ছা‌দ বাগানে কৃ‌ষি ঋণ দেবে ব্যাংক

জুমবাংলা ডেস্ক : চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষকদের ঋণ দেওয়ার জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। রবিবার (৬ আগস্ট) নতুন অর্থবছরের জন্য ‘কৃ‌ষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালা’ এবং কর্মসূচি আনুষ্ঠা‌নিকভা‌বে ঘোষণা ক‌রে‌ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ। এতে নতুন কৃষকদের অগ্রাধিকার দিয়ে ঋণ বিতরণ কর‌তে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, এখন থে‌কে ছা‌দ বাগান কর‌লে সহজ শ‌র্তে ও স্বল্প সু‌দে কৃ‌ষি ঋণ পা‌বেন গ্রাহকরা।

এ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা ক‌রেন বাংলা‌দেশ ব্যাংকের ডেপু‌টি গভর্নর এ কে এম সা‌জেদুর রহমান খান। ঘোষিত কৃ‌ষিঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন ধরনের কৃষিকাজ করা একটি নতুন ধারণা, বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বাড়ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাকসবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয় তা ছাদ বাগান হিসেবে পরিচিত। আর যাদের চাষের জন্য পর্যাপ্ত জমি নেই, কিন্তু নিজ হাতে কৃষিকাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য ছাদকৃষি একটি উত্তম বিকল্প ব্যবস্থা।

শহরাঞ্চলে বাড়ির ছাদে বাগান সৃষ্টির মাধ্যমে পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্যের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি ছাদকৃষি পরিবেশ রক্ষা ও বায়ুদূষণ প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এ কারণে ছাদকৃষিতে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হ‌য়ে‌ছে। এ খা‌তের ঋণ দেওয়ার জন্য গ্রাহ‌কের চা‌হিদা যাচাই-বাছাই ক‌রে ব্যাংক কত টাকা ঋণ দে‌বে এবং কীভা‌বে আদায় কর‌বে তা নির্ধারণ কর‌বে।

নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে, পল্লি অঞ্চলে কৃষি থেকে আয় আসবে এমন কর্মকাণ্ডে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা হ‌বে ৫ লাখ টাকা। এছাড়া ভেনামি চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে ঋণ বিতরণ কর‌তে পার‌বে ব্যাংক। মৎস্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩ শতাংশ এবং প্রাণিসম্পদ খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ কর‌তে হ‌বে।

বাংলাদেশ ব্যাং‌কের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতর‌ণের লক্ষ্য ঠিক ক‌রা হয়ে‌ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।

এবার কৃষি ও পল্লি ঋণের চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৩০ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ২১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা কৃষি এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক এক হাজার ৪৭ কো‌টি টাকা পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণ করেছে, যা অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি, ১০৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮১১ জন কৃষি ও পল্লি ঋণ পেয়েছেন। এরমধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৫ জন ঋণ পে‌য়ে‌ছেন। ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৩ জন নারী মোট ১২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লি ঋণ পেয়েছেন।

এছাড়া গত অর্থবছরে ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২২ হাজার ৪০২ কোটি টাকা এবং চর, হাওর ও অনগ্রসর এলাকার ৩ হাজার ৪৪৯ জন কৃষক প্রায় ১৮ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। বা‌ণি‌জ্যিক ব্যাংকগু‌লোর লক্ষ্যমাত্রার বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) তাদের নিজস্ব অর্থায়নে যথাক্রমে ২৬ কোটি ও ১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগু‌লো‌কে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) এবং ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হবে। আগে তা ছিল ৩০ শতাংশ।

রাজধানীর বাজারগুলোতে এক লাফে ১০ টাকা বেড়েছে ডিমের দাম