সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে দিন দিন বাড়ছে ভাসমান ভিক্ষুকের সংখ্যা। মানিকগঞ্জের আশপাশের জেলা-উপজেলাসহ নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ভিড় জমাচ্ছেন এসব ভাসমান ভিক্ষুকরা। ভিক্ষুকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন ভিক্ষুকদের কল্যাণে কাজ করা ব্যক্তিরা। জেলায় কি পরিমাণ ভিক্ষুক রয়েছে এবং এদের মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলার স্থায়ী বাসিন্দা, কতজন অন্য জেলা থেকে মানিকগঞ্জে এসে ভিক্ষাবৃত্তির সাথে জড়িত রয়েছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যানও নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে ভিক্ষুক পুর্নবাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পের জন্য সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একদিনের বেতনের সমপরিমান টাকা চাঁদা তুলে তহবিল গঠন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পরেও এখনো সম্পন্ন হয়নি ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কমংসংস্থান কার্যক্রম। তহবিলের অল্প কিছু টাকা ভিক্ষুকদের মাঝে বিতরণ করা হলেও অধিকাংশ টাকাই এখনও ব্যাংকে পড়ে রয়েছে ।
বৃহস্পতিবার (০৩) নভেম্বর দুপুরে মানিকগঞ্জ শহরের শহীদ রফিক সড়কের একটি দোকানে অবস্থান নিয়ে দেখা যায়, কয়েক মিনিট পরপরই ভিক্ষুকরা দলবেধে ভিক্ষা নিতে বিভিন্ন দোকানে দোকানে ভীড় জমাচ্ছেন। একঘন্টা সময়ের মধ্যে প্রায় অর্ধশত ভিক্ষুককে বিভিন্ন অজুহাতে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়। এদের কেউ কেউ বলছে ঘরে অসুস্থ স্বামী রয়েছে, কেউবা বলছে সন্তানরা দেখাশুনা করেনা। কেউ কেউ আবার বলছে সন্তানরা যে টাকা আয় করে তা দিয়ে তাদেরই চলে না, তারা আবার আমাদের দেখবে কিভাবে?
শিবালয় উপজেলার উথলী গ্রামের ভিক্ষুক কানছু শেখ (৮০) বলেন, দুই মেয়ে ও স্ত্রী ছিল, তারা মারা গেছে। মাসে ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা পেলেও তা দিয়ে চলেনা। তাই মানুষের কাছ থেকে সাহায্য উঠিয়ে কোনরকমে দিন পার করছি।
হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর থেকে মানিকগঞ্জ শহরে ভিক্ষা করতে আসা মোকশেদ আলী (৮০) বলেন, দুনিয়ায় আমার কেউ নাই। স্ত্রীও মারা গেছে। দিনে বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করি আর রাতে বাসস্ট্যান্ড যাত্রী ছাউনিতে থাকি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই আমার।
নাটোর থেকে আসা লাকী (২৭) নামের এক নারী মানিকগঞ্জ শহরের শহীদ রফিক সড়কে ভিক্ষাবৃত্তির সময় জানান, পৌরসভার জয়রা এলাকায় ভাড়া থাকেন তিনি। স্বামী নেই, ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনরকমে তিন সন্তানকে নিয়ে জীবনযাপন করেন।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থেকে আসা আরেক নারী ভিক্ষুক গোলাপজান (৬৫) বলেন, ৫/৬ মাস আগে স্বামী প্যারালাইজড হয়ে গেছে। এরপর থেকে সংসার চালাতে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেছেন তিনি।
সাটুরিয়ার কাওয়ালীবাজার এলাকা থেকে ভিক্ষা করতে আসা ষাটোর্ধ এক নারী বলেন, স্বামী-স্ত্রী মিলে বাঁশের কাজ করতাম। তা থেকে যে আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলেনা। বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করি। ভিক্ষা করে প্রতিদিন প্রায় তিনশ থেকে চারশ টাকা আয় হয়।
মানিকগঞ্জ শহীদ রফিক সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বলেন, শহরের দোকানগুলোতে প্রতিদিনই অনেক ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। ভিক্ষুকদের অধিকাংশই নারী। দোকান খোলার পর থেকে রাত পর্যন্ত ভিক্ষুকেরা দলবেধে দোকানে দোকানে এসে ভিক্ষা করে।
ইমরান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিনই অনেক ভিক্ষুক দোকানে ভিক্ষা নিতে আসে। তবে বৃহস্পতিবার হলে ভিক্ষুকের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়।
শহরের অপূর্ব স্টেশনারীর ব্যবসায়ী অখন্ড সাহা জানান, বৃহস্পতিবার আসলে কমপক্ষে দুইশ ভিক্ষুক ভিক্ষা নিতে আসে। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে ভিক্ষুকদের ভীড় লেগে যায়।
মানিকগঞ্জ জেলা হিউম্যান রাইটস ফোরামের সভাপতি এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ভিক্ষুকরা যে জোয়গারই হোক তাদের তালিকা করে ভিক্ষুক পুর্নবাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের দ্রুত পুনর্বাসন করার দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য কয়েকবছর আগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থ ভিক্ষুকদের তালিকা করে কিছু কিছু ভিক্ষুকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছিল। আর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের অর্থ ও সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতনের সমপরিমান অর্থের বিসয়টি ডিসি অফিসের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে জেলায় কি পরিমাণ ভিক্ষুক রয়েছে সেটা আমাদের জানা নেই।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, আমরা জেলায় ভিক্ষুকের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে কিছু ভিক্ষুকের তালিকা করে ভিক্ষুকদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও ভিক্ষুকদের তালিকা করে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।