লাইফস্টাইল ডেস্ক : আমের ভরা মৌসুম চলছে। গাছে গাছে দেখা যাচ্ছে আমের সমারোহ। ব্যবসায়ীরা তা ঝুড়ি আর বস্তায় ভরে সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমার থেকেই আম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক কারণেই আমাদের দেশে আম খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। যার মধ্যে রয়েছে হিমসাগর, খিরসাপাতি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ফজলি, রানী-পছন্দ, আম্রপালি ও আশ্বিনা। যা বছরের একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে পাওয়া যায়।
যদিও আমের মতো রসালো ও মিষ্টি একটি ফল, যা কেবল খেতেই অনন্য নয়, যার পুষ্টিগুণও অসীম, আমি নিশ্চিত সেটি বারো মাস খেতে চাইবেন অনেকেই। দেশে মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চার মাসকে সাধারণত আমের মৌসুম হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক তামান্না হক বলেন, দেশে আমের জনপ্রিয় জাতগুলো মূলত গ্রীষ্মকালেই পাওয়া যায়, কখনো বর্ষাকালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয় আমের ব্যাপ্তি।
মূলত পরিবেশগত কারণে ১২ মাস আমের ফলন হয় না আমাদের দেশে।কারণ দেশে জনপ্রিয় জাতের আম গাছগুলোতে ফুল থেকে মুকুল আসা থেকে ফল হওয়া পর্যন্ত সময়ে যে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা প্রয়োজন, সেটি অন্য সময়ে পাওয়া যায় না।তিনি বলেন, সাধারণত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আমে মুকুল আসে, ওই সময়টাতে বৃষ্টিপাত হয় না এবং বাতাসে আর্দ্রতা কিছুটা কম থাকে, আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।
যে কারণে ওই সময়টা আমের মুকুলের পুষ্ট হতে সাহায্য করে। ওই সময়ে বৃষ্টি হলে পরাগরেণু ধুয়ে যেত।তামান্না হক আরো বলেন, এরপরেই আবার এপ্রিল থেকে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়, ওই বৃষ্টিও আমের জীবন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয়। আমের মুকুল আসা থেকে ফল পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত যে সময়, সেটা অন্যান্য দেশের চেয়ে কিছুটা বেশি আমাদের দেশে। এটি আমাদের আমের বৈশিষ্ট্য।
এ কারণে জনপ্রিয় জাতসমূহ মানে হিমসাগর, ল্যাংড়া বা ফজলি বারোমাস উৎপাদন সম্ভব নয়।বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়ে যেসব আম উৎপাদন হয় সেগুলোতে বছরে একবার ফুল আসে, ফলে বছরজুড়ে ফল হবার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ৮৫ লাখ টাকার আম আমদানি হয়েছে।
ফলে দেশের কৃষি বিজ্ঞানী এবং চাষিরা চেষ্টা করছেন বারোমাসি আমের উদ্ভাবন করতে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের গবেষণায় একটি নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যেটি বারো মাস ফল দেয়।কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটেরপরিচালক কবিতা আনজুমান আরা বলেন,
বারি-১১ জাতের এই আম বাংলাদেশের প্রথম বারোমাসি আম। আমটি প্রথম ২০১৫ সালে অবমুক্ত করেন বিজ্ঞানীরা।সরকারের কৃষি বাতায়নে বারি-১১ জাতের আমের বৈশিষ্ট্য হিসেবে লেখা হয়েছে, আমের এই জাতটি প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়নের ফলে সৃষ্ট। এটি একটু লম্বাটে দেখতে এবং প্রতিটি আমের গড় ওজন ৩০০-৩৫০ গ্রাম। বারি আম-১১-এর এক বছর বয়সী গাছে মুকুল আসে।
এ জাতের চার থেকে পাঁচ বছর বয়সী গাছ থেকে প্রতিবার ৬০ থেকে ৭০টি আম আহরণ করা যায়। উচ্চ ফলনশীল এই জাতটি দেশের সব এলাকায় চাষ উপযোগী। বারি-১১ ছাড়াও এই মূহুর্তে আরো কয়েকটি জাতের আমের চাষ করার চেষ্টা চলছে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, তাদের একটি প্রকল্প আছে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন নামে, যার মাধ্যমে আমসহ বিভিন্ন ফলের নতুন নতুন জাতের সম্প্রসারণের কাজ করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। ইতোমধ্যেই থাইল্যান্ডের বারোমাসি আম কাটিমনসহ কয়েকটি জাত স্থানীয় পর্যায়ে চাষ করার চেষ্টা করছেন চাষিরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।