জুমবাংলা ডেস্ক : নওগাঁয় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মরু গোলাপ বা অ্যাডেনিয়াম। বনসাই আকৃতির এ গাছটি রসাল প্রকৃতির। গাছে গোলাপের মতো দুই থেকে তিনটি করে পাপড়ি ও স্তর থাকে। খরা সহিষ্ণু এ গাছ অল্প পানিতে বেঁচে থাকতে পারে। এ কারণে ক্রেতা বা শৌখিনদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে মরু গোলাপ বা অ্যাডেনিয়াম।
অনেকেই এখন অ্যাডেনিয়াম চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সম্ভাবনাময় এ উদ্ভিদ চাষে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অ্যাডেনিয়াম গাছ প্রাকৃতিক ভাবেই বনসাই আকৃতির। গাছটি ক্যাকটাস নয়, তবে রসাল প্রকৃতির, যা মরুভূমির গোলাপ নামে পরিচিত। এই জাতের গাছে গোলাপের মতো দুই থেকে তিনটি করে পাপড়ি ও স্তর থাকে। অ্যাডেনিয়াম গাছ বেশ শক্ত ধাঁচের। খুব বেশি পানির প্রয়োজন হয় না। মরুভূমির মতো পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। গাছ ৫০ সেন্টিমিটার থেকে দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। গোড়া বেশ মোটা হয়। শাখাপ্রশাখা নরম এবং পাতা পুরু।
প্রায় সারাবছরই কম-বেশি ফুল ফোটে। লাল, মেরুন, গোলাপি, ঘিয়ে, সাদা, হলদে, নীলাভসহ বিভিন্ন রঙের ফুল ফোটে। রঙের বৈচিত্র্যের কারণে এ ফুলের উজ্জ্বল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন উদ্যান, ছাদবাগান, বারান্দায় কম যত্নেই লাগানো যায়। অ্যাডেনিয়াম গাছটি খুবই খরা সহনশীল। এর কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখায় প্রচুর পানি ধারণ করে রাখতে পারে, যা খুব অল্প বৃষ্টিপাত ও খরার সময় ব্যবহার করে প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারে। বীজ থেকে চারা তৈরি করা হলে এর জাতের বৈশিষ্ট্য হুবহু ঠিক থাকে না। এজন্য গ্রাফটিং বা কলম করে মরু গোলাপের চারা তৈরি করা হয়।
পড়াশুনার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন অনলাইন দেখে অ্যাডেনিয়াম চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার বুড়িদহ গ্রামের সুলতান মাহমুদ জাহিদ। পড়াশুনা করছেন রাজশাহী কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান মাস্টার্স শেষ বর্ষে। বৈশ্বিক মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে বাসায় চলে আসেন। সেসময় রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করতেন। ২০২১ সালে অনলাইন থেকে ৩০০ পিস বীজ সংগ্রহ করে ১০ হাজার টাকা খরচে বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি শুরু করেন। যা থেকে খরচ বাদে লাভ আসে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
উদ্যোক্তা সুলতান মাহমুদ জাহিদ বলেন, বীজ থেকে চারা তৈরি করলে জাতের বৈশিষ্ট্য হুবহু ঠিক থাকে না। এজন্য গ্রাফটিং বা কলম করা হয়। এসব চারা ও গাছ অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হয়। এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাছ বিকিকিনির যেসব গ্রুপ আছে সেগুলোকে মাধ্যম হিসেবে নিয়েছি। এরপর কুরিয়া সার্ভিসের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, নার্সারিতে প্রায় আড়াই হাজার চারা ও মাদার গাছ রয়েছে। বীজের চারার দাম ৩০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। আর গ্রাফটিং চারা ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দাম, যার বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। তবে বিক্রয়যোগ্য চারা রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা।
নওগাঁ শহরের খাস-নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা বশির আহমেদ। তিনি একজন বনসাই নার্সারি ব্যবসায়ী। আগে সরকারি চাকরি করতেন। পাশাপাশি নার্সারি ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। অন্যান্য চারার পাশাপাশি নিজেই বাসার ছাদে অ্যাডেনিয়াম চারা ও গাছ তৈরি করেছেন। তার নার্সারিতে ১৪টি রঙের অ্যাডেনিয়াম ফুলের গাছ রয়েছে। অন্যান্য চারা বা গাছের তুলনায় কম পরিশ্রম এবং ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তিনি।
বশির আহমেদ বলেন, মরু গোলাপ চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ। এতে কয়েকদিন পানি না দিলেও সমস্যা নেই। সারা বছরই ফুল দেয়। বাগানে প্রায় দুই শতাধিক অ্যাডেনিয়াম গাছ আছে। অন্যান্য কয়েকটি গাছ বিক্রি করে যে লাভ হয় অ্যাডেনিয়াম গাছ একটি বিক্রি করে সেই পরিমাণ লাভ করা যায়। এই নার্সারির ওপর ভর করে আল্লাহর রহমতে সংসার চলছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ অফিসার একেএম মনজুরে মাওলা বলেন, অনেকেই এখন ছাদবাগানের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ছাদবাগানের একটি ভালো আইটেম হতে পারে অ্যাডেনিয়াম বা মরু গোলাপ। এটি খুবই সম্ভাবনাময় একটি উদ্ভিদ। অ্যাডেনিয়াম খরা-সহনশীল উদ্ভিদ হওয়ায় অনেকের কাছে এখন ছাদবাগানে শোভা বর্ধন হিসেবে স্থান পেয়েছে। অল্প পরিচর্যায় দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। এর বৈশিষ্ট্য ও বাহ্যিক গঠনপ্রকৃতি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
‘কাহো না প্যায়ার হ্যায়’ সিনেমা ছাড়েননি কারিনা, বের করে দেয়া হয় তাকে
তিনি বলেন, অ্যাডেনিয়ামের ফুল বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। এর গোড়ার দিকে বনসাইয়ের মতো। এ কারণে মানুষের কাছেও পছন্দের। শহরের নার্সারিগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে। তরুণ উদ্যোক্তারা অ্যাডেনিয়াম চাষ শখ থেকে এখন পেশায় পরিণত করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।