ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেছেন, সরকার প্রমাণ করেছে যে আসলে নারীর সঙ্গে তারা নাই। জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৫ শতাংশ আসনের ব্যাপারে মাছের বাজারের দরাদরি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের বলা হয়, আপনারা যদি ১৫ চান তাইলে ১০ দিতে পারি। মানে এটা কি মাছের বাজারের দরাদরি? হোয়াট উই স, দিস ওয়াজ অ্যা বয়েজ ক্লাব এবং এখানে পুরো চার কোনা জুড়ে সব পুরুষরা বসে আছেন এবং তারা ওখানে বসে নারীর ভাগ্য নির্ধারণ করছেন।
শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীতে ‘জাতীয় সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
সামিনা লুৎফা বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট এবং তার প্রস্তাবগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি এবং অসম্ভব অদায়িত্বশীল একটা কাজ আমি মনে করি যে সরকার তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে এই কাজটি করার জন্য এবং সেই কাজটি তারা করেছেন।
তারপরে তাদের উপরে যেই ভয়াবহ আক্রমণ হয়েছে, সে পুরো আক্রমণের সময়টিতে একেবারে নিশ্চুপ থেকে সরকার প্রমাণ করেছে যে আসলে নারীর সঙ্গে তারা নাই।
তারা সেইসব মানুষের সঙ্গে আছে, যেসব মানুষ নারীকে, নারীর চলাচলকে, নারীর অগ্রযাত্রাকে থামাতে চায়। এখন এটা তো খুবই দুর্ভাগ্য আমাদের পক্ষে যে এই সরকার যার বেশিরভাগ মানুষকে আমরা রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে চিনি, যাদের সঙ্গে রাস্তায় আমাদের বহু বছরের দেখার ইতিহাস-অভিজ্ঞতা আছে।
তারা যদি এরকম একটা সরকারের জায়গায় যান যেখানে নারীর অধিকার প্রশ্নে এত গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে সেই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে তিনটা নিয়ে কারো ভিন্ন মত থাকতেই পারে, সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা না করে, যে আক্রমণটা তাদের উপর করা হয়েছে এবং সেই সময় তাদের পাশে না থাকা- এর চাইতে বড় অদায়িত্বশীল কাজ আর আমি মনে করি না আছে। অনেক অদায়িত্বশীল কাজ সরকার করেছে, তার মধ্যে এটা টপ হবে- যেই কাজগুলো তারা করেছেন।
তিনি বলেন, আমি যে আসলে ঐকমত্য কমিশনের কাছে খুব বেশি কিছু আশা করছিলাম তা না। আমার মনে হয়েছিল যে ওই সময় যদি ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে রাজনৈতিক দলগুলো গিয়ে যখন কথা বলছিল, আমরা সেসব ছবি দেখেছি যে পুরো একটা বয়েজ ক্লাব।
এখানে কীভাবে হয়েছে, তার চেয়ে বড় কথা হোয়াট উই স, দিস ওয়াজ বয়েজ ক্লাব এবং এখানে পুরো চার কোনা জুড়ে সব পুরুষরা বসে আছেন এবং তারা ওখানে বসে নারীর ভাগ্য নির্ধারণ করছেন এবং আমরা কিন্তু আপডেট পাচ্ছিলাম যে ১০ শতাংশ।
আমাদেরকে আগের দিনও বলা হয়েছে, আপনারা যদি ১৫ চান, তাহলে ১০ দিতে পারি। মানে এটা কি মাছের বাজারের দরাদরি? মানে এই মাছের বাজারে দরাদরি করতে করতে দেখলাম সাত।
তারপর সাত থেকে নেমে আবার পাঁচ। মানে ঘণ্টায় ঘণ্টায় এই যে আপডেটগুলো আমরা পাচ্ছিলাম, এগুলোতে আমরা বুঝেছি যে আসলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ব্যর্থ হয়েছে নারীকে তার মর্যাদা দিতে।
নারী আসলে কোথায়- একেবারে বেসিক হিউম্যান রাইটসের জায়গা থেকেও যদি চিন্তা করি, সেটা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এটার চাইতে বড় ঐতিহাসিক ভুল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আর কখনো করেনি বলে আমার ধারণা।
তিনি আরো বলেন, অবাক হয়ে ভাবি যে এদের মধ্যে অনেকে তো অনেক প্রগতিশীল রাজনীতির লোকজন। তারাও কী করে পারলেন এখানে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে এবং লিটারালি আমার সঙ্গে যাদের কথা হচ্ছিল, তারা একেবারে মাছবাজারে দরাদরি করছিলেন যে ১৫ শতাংশ বললে ১০ শতাংশ দেবে। ২০ শতাংশ বললে দিবেই না।
৫০ শতাংশ তো প্রশ্নই আসে না। এত বড় দাবি কেন করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এই দরাদরিটা কে করছেন আমার সঙ্গে? একজন পুরুষ। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এরা সবাই পুরুষ এবং এই যে পুরুষরা বসে এখানে সিদ্ধান্ত নেবেন নারী কীভাবে রাজনীতিতে আসবে- এর চাইতে তো মানে হাস্যকর কোনো প্রজেক্ট আর হতে পারে না।