মান বয়ে আনে ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
পাশের দেশ ভারতের উদারহরণ টেনে তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রশিক্ষিত জনশক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছে । কারণ, তাদের সে শিক্ষা এবং যোগ্যতা আছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরাও এভাবে অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করি। দেশের ভেতরে থেকে ও বাইর থেকে শিক্ষার্থীরা অবদান রাখবে।
মেধাপাচারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, একবিংশ শতাব্দিতে আমি মেধা পাচারের বিষয়টি বিশ্বাস করি না। কারণ, এটি গ্লোবাল ভিলেজ। বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থী যেমন বিদেশে লেখাপড়া করবে, আবার বিদেশের একজন শিক্ষার্থীও বাংলাদেশে এসে পড়বে, কাজ করবে। এটিই স্বাভাবিক বিষয়। তাদের অভিজ্ঞা আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে। এ মুহূর্তে বিদেশি প্রশিক্ষিত অনেক জনশক্তি বাংলাদেশে কাজ করছে। তাদের কাজের সুফল পাচ্ছে বাংলদেশ। বুদ্ধিভিক্তিক কোনো সীমা রেখা টানা উচিৎ নয়, ভৌগলিক সীমারেখা থাকবে। আমাদের মনোজগতকে শিক্ষার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ থেকে ১৩ হাজার ৫৬৩ শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। যা আগের শিক্ষাবর্ষের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। গত মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে রেকর্ডসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছেন। সার্বিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী যাওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩ তম বলে উল্লেখ করা হয়।
২০২৩ সালের ওপেন ডোরস রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে মার্কিন দূতাবাস জানায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী গেছেন, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। আড়াই হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আন্ডারগ্রাজুয়েটে (স্নাতক ও সংশ্লিষ্ট ডিগ্রি) ভর্তি হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি স্নাতক শিক্ষার্থী আমেরিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ছে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এই প্রসঙ্গে বলেন, আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নেওয়ায় আমরা উচ্ছ্বসিত। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যুগান্তকারী গবেষণায় যুক্ত হওয়া থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের জীবনকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো জুড়ে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করে চলেছে।
এ বছর সব মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। সারাবিশ্ব থেকে যত দেশের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
দূতাবাস জানায়, গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ৩ হাজার ৩১৪ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। ফলে ২০২২-২৩ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যায় প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৩০০ শতাংশের বেশি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যুরো অব এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স এবং ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন প্রতিবছর যৌথভাবে ওপেন ডোরস রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। এই প্রতিবেদনে প্রতিবছর কতসংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন, তা উল্লেখ করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।