জুমবাংলা ডেস্ক : মোহাম্মাদপুর কৃষি মাকেটে গতকাল বুধবার (১৬ অক্টোবর) বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সারওয়ার জাহান বলেন, বাজারে সব পণ্যের দামই বেড়েছে। আমাদের মত নিম্নমধ্যবিত্তের বেঁচে থাকার উপায় নেই। আগে বলা হত সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন তো দলীয় সরকার নেই। এখন কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কোথায় গলদ?
নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেই বার বার বলা হচ্ছে সিন্ডিকেটের কথা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া সাধারণ ভোক্তা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই বাড়ছে নিত্যপণের দাম। কোনো দলীয় সরকারই এ সিন্ডিকেটের কবল থেকে বের হতে পারেনি। সাধারণ মানুষের একটাই প্রশ্ন ‘সিন্ডকেট কি সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী’।
ক্রেতাদের অভিযোগ, আগে একটা-দুইটা পণ্যের দাম বাড়লেও অন্যপণ্যের দাম কম ছিল। এবার একসঙ্গে বেড়েছে ১২ পণ্যের দাম। বলা হচ্ছে সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে।
ক্রেতারা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্নে রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক সপ্তাহে, অর্থাৎ ৭ থেকে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে ১২টি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে সয়াবিন তেল, পাম তেল, চালের কুঁড়ার তেল বা রাইস ব্র্যান অয়েল, আলু, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, দারুচিনি, ধনে, গরুর মাংস ও ডিম।
মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে ডিমের দাম বেড়েছে জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আলীম আখতার খান বলেছেন, ডিমের বাজারে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। ১৫ অক্টোবর ভোক্তার ডিজি আরও বলেন, উৎপাদন পর্যায়ে থেকে পাইকারি পর্যায় পর্যন্ত সরাসরি ডিম সরবরাহ করা হবে। ডিমের সরকারি খুচরা মূল্য ১১.৮৭ টাকা নির্ধারণকে সঠিক বলেছেন করপোরেট কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা।
সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না ডিম। খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিম পাওয়া যাওয়ার কথা ৪৮ টাকায়। কিন্তু এই দামে ডিম পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
জানা গেছে, ঢাকাসহ চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ডিমের আড়তগুলোতে মধ্যে অধিকাংশ আড়ত বন্ধ। হাতে গোনা দুই একটি আড়ত খুললেও ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে এই ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, বেশি দামে কেনা ডিম সরকার নির্ধারিত দরে কীভাবে বিক্রি করব।
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাজারে ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে এটা ঠিক। এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কথা বলে পার পাওয়া যাবে না। তবে বাজারে পণ্যের সরবরাহ যাতে বাড়ে ও দাম কমে আসে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী গতকাল বুধবার (১৬ অক্টোবর) বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঢিলেঢালাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এভাবে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারকে সঠিক একটি রূপরেখা তৈরি করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, ফ্যাসিবাদী সরকার বিদায়ের পর জনমতের সরকার এসেছে; কিন্তু তারপরও তাদের শক্তিশালী ভূমিকা নজরে আসছে না। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম ইতিহাস গড়েছে। মনে হয় দেশে দুর্ভিক্ষ লেগেছে। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে অসুবিধা কোথায়, সিন্ডিকেটে কারা জড়িত? ১৪ অক্টোবর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ইউনুছ আহমাদ বলেন, কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না, জিনিসপত্রের দাম কমছে না। জাতি জানতে চায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, কারওয়ান বাজারে ডিম ট্রাকে থাকা অবস্থাতেই চারবার হাতবদল হয়। এখন পর্যন্ত এই সরকার কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। শুধু সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে। সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এই অভ্যুত্থানের প্রাথমিক মাহাত্ম্য কী?।
ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেছেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের দোসর লুটেরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। তারাই এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে কোনো কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবিলম্বে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।’
পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির জন্য নয়; নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বিগত সরকারের আমলের ন্যায় বর্তমানেও বহাল তবিয়তে থাকা সিন্ডিকেটের কারণে। এমনও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান বলেছেন, ঢাকায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিআরটিএ মিটিং ছিল। সেখানে আমরা বলেছি, এখন পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি হচ্ছে না। পুলিশ, শ্রমিক নেতা কিংবা দলীয় কোনো পারপাসে চাঁদাবাজি নেই।
ট্রাক ভাড়াও আগের চেয়ে কমেছে। তারপরও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন? এটা আসলে সিন্ডিকেটের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে বড় বড় যে সকল সিন্ডিকেট ছিল, তারা এখনো রয়েছে। আর তাদের মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম দিনকে দিন বাড়ছে।
উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, সিন্ডিকেট শনাক্ত এবং ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। যদি সিন্ডিকেটের বিষয়ে কোনো তথ্য থাকে, কারা দাম বাড়াচ্ছে এবং একচেটিয়া ব্যবসা করছে তা আমাদের জানান। সরকার অবশ্যই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেছেন, বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে ছাত্র-জনতাকে আবারো সক্রিয় হতে হবে। সরকার পতনের পর ছাত্ররা যেভাবে বাজার তদারকি করেছিল, সেটি আবারও নিয়মিত করা যেতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। এখনই সময় বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলার।
বাজারে দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির কোনো সংস্কার কার্যক্রম নেই উল্লেখ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) নেতৃদ্বয় প্রশ্ন তুলেছেন, বাজার সিন্ডিকেট এখনো ভাঙছে না কেন? তারা বলেছেন, ফ্যাসীবাদী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলেও নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব এখনো বিদ্যমান আছে।
এই গ্রামের নারীদের ৭০ বছরেও থাকে ভরা যৌবন, দেখতে হুবহু ১৬ বছরের তরুণীর মতো
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, ব্যবসায়ীরা বরাবরই সুযোগসন্ধানী। সিন্ডিকেট শুধু খোলস আর কৌশল পাল্টেছে, স্বভাব বদলায়নি। সিন্ডিকেটে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে এখনই সময় সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।