মিজান চৌধুরী : খেলাপি ও অবলোপন ঋণ থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, নতুন ঋণ ও আমানত বাড়ানোকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মীদের যোগ্যতা হিসাবে দেখা হবে। এমন বিধান অন্তর্ভুক্ত থাকছে খসড়া ‘অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালায়’। নিজ নিজ ব্যাংকের কর্মীদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে আগে এ বিধান ছিল না। সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এ বিধান যুক্ত হচ্ছে। পাশাপাশি বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলায় চার্জশিটভুক্ত বা দণ্ডপ্রাপ্ত বা দণ্ড বহালসহ পাঁচ কারণ থাকলে কোনো কর্মী পদোন্নতি পাবেন না-এমন বিধানও থাকছে।
খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করতে আজ বৈঠক করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি)। এফআইডির সচিব নাজমা মোবারেকের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) অংশ নেবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংকের চাকরিজীবীদের পদোন্নতির অভিন্ন নীতিমালা চূড়ান্তকরণে বিলম্বের দোহাই দিয়ে ইতোমধ্যে জনতা ব্যাংক নিজস্ব পদোন্নতির নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে। যা এখনো কার্যকর হয়নি। ওই খসড়া নিয়ে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে কর্মীদের একপক্ষের মধ্যে। অভিযোগ রয়েছে, পদোন্নতির ফর্মুলায় রয়েছে অনেক অস্বচ্ছতা।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয় থেকে অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালা কার্যকর হলে ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা অকার্যকর হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে এ ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন না করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালার খসড়ায় বলা আছে, এটি কার্যকরের পর ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পদোন্নতি নীতিমালা কার্যকারিতা থাকবে না।
জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, এটি নিয়ে আজ একটি বৈঠকও আছে। এ নীতিমালায় কাঠামোগত বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। একশ নম্বর কাঠামোও ঠিক রাখা হয়েছে। এ নীতিমালা প্রণয়নের পর এটি পরিপালনে সব সরকারি ব্যাংক বাধ্য। তবে কোন ব্যাংক নিজস্বভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সেটি আমাদের জানানো হয়নি। সেখানে বড় ধরনের ঘাটতি থাকলে সেটি অবশ্যই হস্তক্ষেপ করা হবে। তিনি আরও বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে যে নম্বর বরাদ্দ তা সবার জন্য অভিন্ন রাখা হয়েছে। চাইলে ব্যাংকগুলো পৃথক নম্বর দিতে পারবে না।
জানা গেছে, ৬টি রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিকভাবে পদোন্নতি দিতে একটি সমন্বিত পদোন্নতি নীতিমালা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো হল-সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (বিডিবিএল)। এসব ব্যাংকের জন্য অভিন্ন নীতিমালা তৈরি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ব্যাংকগুলোর অফিসার বা সমমানের পদ থেকে শুরু করে সিনিয়র অফিসার, প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও), সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও), সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ও উপমহাব্যবস্থাপকদের (ডিজিএম) জন্য প্রযোজ্য হবে প্রস্তাবিত এই নীতিমালা। খসড়া নীতিমালা নিয়ে এফআইডির সচিব নাজমা মোবারেকের সভাপতিত্বে ইতোমধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে।
যেসব কারণে পদোন্নতি হবে না : কোনো কর্মচারীর ফিডার পদে সর্বশেষ ৩ বছরের যে কোনো বছরের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) বিরূপ মন্তব্য থাকলে। এছাড়া ওই বিরূপ মন্তব্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিমোচন করা না হলে পরবর্তী পদে পদোন্নতি হবে না। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা বা দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলার চার্জশিট দাখিল বা ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন থাকলে অথবা এরূপ কারণে কোনো কর্মকর্তা গ্রেফতার হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবেন না। এছাড়া পদোন্নতির জন্য চূড়ান্ত তালিকা অনুমোদিত হওয়ার পর কোনো কর্মচারীর নামে চার্জশিট দাখিল করা হলে পদোন্নতির প্যানেলের মেয়াদের মধ্যে আনীত চার্জশিট থেকে কোনোরূপ শাস্তি ছাড়া অব্যাহতি পেলে শূন্যপদ থাকা সাপেক্ষে তিনি পদোন্নতি পাবেন। সেক্ষেত্রে তার জন্য পদ সংরক্ষিত থাকবে। প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের মধ্যে তিনি চার্জশিট থেকে অব্যাহতি না পেলে বা শাস্তি পেলে ওই সংরক্ষিত পদে প্যানেল থেকে ক্রমানুসারে অন্য প্রার্থীকে পদোন্নতি দেওয়া হবে।
এছাড়া নিজ নিজ ব্যাংকের চাকরি প্রবিধানমালায় বর্ণিত বিধান অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিসহ প্রযোজ্য শর্তাদি পরিপালন করা হবে : সেটি হচ্ছে-লঘুদণ্ডের ক্ষেত্রে, দণ্ডাদেশের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ থেকে পরবর্তী ১ বছর পর্যন্ত পদোন্নতি বিবেচনা করা যাবে না।
পদোন্নতির জন্য মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮ নম্বর থাকবে মৌখিক পরীক্ষার জন্য। মৌখিক পরীক্ষার পাশ নম্বর ৪। বাকি ৯২ নম্বরের মধ্যে পদোন্নতিপ্রত্যাশী প্রার্থীকে কমপক্ষে ৭৫ পেতে হবে। উভয় নম্বর যোগ করে তৈরি করা হবে মেধাতালিকা। দেশের বাইরে থাকা কর্মীদের ভার্চুয়াল বা সশরীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।
নম্বর বিভাজন : পদোন্নতির জন্য নির্ধারিত ১০০ নম্বরের মধ্যে এসিআরের তিন বছরের গড় নম্বর ৪৫। এছাড়া শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ১৫ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাকরিজীবী স্নাতকোত্তর বা ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রিধারীর ক্ষেত্রে নম্বর হবে ১৫, তবে ৩ বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রিধারী পাবেন ১৪ এবং স্নাতক বা সমমান ডিগ্রির ক্ষেত্রে ১৩ নম্বর দেওয়া হবে। এছাড়া ফিডার পদে চাকরিকাল ১৫ নম্বর থাকছে। তবে বর্তমান গ্রেডের প্রথম তিন বছরের জন্য ৯ নম্বর, পরবর্তী প্রতিবছরের জন্য ১ নম্বর দেওয়া হবে। তবে ৬ মাস বা তার বেশি কিন্তু ১ বছরের কম সময়ের জন্য দেওয়া হবে ০.৫০ নম্বর। এছাড়া ফিডার পদে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতার ৪, ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষা (ব্যাংকিং ডিপ্লোমা) ১০, দুর্গম এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা ০১। এছাড়া শাখা ব্যবস্থাপক হিসাবে ফিডার পদে কাজের অর্জন ২ নম্বর বরাদ্দ থাকছে। তবে তাদের পেশাগত সূচকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অর্জিত মুনাফা বাড়ানো বা লোকসান কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। এছাড়া আমানতের প্রবৃদ্ধি, ঋণের প্রবৃদ্ধি (নতুন ঋণ বৃদ্ধির পরিমাণ), শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় (প্রযোজ্য না হলে, পূর্ণ নম্বর পাবেন), অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন (প্রযোজ্য না হলে, পূর্ণ নম্বর পাবেন) করতে হবে। যে শাখায় ফিডার পদে শাখা ব্যবস্থাপক হিসাবে কর্মকালীন সংঘটিত অনিয়মের অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে দণ্ডপ্রাপ্ত সময়কালের জন্য কোনো নম্বর দেওয়া হবে না। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।