আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কলকাতায় ক্রমাগত কমছে বাংলাদেশি পর্যটক। ফলে সেখানকার ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কেন বাংলাদেশি পর্যটক কমছে, তা খুঁজে বের করে সমাধান বের করার চেষ্টা করছেন তারা। আর সে কারণে সোমবার একটি বৈঠক করেছেন মারকুইস স্ট্রিটসহ অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশিরা কলকাতায় গিয়ে সাধারণত এই এলকাতেই কেনাকাটা করেন সবচেয়ে বেশি।
কলকাতার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, নিরাপত্তার অভাব, সীমান্ত হয়রানি এবং ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার কারণেই হয়তো বাংলাদেশি পর্যটক কমেছে।
মারকুইস স্ট্রিটের ব্যবসায়ীদের অভিমত, ভারতের ভিসা সমস্যার সমাধান, সীমান্ত হয়রানি ও মারইকুইস স্ট্রিটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সমস্যায় পড়তে হবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
সন্ধ্যায় মারকুইস স্ট্রিটের ‘হোটেল এমারেল্ড’- এর সভাঘরে যৌথভাবে ওই বৈঠকের আয়োজন করে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রিস্কুল স্ট্রিট এবং মারকুইস স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার অ্যাসোসিয়েশন, নিউমার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইট কাউন্সিল, স্থানীয় দোকান, হোটেল, গেস্টহাউস, রেস্তোরাঁ এবং ভারত-বাংলাদেশে চলাচল করা বাস মালিকদের সদস্যরা।
এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেন শ্রীলেদার্সের মালিক সত্যব্রত দে, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোতোষ কুমার সাহা, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এবং মারকুইস স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নাসির আহমেদ, পরিবহন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলি খানসহ বিশিষ্টরা।
বৈঠকে উঠে আসে, বাংলাদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা ভেবে সিসিটিভি দিয়ে মুড়ে ফেলা হবে। মারকুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, ফ্রিস্কুল স্ট্রিটসহ গোটা নিউমার্কেট চত্ত্বর সিসিটিভি দিয়ে মুড়ে ফেলার জন্য মোট ৪০টির বেশি ক্যামেরা লাগানো হবে। পাশাপাশি মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের তরফে দুটি হেল্পডেস্ক করা হচ্ছে সে অঞ্চলে।
তবে শুধু নিরাপত্তার বিষয় নয়, মৌসুমে এ অঞ্চলে হোটেল না পাওয়া কিংবা অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে হোটেল বুক করার অভিযোগও ওঠে। এমনও দেখা গেছে যে হোটেল রুম না পেয়ে সড়কেই রাত কাটিয়েছেন পর্যটকরা। বিশেষ করে ঈদের আগে এবং পরে, বড়দিন, বছরের শেষ দিনে এরকম ঘটনা সামনে আসে। এর ওপর রয়েছে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিসা সমস্যা। এসব নানা কারণে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। এই অভিযোগও করেছেন ব্যবসায়ীরাই। খুব দ্রুত যাতে এই সমস্যার সমাধান করা যায় এবং সে সমস্ত বিক্ষিপ্ত ঘটনা হচ্ছে তা যাতে শূন্যে নামিয়ে আনা যায়, সেসব বিষয় গুলিও উঠে আসে এদিনের বৈঠকে।
এ ব্যপারে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মনোতোষ সরকার বলেছেন, বাংলাদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি ঝঞ্ঝাটমুক্ত সফর যাতে করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। যদিও কলকাতা অনেক নিরাপদ একটি শহর। বাংলাদেশিরাও অনেক নিরাপদ অনুভব করে। হকারজনিত একটা সমস্যা হয়েছিল সেটা আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলে মিটিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকেও আমরা সহায়তা পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেছেন, নিউমার্কেট এলাকাটা মূলত বাংলাদেশিদের ওপর নির্ভর। কিন্তু ভিসা সমস্যার কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশিরা কলকাতা ভ্রমণ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে আমাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কয়েক মাস আগেও যেখানে এসময় দৈনিক গড়ে ৪-৫ হাজার পর্যটক আসতেন, সেখানে বর্তমানে ৫’শ পর্যটকও আসছেন না। দ্বীতিয়ত, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে অভিবাসন দপ্তরেও বাংলাদেশিরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সর্বোপরি যারা কলকাতায় আসছেন সেই সব পর্যটকরা কিভাবে এখানে সুরক্ষিত থাকতে পারেন মূলত এই তিনটি বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে শ্রীলেদার্সের মালিক সত্যব্রত দে বলেছেন, করোনার আগে এবং পরে সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অনেকটাই তফাৎ ঘটেছে। তবে আমাকে যদি ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেন, আমি কি সমস্যায় পড়েছি? আমি বলব, আমি এখনও সমস্যায় পড়িনি। বাংলাদেশিরা যেভাবে এসেছিলেন, কেনাকাটা করছিলেন ঠিক একইভাবে তারা কেনাকাটা করছেন।
তিনি আরও বলেছেন, কলকাতা, ঢাকা-চট্টগ্রাম, জামশেদপুর -এই চার অঞ্চলে আমি দীর্ঘদিন ধরে আমি বসবাস করেছি। আমার বাবা চট্টগ্রামের মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে ছিলেন, বাবাও জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনায় গুলি খেয়েছেন। আমাদের দেশ হচ্ছে ঢাকায়। স্বাধীনতার আগেই আমরা ভারতে এসেছি। এখনো আমরা রক্তের টান অনুভব করি। যে অনুভূতি বা ফিলিংস নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এসেছিলাম তা, আমাদের মধ্যে এখনো রয়ে গেছে। ফলে ঢাকা-কলকাতা, ভারত-বাংলাদেশ আমি ভাগ করতে পারি না। যে কারণে এই বৈঠকে আমিও সামিল হয়েছি।
এ বিষয়ে মনোতোষ কুমার সাহা বলেছেন, সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্যই আমাদের এই বৈঠক। মূলত, দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা পেতে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই নিয়ে আমরা সরকারি সহযোগিতা চেয়েছিলাম। সরকার সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং বাংলাদেশিরা কিভাবে আরো তাড়াতাড়ি ভিসা পেতে পারে তা নিয়ে আমরা আমাদের সরকারকে অনুরোধ করেছি, তাদেরকে চিঠিও দিয়েছি, তারা বিষয়টা দেখছে। কলকাতায় যাতে তারা নিরাপদে অবস্থান করতে পারেন তা নিয়েও আমাদের সরকারের সাথে কথা হয়েছে। সবাই এ বিষয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এখন আপনারা দেখতে পাবেন রাতের বেলা হকার বসছে না। প্রশাসনের প্রচেষ্টায় এটা সফল হয়েছে। সাইকেল রিকশঅ মুক্ত করার জন্য আমাদের কথাবার্তা চলছে।
সংগঠনের আরো এক সদস্য জানিয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের জি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশিদের ভারতীয় ভিসা সমস্যা মিটে যাবে।
সংগঠনের আরেক সদস্য জাফর খান বলেন, শুধু সরকারের দিকে চাতকের মত তাকিয়ে থাকলে চলবে না। স্থানীয়দেরও এগিয়ে আসতে হবে। যে কারণেই আমরা এগিয়ে এসেছি। সরকার ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় মারকুইস স্ট্রিট আভিজাত্য ফিরে পাচ্ছে, নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন বাংলাদেশিরা।
আফজাল হোসেনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার কথা জানালেন ফরিদুর রেজা সাগর
প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল বাংলানিউজ। সেখানে তুলে ধরা হয়, বাংলাদেশিদের হয়রানি এবং নিরাপত্তাহীনতা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। সে কারণে সম্ভবত নড়েচড়ে বসে স্থানীয়রা। সেই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল, মারক্যুইস স্ট্রিটের বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বাংলাদেশিদের বিপদ ডেকে আনছে। স্থানীয়দের মতে, সে অঞ্চলে বেড়েছে অচেনা মানুষের আনাগোনা। এর জেরে টাকা, মোবাইল, ব্যাগ ছিনতাইয়ের মত বহু ঘটনা সামনে আসছে। বাংলাদেশ উপদূতাবাসও জানিয়েছিল, আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে পাসপোর্ট হারানোর মতো ঘটনা। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা মিলছে না। ফলে আগের চেয়ে অনেকটাই সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশিদের। এমনটাই জানিয়েছিল সে অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। এরপরই সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেছিল কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটের স্থানীয়রা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।