জুমবাংলা ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম ও ব্যাংকের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যাংকাররা। আন্দোলন ভবিষ্যতে ভয়াবহ আকার ধারণ করে কি না এমন ভীতি থেকে ব্যাংকের এটিএম এবং এজেন্ট পয়েন্টগুলো থেকে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা তুলে রাখছেন তাঁরা।
এলাকাভেদে কিছু এটিএম বুথে নেটওয়ার্ক জটিলতা থাকায় বুথের শাটার ফেলানো এবং টাকা শেষ হওয়ার ঘটনায় ব্যাংকের বুথ এবং এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে ছোটাছুটি এবং দৌড়ঝাঁপ করেছেন গ্রাহকরা। কেউ কেউ এক বুথ থেকে অন্য বুথে ছোটাছুটির পরেও টাকা তুলতে না পেরে খালি হাতে বাসায় ফিরেছেন।
গতকাল রাজধানীর দিলকুশা, পল্টন, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, মালিবাগ, কাকরাইল, কমলাপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর মতিঝিল, গোপীবাগ এলাকায় কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও আবাসিক এলাকাগুলোতে টাকা তোলার চাপ ছিল।
রাজধানীর পল্টন এলাকায় ন্যাশনাল ব্যাংকের এটিএম বুথে গিয়ে বন্ধ পান গ্রাহক জুবায়ের হোসেন।
পরে তিনি পাশেই এবি ব্যাংকের একটি বুথে গিয়ে দেখেন নেটওয়ার্ক কাজ করছে না। এতে তিনি বিরক্ত হয়ে যান। পরে দিশকুশার ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে দুই দফায় টাকা তোলেন। অসহযোগ আন্দোলন কোনদিকে মোড় নেয়, তা তো নিশ্চিত না।
এ জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকা তুলে রাখতে হচ্ছে। আর মানিকনগরে ওয়াসা রোডের বাসিন্দা নাসরিন আক্তার মানিকনগরে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট পয়েন্টে টাকা তুলতে যান। কিন্তু শাটার বন্ধ পান। পরে ইসলামী ব্যাংকের মানিকনগর বিশ্বরোডে অবস্থিত বুথে গেলে সেখানে নেটওয়ার্ক না থাকায় টাকা তুলতে পারেননি। পরে তিনি পাশে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে তোলেন।
আর রামপুরার গ্রাহক রাসেল মিয়া ব্র্যাক ব্যাংকের বুথে টাকা তুলতে পারেননি। পরে অগ্রণী ব্যাংকের বুথে যান। দেখেন শাটার ফেলা। অবশেষে নিরুপায় হয়ে টাকা না তুলেই বাসায় ফিরে যান তিনি।
ঢাকার কাকরাইলে ভিআইপি রোডে এবি ব্যাংকের বুথে টাকা তুলতে যান মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, এর আগে কারফিউকালে হঠাৎ ব্যাংক বন্ধ থাকায় নগদ টাকার সংকটে পড়তে হয়েছিল। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে নগদ টাকা বেশি করে তুলে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু এবি ব্যাংকের বুথে টাকা নেই। পরে মালিবাগ গিয়ে ইউসিবি ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
মানিকনগরে ইসলামী ব্যাংকের বুথে দায়িত্বরত প্রহরী আনোয়ার জানান, ব্যাংক বন্ধ থাকায় নেটওয়ার্ক ঠিক করতে হচ্ছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। যেকোনো সময় নেটওয়ার্ক জটিলতা কেটে যেতে পারে।
এদিকে কমলাপুরে ফুট ওভারব্রিজের কাছেই এবি এবং ইউসিবি ব্যাংকের বুথে টাকা ছিল না। তবে একটু দূরে বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় অবস্থিত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথে নেটওয়ার্ক ছিল। সেখানে টাকা তোলার লম্বা সারি দেখা গেছে। মাহবুবুল নামের একজন বুথ থেকে টাকা তোলেন এবং অন্য ব্যাংক হওয়ায় বাড়তি চার্জ কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি পল্টনে জনতা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা তোলার লম্বা লাইন দেখা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকিং স্বাভাবিক সময়ে চলবে। আতঙ্কের কিছু নেই। তবে গ্রাহকের আতঙ্কের কারণে বেশি টাকা তুললে সেটা নিয়ে কিছু করার নেই। ডিজিটাল লেনদেনের স্বার্থে ব্যাংকগুলোর বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশনা আগে থেকেই দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তবে যদি অস্বাভাবিক লেনদেন হয় সে ক্ষেত্রে তো সমস্যা হবে। আর নেটওয়ার্ক জটিলতার বিষয়টি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব বিষয়। আর কোনো ব্যাংকের লেনদেনসহ যাবতীয় অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর ভোল্টসহ সব শাখা-উপশাখায় নিরাপত্তা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এক দফা ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হবে। আর এক মিনিটও এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে না। এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।