আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অম্বানিপুত্রের প্রাক-বিবাহ অনুষ্ঠানে ভারতে হাজির ফেসবুক কর্তা মার্ক জুকারবার্গ। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছাপ দেয়া পাঞ্জাবি পরে আসর মাতিয়েছে তিনি ও তার সঙ্গিনী। আর সেই সব ছবি ও ভিডিও নিয়েই মজে ছিলেন সামাজিক মাধ্যম। এরমধ্যেই মঙ্গলবার সন্ধ্যা বেলায় হঠাৎ করেই স্তব্ধ হয়ে গেলো ফেসবুক।
পরে অবশ্য প্রায় ঘণ্টা খানেক বন্ধ থাকে ফেসবুক ও এর সঙ্গে থাকা ম্যাসেঞ্জার, ইনিস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ। জানা গেছে, লোহিত সাগরে নিচে সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হবার ফলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলোর পরিষেবা ব্যাহত হয় । এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ইন্টারনেট ট্র্যাফিকের একটা বড় অংশে প্রভাব পড়ে।
হংকং টেলিকম সংস্থা এইচজিসি গ্লোবাল কমিউনিকেশন জানিয়েছে, মোট চারটি প্রধান টেলিকম নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের নেটওয়ার্ক পরিষেবাও বিঘ্নিত হয়েছে । তারা বলছে এশিয়া ও ইউরোপের প্রায় ২৫ শতাংশ ট্র্যাফিক এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থাও তথৈবচ।
এই পরিস্থিতিতে বিপাক এড়াতে ট্র্যাফিককে রিরুট করার কাজ শুরু হয় জরুরি ভিত্তিতে। মঙ্গলবার ফেসবুক পরিষেবা বিঘ্নিত হলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা ফিরে আসে । স্বস্তির নিঃশ্বা স ফেলে ব্যবহারকারীরা। তবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তড়িঘড়ি সমস্যা মিটিয়ে দেয়া হলেও মূল সমস্যা কিন্তু এখনও রয়েই গেছে।
আর সেটি মেরামতের কাজ বেশ সময়সাপেক্ষ। তার উপর ওই সব অঞ্চলে কাজ শুরু করতেও ভালোই সময় লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ অনুমতি সংক্রান্ত বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে । যতদূর জানা যাচ্ছে, ওই সব ক্যাবলগুলোকে সম্পূর্ণভাবে মেরামতের জন্য ইয়েমেনি মেরিটাইমের অনুমতি লাগবে।
আর তা পেতে পেতে অন্তত আট সপ্তাহ সময় তো লাগবেই। ততদিন পর্যন্ত ট্র্যাফিক রিরুটিং করে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে মেটার মতো সামাজিক মাধ্যমের প্লাটফর্মগুলো। এই বিপত্তির জন্য সমস্যায় পড়েছে একাধিক টেলিকম সংস্থাও।
বর্তমানে মানুষের জীবন সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে এতোটাই সম্পৃক্ত যে, এক মুহূর্তও ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম ছাড়া থাকার কথা কল্পনা করতে পারেনা তারা । আর একথা যে মিথ্যে নয় একরত্তিও, তা প্রমাণ করে দিল মঙ্গলবারের রাত। ফেসবুক সচল হতেই সেখানেই শুরু হয়ে জোর চর্চা, ঘুরতে লাগলো এ সংক্রান্ত নানাবিধ মিমও। তবে পরিস্থিতি যা, তাতে আবার ফেসবুকে এমন কোনও বিপত্তির মধ্যে পড়বে না, তা কিন্তু হলফ করে বলা যাচ্ছে না। যেভাবে লোহিত সাগরের তলদেশের ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা পুরোপুরি মেরামত না করা পর্যন্ত, কিন্তু আবারও সামাজিক মাধ্যমে অন্ধকার নামতেই পারে।
২০০৬ সালে তাইওয়ান ভূমিকম্পের পর আন্ডারওয়াটার ক্যাবলগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এসব ক্যাবলের পেছনে মাইক্রোসফট, আমাজন, মেটার মতো সংস্থাগুলো সমুদ্র তলদেশে নেটওয়ার্কের পেছনে প্রচুর অর্থ ঢেলেছে। এ কারণে লোহিত সাগরের তলদেশ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
কয়েক সপ্তাহ আগেই নির্বাসিত ইয়েমেনি সরকারের তরফে সতর্ক করা হয়েছিল, হুতি যোদ্ধারা বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে লোহিত সাগরের তলদেশে থাকা আটটি সাবমেরিন ক্যাবল নিশানা করতে পারে। এরই মধ্যে জাহাজ চলাচলে বাধা নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যকে ভালোভাবেই বিধেছে হুতিরা।
এবার কি তবে নেটওয়ার্ক সিস্টেমের উপর আঘাত হানাই নতুন নিশানা হুতিদের। ইসরাইলি মিডিয়ার দাবি, লোহিত সাগরে সাবমিরেন ক্যাবল ধ্বংসে হাত রয়েছে হুতিদের। যদিও ইয়েমেনি বিদ্রোহী নেতা আল-হুতি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং মার্কিন-ব্রিটিশ বাহিনীর উপরেই দায় চাপাতে চেয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।