ঘর ঝকঝকে রাখা কঠিন কাজ। বিশেষ করে যখন ব্যস্ততা থাকে চরমে। কিংবা যেসব জায়গা চোখে পড়ে না, সেগুলো সহজেই ভুলে যাওয়া হয়। তবে ঘরের এমন কিছু স্থান বা জিনিস রয়েছে, যা মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার না করলে তা কেবল দুর্গন্ধ বা ময়লা জমার কারণ হয় না, বরং বাসার স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ায়।
নিয়মিত দরজার হাতল, লাইটের সুইচ, টুথব্রাশ হোল্ডার কিংবা মাইক্রোওয়েভ পরিষ্কার করা হয়। তবে এর বাইরেও কিছু অবহেলিত জায়গা আছে, যেগুলোকে একেবারেই ভুলে যাই।
পরিচ্ছন্নতা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বস্তু বা জায়গা যা মাসে অন্তত একবার পরিষ্কার না করলে ঘর স্বাস্থ্যকর থাকবে না।
সিলিং ফ্যানের ব্লেড
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পার্কলি মেইড অস্টিন–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোফিয়া মার্টিনেজ রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ঘর পরিষ্কারের সময় তিনি প্রথমেই নজর দেন সিলিং ফ্যানের ব্লেডের দিকে।
তার ভাষ্য, “সিলিং ফ্যান চালু থাকলে ধুলাবালি ব্লেডে আটকে থাকে না, বরং তা বাতাসে উড়ে ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বিছানা, টেবিল এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়েও শরীরে ঢুকে পড়ে। যাদের অ্যালার্জি বা হাঁপানির সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক।”
তার পরামর্শ, “মাসে অন্তত একবার মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে ফ্যানের ব্লেড মুছে নিলে ধুলার পরিমাণ কমে এবং ঘরের বাতাস থাকে পরিষ্কার ও সুগন্ধময়।”
পরিষ্কার করার সরঞ্জাম
পরিষ্কার করতে গিয়ে যে কাপড় বা স্পঞ্জ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটিই যদি ময়লা বা জীবাণুতে ভর্তি থাকে তাহলে ময়লা আরও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে কানাডাভিত্তিক ‘গো-ক্লিনকো’ এবং ‘হাউস ওয়ার্ক’–এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সারা ম্যাকঅ্যালিস্টার বলেন, “মপ, স্পঞ্জ, ব্রাশ ইত্যাদি যদি দীর্ঘদিন না ধুয়ে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা কার্যত জীবাণুর বাহক হয়ে দাঁড়ায়। মাসে একবার এসব সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং যেগুলো একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলো ফেলে দিতে হবে।”
ওয়াশিং মেশিনের অংশ
জামাকাপড় পরিষ্কার করার যন্ত্রটি নিজেই যদি অপরিষ্কার থাকে, তাহলে কাপড়ও কি পুরোপুরি পরিষ্কার হবে?
কানাডাভিত্তিক অ্যাসপেনক্লিন নামক একটি পরিচ্ছন্নতা পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী অ্যালিসিয়া সোকলোভস্কি বলেন, “ওয়াশিং মেশিনের ডিটার্জেন্ট রাখার ড্রয়ার এবং রাবারের সিলগুলোতে খুব সহজেই ডিটার্জেন্ট জমে থাকে, আবার ছাঁচ বা ছত্রাকও জন্মাতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, “মাসে একবার ড্রয়ার ও রাবার গ্যাসকেট পরিষ্কার করলে দুর্গন্ধ এবং জীবাণু দূর হয় এবং কাপড় পরিষ্কার রাখার কার্যকারিতা বাড়ে।”
ময়লার ঝুড়ির ঢাকনা
ময়লার ঝুড়ির ব্যাগ তো নিয়মিত পরিবর্তন করা হয়। তেবে ঢাকনা ও ব্যাগের নিচের অংশ পরিষ্কার করতে ভুলে যাওয়া হয়।
সোফিয়া মার্টিনেজ বলেন, “ঢাকনার ভেতর এবং ব্যাগের নিচে অনেক সময় আঠালো পদার্থ, খাবারের টুকরা জমে থাকে, যা ধীরে ধীরে দুর্গন্ধ এবং ব্যাক্টেরিয়ার আকারে ছড়িয়ে পড়ে।”
তিনি পরামর্শ দেন, “মাসে অন্তত একবার গরম পানি ও সাবান দিয়ে ঢাকনা ও ভেতরের অংশ ধুয়ে ফেলুন এবং পুরোপুরি শুকিয়ে নিন নতুন ব্যাগ লাগানোর আগে।”
সারাদিনে কতবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়, তার হিসাব নেই। তবে এটা পরিষ্কার করার কথা মনে থাকে না।
একটি গবেষণায় অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় দেখিয়েছে, গড়ে একটি মোবাইল ফোনে একটি টয়লেট সিটের চেয়ে ১০ গুণ বেশি জীবাণু থাকতে পারে।
সারা ম্যাকঅ্যালিস্টার বলেন, “মোবাইল ফোন সর্বত্রই সঙ্গে থাকে। এমন কি বাথরুমেও! এর গায়ে জমে থাকে ত্বকের তেল, ধুলাবালি, জীবাণু এবং নানান ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া।”
তিনি পরামর্শ দেন, “সাপ্তাহিকভাবে মোবাইল পরিষ্কার করা উচিত। তবে কমপক্ষে মাসে একবার স্ক্রিন–সেফ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করলেও ত্বকে ব্রণ হওয়া বা জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।”
রিইউজেবল বা পুনঃব্যবহারযোগ্য বাজারের ব্যাগ
পরিবেশ সচেতনতার কথা ভেবে পুনারায় ব্যবহারযোগ্য বাজারের ব্যাগ ব্যবহার করা উচিত। তবে এই ব্যাগ কতটা পরিষ্কার থাকে?
অ্যালিসিয়া সোকলোভস্কি জানান, “এই ব্যাগগুলো সাধারণত সুপার শপের ট্রলি, গাড়ির ডিকি বা রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে থাকে। এছাড়া কাঁচা মাংস, মাছ বা সবজির কারণে এগুলোর মধ্যে জীবাণু বাসা বাঁধে।”
তিনি বলেন, “ব্যাগগুলো মাসে একবার ধুয়ে ফেললে ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ কমে এবং ‘ক্রস কনটামিনেশন’ (এক পণ্যের জীবাণু অন্য পণ্যে ছড়িয়ে পড়া) রোধ করা যায়।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।