জুমবাংলা ডেস্ক : বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার সমাজের সব জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এর আওতায় বেদে সম্প্রদায়সহ অন্য যে জনগোষ্ঠী আছে তাদের নিয়েও সরকার কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে তাদের আমাদের কাছে আসতে হবে এবং সমস্যাগুলো বলতে হবে।’
আধুনিক সমাজে পিছিয়ে পড়া একটি জনগোষ্ঠীর নাম বেদে সম্প্রদায়। পথে পথেই যাদের কেটে যায় পুরোটা জীবন। শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপদ বাসস্থান তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। বর্তমান সমাজের সঙ্গে এগিয়ে চলতে এদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে সমাজের মূলধারায় ফিরতে চান।
তাদের শিশুরাও স্বপ্ন দেখে পরিবর্তনের, হতে চায় চিকিৎসক ও শিক্ষক। প্রয়োজনীয় সরকারি সুযোগ সুবিধার অভাবে কোথাও স্থায়ী হতে পারছেন না তারা। কেউ খোঁজও নেয় না; পায় না কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা- এমনটাই অভিযোগ তাদের।
বাগেরহাটের ফকিরহাটের কাটাখালি ও সদর উপজেলার মুনিগঞ্জ অস্থায়ী বেদে পল্লিতে গিয়ে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে।
তারা জানান, একটা সময় ছিল যখন বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা উপকূলীয় এলাকাগুলোতে নৌকায় চলাচল করতেন, তবে সে সব এখন অতীত হতে চলেছে। অধিকাংশ বেদেরা এখন নৌকা বাদ দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় এক থেকে দুই মাস অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে বাগেরহাট সদর, ফরিহাট ও মোল্লাহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন একাধিক বেদেবহর। এসব বহরের লোকেরা পলিথিনের অস্থায়ী ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে যাযাবর জীবন বাদ দিয়ে সমাজে স্বাভাবিক ভাবে বসবাস করতে চান।
বাগেরহাটে বসবাস করা অনেকেই ভাড়া বাসায় ও জমি কিনে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করলেও কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার সেটাও হয়ে উঠছে না বলে অভিযোগ তাদের।
কাটাখালি বেদে পল্লির সর্দার ইস্রাফিল হাওলাদার বলেন, ‘দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এই কাটাখালি বেদে পল্লিতে আমি বসবাস করি। আমাদের এখানে ২০টি বেদে ঘর রয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫০টি অস্থায়ী ঘর এখানে ছিল, যারা প্রায় এক মাস আগে চলে গেছে তারা। আমার মত অনেকেই আছে যারা দীর্ঘদিন এখানে বসবাসের ফলে এই ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়েছেন। তবে আমরা কেউই সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না কখনও।
‘আমরা তো সবাই ভূমিহীন, সরকার তো ভূমিহীনদের জন্য ঘর এবং জমির ব্যবস্থা করেছে। আমাদের এখন আর আগের মতন ইনকাম নাই। তাই অনেক পরিবারই তাদের বাপ-দাদার পেশা পরিবর্তন করেছেন। আমাদের অনেকেই এখন সমাজের মূলধারায় ফেরার জন্য সংগ্রাম করছে।’
একই পল্লির বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, ‘দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। আমরা বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের মূল পেশা হচ্ছে সাপ ধরা, সাপের খেলা, শিঙ্গা লাগানোসহ বিভিন্ন কবিরাজি চিকিৎসা। তবে মানুষ এখন আমাদের চিকিৎসা সেবা নিতে চায় না। এ কারণে আগের মতন আয় রোজগারও নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকেই এখন পেশা পরিবর্তন করেছে। এই যাযাবর জীবন বাদ দিয়ে সমাজে ফিরতে চাই, স্থায়ী হতে চাই।’
একই পল্লির ১০ বছরের শিশু তাবাসসুম খাতুম বলেন, ‘পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে থাকতে আমার ভালো লাগে না। আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করি। বড় হয়ে আমি ডাক্তার হতে চাই।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক খালিদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকার সমাজের সব জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এর আওতায় বেদে সম্প্রদায়সহ অন্য যে জনগোষ্ঠী আছে তাদের নিয়েও সরকার কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে তাদের আমাদের কাছে আসতে হবে এবং সমস্যাগুলো বলতে হবে।
‘এ ছাড়া আমি নিজেও খোঁজ-খবর নেব, যারা ইতোমধ্যে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন বা বাসিন্দা হয়েছেন তাদের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারি জমিতে ঘর এবং জমির বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।