লাইফস্টাইল ডেস্ক : এক দিন পর শুরু হচ্ছে মাঘ মাস। আর পৌষ শেষ হচ্ছে শীতের প্রচণ্ড দাপটে। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে চলছে শৈত্যপ্রবাহ, যা কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশে চলমান শীতের এই দাপটের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে গোসল করা না করা নিয়ে আলোচনা। ফেসবুকে ১০ জানুয়ারি ‘প্রতিদিন গোসল করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর!’ শীর্ষক ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দাবি করা হচ্ছে, ‘প্রতিদিন গোসল করলে আমাদের শরীরে থাকা ভালো কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়, যার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাই দুই থেকে তিন দিন পর পর গোসল করা উচিত।’ প্রতিদিন গোসল করা আসলেই কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? এই পরামর্শ কি সবার জন্যই প্রযোজ্য?
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন জানায়, অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। দ্বন্দ্ব থাকলেও প্রতিদিন গোসল করা নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা একমত পোষণ করেন। প্রথমত, প্রতিদিন গোসল আবশ্যক নয়। আবার এতে ক্ষতিও নেই। যদি কেউ ঘর্মাক্ত, নোংরা বা অপরিষ্কার বোধ করেন, তবে এসব ক্ষেত্রে প্রতিদিন গোসলে কোনো সমস্যা নেই। গোসল করার বিষয়টি মূলত নির্ভর করে শারীরিক অনুভূতির ওপর।
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জয়েস পার্ক প্রতিদিন গোসল করা প্রয়োজন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, গোসলের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। তাই সবার জন্য এক সমাধান দেওয়া যাবে না। গোসলের প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে মূলত ব্যক্তির ত্বক ও চুলের ধরন, কী পরিমাণ ঘামছে অথবা শরীর কতটুকু নোংরা হয়েছে, তার ওপর। তবে জয়েস পার্ক বলেন, খুব ঘন ঘন গোসল ত্বককে শুষ্ক করে দিতে পারে। ত্বকের লালচে ভাব, চুলকানি আরও খারাপ করে দিতে পারে।
নিউইয়র্ক শহরের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ মারিসা গারশিক একই সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কেউ কেউ প্রতিদিন গোসলে সাবান ব্যবহারে উপকার পান। উদাহরণস্বরূপ কেউ যদি প্রচুর ঘামেন, সেই ঘাম থেকে পরিচ্ছন্ন হতে গোসল করা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিন গোসল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নেভারাস্কা—লিংকনের হেলথ সেন্টারের ওয়েবসাইটে বলা হয়, এর উত্তর ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। ত্বকের অবস্থার ওপর নির্ভর করে ঘন ঘন গোসল করা প্রয়োজন কি না। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, কারও ত্বক যদি শুষ্ক হয় এবং চর্মরোগ থাকে, তাহলে তাঁর প্রতিদিন গোসল প্রয়োজন নেই। অপরদিকে যদি ত্বক তৈলাক্ত হয়, তাহলে ওই ব্যক্তি ঘন ঘন গোসল করতে পারে। যদি কারও ব্রণের সমস্যা থাকে, তবে তার প্রতিদিন বা দিনে কয়েকবার গোসল করা এবং মুখ ধোয়া উচিত।
ওয়েবসাইটটিতে আরও বলা হয়, প্রতিদিন গোসল করা ব্যক্তির পছন্দের ওপরও নির্ভর করে। যদি কেউ প্রতিদিন গোসলে স্বচ্ছন্দ বোধ করে, তাহলে তাঁর সেটাই করা উচিত। কেউ চাইলে গোসল থেকে কয়েক দিন বিরতও থাকতে পারে। তবে সেটা যেন দুই থেকে তিন দিনের বেশি না হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় দ্য ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির ওয়েক্সনার মেডিকেল সেন্টার জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে অধিকাংশ মানুষ প্রতিদিনই গোসল করে। আবার কোনো কোনো দেশে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার বা তার চেয়ে কম গোসল করে। অনেক সময় এটি অভ্যাস এবং আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারণ, প্রতিদিনের গোসল মানুষকে সতেজতা দেয়, শরীরের গন্ধ এড়াতে এবং পেশি শিথিলতায় সাহায্য করে। একই সঙ্গে ওয়েবসাইটটিতে প্রতিদিন গোসল করা এবং না করার প্রভাব নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটটি জানায়, ঘন ঘন গোসলের ফলে ত্বক শুষ্ক এবং চুলকানিযুক্ত হয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে যদি গোসলে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করা হয়। আবার ঘন ঘন গোসল না করলে কারও কারও ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেউ যদি দৈনিক গোসলে অভ্যস্ত হয়, তাহলে ওই ব্যক্তি সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত গোসল করতে পারে। এটি সম্ভবত বেশির ভাগ মানুষের জন্যই ভালো। প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার গোসল করাও সম্ভবত স্বাস্থ্যকর এবং পরিবেশের জন্যও ভালো। সর্বোপরি, গোসল করার সময় নিয়ে কোনো সর্বসম্মত মত নেই।
একই মত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংও। গোসল করার আদর্শ কোনো সময় নেই। বিশেষজ্ঞরা অধিকাংশ ব্যক্তির জন্য সপ্তাহে একাধিকবার গোসল করার পরামর্শ দেন। যদি না ওই ব্যক্তি ঘর্মাক্ত, নোংরা বোধ করেন।
স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদ ও তথ্য প্রকাশকারী আমেরিকান করপোরেশন ওয়েব এমডিও এমন প্রশ্নের উত্তরে জানায়, অনেক চিকিৎসক প্রতিদিন গোসল করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে এর উত্তর ব্যক্তির ত্বক ও তাঁর জীবনযাপনের ওপর নির্ভর করে। কেউ যদি তীব্র গরমে দীর্ঘক্ষণ কাজ করে, দৌড়ায় বা মোটরবাইক চালায়—এমন ব্যক্তির গোসলের প্রয়োজনীয়তা শীতল পরিবেশ বা গৃহাভ্যন্তরে কাজ করা ব্যক্তির চেয়ে বেশি। আবার কোনো কোনো ব্যক্তির জন্য স্বাস্থ্য রক্ষায় সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার গোসলেই যথেষ্ট।
উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও ওয়েব এমডি জানায়, প্রতিদিনের গোসলের পেছনে আরও কিছু বিষয় কাজ করে। কারও যদি নির্দিষ্ট কোনো অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বা বিশেষ করে ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তাহলে ঘন ঘন গোসল করাই ভালো। আবার ত্বকের কিছু নির্দিষ্ট অবস্থার জন্য ব্যক্তিভেদে গোসলের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হতে পারে।
ওয়েস্ট সাইড মাউন্ট সিনাই ডার্মাটোলজি ফ্যাকাল্টি প্র্যাকটিসের ডিরেক্টর ড. অ্যাঞ্জেলা ল্যাম্ব যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টুডেকে বলেন, গোসলের নির্দিষ্ট সময় নিয়ে বাস্তব কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এটি বেশির ভাগই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। তবে দিনে একাধিকবার গোসল করা উচিত নয়।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাঙ্গোন হেলথের চর্মরোগের সহযোগী অধ্যাপক ডার্মাটোলজিক্যাল সার্জন মেরি স্টিভেনসনও সংবাদমাধ্যমটিকে একই মত দিয়েছেন। তিনি বলেন, কারও কত ঘন ঘন গোসল করা উচিত, তা ওই ব্যক্তির ত্বক, বয়স, কাজের ধরনসহ অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, কারও প্রতি দুই থেকে তিন দিনে গোসল বা নিজেকে পরিষ্কার করা উচিত। তবে কোনো ব্যক্তি যদি এমন কাজে যুক্ত থাকেন, যেখানে তিনি প্রচুর ঘামছেন, তবে তাঁকে আরও ঘন ঘন গোসল করতে হতে পারে।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ‘প্রতিদিন গোসল করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর!’ এই তথ্য সবার জন্য ঢালাওভাবে প্রযোজ্য নয়। গোসলের নির্দিষ্ট সময় নিয়ে বাস্তব কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। আবার ঘন ঘন গোসলের অপকার যেমন আছে, তেমনি ঘন ঘন গোসল না করারও ক্ষতি আছে।
সর্বোপরি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যক্তির পেশা, জীবনযাপনের ধরনসহ নানা কারণে একজন ব্যক্তিকে দৈনিক গোসল করতে হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।