জুমবাংলা ডেস্ক : রমজান মাস যত ঘনিয়ে আসছে মাংসের দর ততই বাড়ছে। এর মধ্যেই শবেবরাত উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়ে এক লাফে ৮০০ টাকায় উঠেছে। গত কয়েকদিনে কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। অধিকাংশ জায়গায় তা ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; কিছুটা ভালো মানের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।
বাজারে সরবরাহের ঘাটতি থাকায় বেশি দাম দিয়ে গরু কিনতে হচ্ছে, এতে দাম বাড়তি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে জানান, প্রতিবছর পবিত্র শবেবরাত ও রমজান মাসের আগে গরুর মাংসের দাম বাড়ে, এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি।
প্রায় চার মাস আগে হঠাৎ করে ছন্দপতন ঘটে মাংসের বাজারে। কেজি নেমে আসে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। তখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্দেশে খামারি ও ব্যবসায়ীরা বৈঠক করে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে প্রতি কেজি মাংসের দর ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিক্রি হয় এ দরেই। নির্বাচনের দুই দিন পরই কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে দর ওঠে ৭০০ টাকায়।
এতদিন এ দর বা কিছুটা বেশিতে মাংস বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবারেও রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারে ৭০০ টাকা দরে গরুর মাংস কেনা গেছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ও মহল্লায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ মাংস দোকান থেকে মূল্য তালিকা উধাও হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা কেজি বিক্রি করছেন ৭৫০ টাকা দরে। তবে এসব বাজারে কেজিতে আরও ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে কোথাও ৭৮০ আবার কোথাও ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
মিরপুর শাহআলী বাজার থেকে ৭৮০ টাকা দরে মাংস কেনেন তালেব। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ৬৫০ টাকা, দুই মাস না যেতেই কেজিতে দেড়শ’ টাকা বেড়ে গেল। তখন ৬৫০ টাকায় বিক্রি করলে এখন কেন পারেন না ব্যবসায়ীরা।
২০১৮ সালেও সিটি করপোরেশন নির্ধারিত ৪২০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে দর বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
শাহআলী বাজারের মোল্লা গোস্তের স্বত্বাধিকারী আলমগীর হোসেন বলেন, দুই সপ্তাহ আগে যে গরু কিনেছি ১ লাখে, একই ওজনের গরু কিনতে এখন লাগছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি। দাম না বাড়িয়ে উপায় নাই।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা মন্টু বলেন, গত এক সপ্তাহে প্রতিটি গরুর দাম অন্তত ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে। গরুর দাম বাড়ার কারণে কেউ কেউ কেজি ৮০০ টাকায়ও বিক্রি করছে। তবে এর আগের দিন দুটি গরু জবাই করে কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি করে ৭ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছি।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, শবেবরাতকে ঘিরে দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে মাংস ব্যবসায়ীরা এসব অভিযোগ তুলছেন। মূলত উৎসবকে ঘিরে দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে এসব অভিযোগ তুলছেন মাংস ব্যবসায়ীরা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, নানা জায়গায় ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। দাম সহনীয় রাখার যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে দেশে প্রতিবছর মাংসের উৎপাদন বাড়ছিল, কিন্তু গত অর্থবছরই প্রথম উৎপাদন কমেছে। উৎপাদন কমার আগের বছর (২০২১-২২) মাংসের উৎপাদন ছিল ৯২ লাখ ৬৫ হাজার টন; গত বছর তা কমে দাঁড়ায় ৮৭ লাখ ১০ হাজার টন। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগিসহ সব ধরনের মাংসের উৎপাদন কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।