জুমবাংলা ডেস্ক : বাড়ি তৈরির জন্য টাকা জমিয়ে আট শতক জমি কিনেছিলেন অটোরিকশাচালক জামাল উদ্দিন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী মরিয়ম আক্তার দম্পতি। একপাশে ছাপরা তুলে তিন মেয়ে ও মাকে নিয়ে বসবাস করছিলেন জামাল। স্ত্রী চাকরি করেন ঢাকায়। আশা ছিল, দ্রুতই বড় করে বাড়ি করবেন। কিন্তু এর আগেই ওই ঘরে বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান জামালসহ পরিবারের চার সদস্য। সেই জমিতেই আজ রবিবার সকালে তাঁদের দাফন করা হয়েছে।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীর ঘোষপালা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন জামাল উদ্দিন। গতকাল শনিবার বাড়িতে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন—জামাল উদ্দিন (৪০), তাঁর মা আনোয়ারা বেগম (৭০) এবং জামালের দুই মেয়ে ফাইজা মনি (৭) ও আনিকা (৫)।
আজ সকাল ১০টায় নিহত ব্যক্তিদের বাড়ির সামনে থাকা ফসলি জমিতে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামের লোক ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে জানাজায় অংশ নেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আজ সকাল থেকে জামালের বাড়ির চারপাশ ছিল লোকারণ্য। জানাজা শেষ হওয়ার পর একে একে চারজনের মরদেহ চারটি কবরে নামানো হয়। মাঝখানে জামালের দুই মেয়েকে রেখে দুই পাশে জামাল ও তাঁর মা আনোয়ারাকে শায়িত করা হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন হাতে করে মাটি নিয়ে কবরে ফেলছেন। আবার কেউ কেউ অশ্রুসিক্ত চোখে হাত দিয়ে কবরের মাটি সমান করে দিচ্ছিলেন।
ঘোষপালা আমলীতলা বাজারের বাসিন্দা মো. কামাল উদ্দিন বলেন, বাড়ি নির্মাণের জন্য কেনা জমিতে জামাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কবর দিতে হলো।
দুর্ঘটনার সময় বেঁচে যাওয়া একমাত্র শিশু জান্নাতুল মারুফাকে (৯) কবরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বাবা, ছোট দুই বোন ও দাদির চিরবিদায়ের সময় তাঁর চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝরছিল। এ দৃশ্য দেখে স্বজন ও প্রতিবেশীদের অনেকে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কান্নার শব্দে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। স্বজনদের কেউ কেউ মারুফাকে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও কবরের সামনে থেকে তাকে সরানো যাচ্ছিল না।
জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি করেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। স্বামী–সন্তানদের মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল রাতে বাড়ি আসেন তিনি। সেই থেকে সব হারানো মরিয়ম কেঁদে চলেছেন। মরিয়ম বলেন, স্বামী-স্ত্রীর আয় দিয়ে জমি কিনেছিলেন। সেই জমিতে বাড়ি বানাতে পারেননি। এখন তাঁকে ছেড়ে সবাই চলে গেলেন। তাঁর তো কেউ রইল না। এ কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে তিনি মূর্ছা যান।
এক পরিবারের চারজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান ও আজ সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে আসেন।
জামাল উদ্দিনের ঘরের ভেতরে শোবার খাট পাতা রয়েছে। পাশে ধান-চালের বস্তা ও সংসারের নানা জিনিসপত্র। খাটের পাশে একটি ইজিবাইক রয়েছে। লোকজন জানান, ইজিবাইকটি এখানে রেখে বিদ্যুৎ–সংযোগের সহায়তায় ব্যাটারি চার্জ করতেন জামাল উদ্দিন।
অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া জামালের বড় মেয়ে জান্নাতুল মারুফা জানায়, সে গতকাল দুপুরের পর ঘরে ঢুকে দেখতে পায় বাবা, দাদি ও ছোট দুই বোন ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তখন সে দাদির শরীরে ধাক্কা দেয়। এ সময় সে (মারুফা) প্রচণ্ড ঝাঁকি খেয়ে ঘরের এক কোণে গিয়ে ছিটকে পড়ে। তখন দাদি বলে চিৎকার করতে থাকলে কিছুটা দূরে পুকুরে গোসলরত বড় চাচা নুরুল হক ছুটে আসেন।
নুরুল হক জানান, তিনি এসে শুকনা বাঁশ দিয়ে আঘাত করে বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করেন। বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ হওয়ার পর ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান তাঁর মা, ছোট ভাই ও দুই ভাতিজির কেউ বেঁচে নেই। তাঁর ধারণা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর একে অপরকে বাঁচাতে গিয়ে সবাই প্রাণ হারিয়েছেন।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.