জুমবাংলা ডেস্ক : মুখ খুলতে শুরু করেছে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের নির্যাতনের শিকার সাধারণ মানুষ। দুদকের আবেদনের পরিপেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে সম্পত্তি ক্রোকের খবরে স্বস্তি ফিরলেও কাটেনি জমির মালিকদের আতঙ্ক। জমি লিখে না দেওয়ায় হামলার শিকারও হয়েছেন অনেকে।
মাদারীপুরের রাজৈরে দুই বছরে ‘১১৩টি দলিলের সম্পত্তির’ সবই ফসলি জমি কিনেছে বেনজীরের পরিবার। জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি কিনে নেওয়াকে ফৌরজারি অপরাধ বলছেন বিশ্লেষকরা। এ ঘটনার বিচার দাবির পাশাপাশি কৃষকের ফসলি জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি আইনজীবীদের। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রাজৈর ও শিবচরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন।
গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের সীমান্তবর্তী রাজৈর উপজেলা। এ এলাকার অধিকাংশ ফসলি জমি দখলে নিয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ। এর মধ্যে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২-এর আগস্ট পর্যন্ত ১১৩টি দলিল হয়েছে, এর সবই বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিশান মির্জার নামে। প্রায় ৯০ একর জমি কেনার টাকা জোগান দিতে দুর্নীতি হয়েছে কিনা, সম্প্রতি দুদকের আবদেনের পরিপ্রেক্ষিতে সব দলিলের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর আস্তে আস্তে মুখ খুলতে শুরু করেন জমির মালিকরা।
সরেজমিন গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজা, নটাখোলা ও বড়খোলা এলাকার ফসলি জমি জোরপূর্বক কিনে নেয় বেনজীর আহমেদ। অভিযোগ আছে, তৈয়ব আলী নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমেই সব জমি কেনাবেচা হয়েছে। জমি লিখে না দিলে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন অনেকেই।
রাজৈর সাব-রেজিস্টার অফিসে ১১৩টি হলেও শিবচর ঠেঙ্গামারা মৌজায় ২০১৫ সালে ৫ কাঠা জমি কিনেন বেনজীর আহমেদের পরিবার। মাদারীপুরে এত সম্পত্তি কিনেছে সাবেক পুলিশপ্রধান, বিষয়টিতে হতবাক সচেতন মহল।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্যায়ভাবে কারও জমি লিখে নেওয়া ফৌরজারি অপরাধ। এ জন্য অপরাধীকে আনা উচিত আইনের আওতায়। আর প্রান্তিক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি আইনজীবীদের।
রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের ভাষারাম সেন বলেন, ২৪ একর ৮৩ শতাংশ ফসলি জমি আমাদের বংশীয় লোকদের। এ জমি সবটুকুই কিনে নেন সাবেক পুলিশপ্রধান। বিঘাপ্রতি সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রায় দুই বছর আগে ভয়ভীতি দেখিয়ে এ জমি নেন বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার। প্রথমে চারদিক থেকে জমি কিনে নেন তিনি, মধ্যখানে আমাদের জমি থাকায় সেটা লিখে দিতে বাধ্য করেন।
সাতপাড় ডুমুরিয়া গ্রামের সরস্বতী রায় নামে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা বলেন, আমরা জমি দিতে চাইনি। ভয় দেখিতে জমি লিখে নেন বেনজীর আহমেদ। এ জমিতে আমাদের ফসল হতো, সেই জমি লিখে নেওয়ায় আমাদের চাষাবাদ করার আর কোনো সুযোগ নেই। এ ফসলি জমিটুকু অনেক কষ্টে ধরে রাখছিলাম, কিন্তু সেটার আর শেষ রক্ষা হলো না।
বড়খোলা গ্রামের বাসিন্দা রসময় বিশ্বাস বলেন, সাবেক পুলিশপ্রধান আমাদের কাছ থেকে ৩২ শতাংশ জমি নিয়েছেন। তার পরিবারের নামে কবলা দিয়েছে।
কদমবাড়ির সুকবেদ বালার ছেলে অমল বালা বলেন, আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। জমি লিখে না দিলে বিমানে করে বাড়িতে নামতে হবে। চারপাশ আটকিয়ে দেবে। এমন অত্যাচারে অনেকেই জমি লিখে দিয়েছে। এর বিচার হওয়া উচিত।
মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বলেন, জোরপূর্বক কারও সম্পত্তি লিখে নেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। এ অপরাধে ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারেন। আর সাবেক পুলিশপ্রধানের পরিবারের নামে এত সম্পত্তি কেনা নজিরবিহীন। এ ঘটনায় দলিল গ্রহীতাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। এ ছাড়া প্রান্তিক কৃষকদের জমি তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
বিশ্লেষণ সামাজিক আন্দোলনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম খান বলেন, সাবেক আইজিপির বাড়ি গোপালগঞ্জে। কিন্তু মাদারীপুর জেলায় বিপুল পরিমাণে সম্পত্তি কেনা, মাদারীপুর জেলাবাসীকে অবাক করেছে। জমির মূল্য দিলেও কাউকে ভয় দেখিতে ফসলি জমি লিখে নেওয়া চরম অন্যায় কাজ। এর বিচার হওয়া উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।