জুমবাংলা ডেস্ক : ডলারের বিনিময় হার ১১৬ টাকা ৩৯ পয়সা ধরে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) নতুন দাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এলপিজির দাম ঘোষণার ক্ষেত্রে সাধারণত পণ্যটির আগের মাসের আমদানি মূল্যকে বিবেচনায় নেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসে ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দিয়েছিল ১১১ টাকা। সে হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ডলারের দরকে গ্রহণ করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। আমদানিকারক কোম্পানির ইনভয়েস মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের হিসাব বের করা হয়। এরপর দেশের বাজারে মূল্য ঘোষণা করে কমিশন।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির কাঁচামালের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বিইআরসির গতকালের ঘোষণায় দাম বেড়েছে দেশের বাজারে। বিইআরসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন। গতকাল সন্ধ্যা থেকেই এ দাম কার্যকর হয়েছে। বিইআরসির ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি ডিসেম্বরের জন্য ১২ কেজির এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম পড়বে ১ হাজার ৪০৪ টাকা। গত নভেম্বরে এটি ছিল ১ হাজার ৩৮১ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ২৩ টাকা দর বাড়িয়েছে বিইআরসি।
এলপিজির দাম ঘোষণাকালে কমিশন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির কাঁচামালের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় দেশের বাজারে দাম বেড়েছে।
চলতি ডিসেম্বরে এলপি গ্যাসের দাম ঘোষণায় বিইআরসি ডলারের বিনিময় হার ১১৬ টাকা ৩৯ পয়সা হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে। গত মাসে তারা এ বিনিময় হার ধরেছিল ১১৩ টাকা ৯২ পয়সা। অর্থাৎ ডলারের বিনিময় হার বিবেচনায় নেয়ায় এক মাসের ব্যবধানে টাকার অবমূল্যায়নজনিত ব্যয় বেড়েছে ২ টাকা ৪৭ পয়সা।
এলপি গ্যাসের কাঁচামাল হিসেবে পরিচিত প্রোপেন ও বিউটেন। প্রতি মাসে পণ্য দুটির দাম ঘোষণা করে সৌদি আরামকো কোম্পানি। সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) ঘোষিত রেট অনুযায়ী, চলতি মাসে প্রোপেনের টনপ্রতি মূল্য ৬১০ ডলার এবং বিউটেনের মূল্য ৬২০ ডলার। দুটি পণ্যের নির্ধারিত অনুপাত অনুযায়ী, গড় মিশ্রণের ক্ষেত্রে দাম দাঁড়ায় ৬১৬ ডলার ৫০ সেন্ট। এ রেটকে ভিত্তিমূল্য ধরে প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। চলতি মাসে ডলারের বিনিময় হার বিবেচনায় নেয়া হয়েছে ১১৬ টাকা ৩৯ পয়সা। সে হিসেবে প্রতি কেজি এলপি গ্যাসের দাম ১১৭ টাকা ২ পয়সা নির্ধারণ করে কমিশন। তাতে ১২ কেজি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম পড়ে ১ হাজার ৪০৪ টাকা।
এর আগে গত নভেম্বরে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম টনপ্রতি যথাক্রমে ৬১০ ও ৬২০ ডলার ঘোষণা দিয়েছিল সৌদি আরামকো। দুটি পণ্যের গড় মূল্য নভেম্বরে অপরিবর্তিত ছিল।
বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের কাঁচামালের দাম বাড়েনি। গত মাসের মতোই রয়েছে। তবে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় এলপিজির দাম কিছুটা বেড়েছে।’
সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির দাম অবশ্য বাড়ানো হয়নি। আর গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার প্রায় ৬৪ টাকা ৪৩ পয়সা, যা এত দিন ছিল ৬৩ টাকা ৩৬ পয়সা।
এলপিজি অপারেটরদের দাবি, বিইআরসি ডলারের যে দাম বিবেচনায় নিয়ে মূল্য ঘোষণা করে ওই দামে এলপি গ্যাসের আমদানি দাম মেটানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে আরো ৮-১০ টাকা বেশি দিয়ে এলসি দায় মেটাতে হয়।
মেঘনা ফ্রেশ এলপিজি লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) আবু সাঈদ রাজা বলেন, ‘ডলার রেটের ক্ষেত্রে বিইআরসি যে বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে ওই দামে কখনো ব্যাংকে এলসি দায় পরিশোধ করা সম্ভব নয়। বেশির ভাগ অপারেটর ১২০-১২২ টাকায় এলসি দায় পরিশোধ করছে। টাকার অবমূল্যায়নজনিত কারণে অপারেটররা বিইআরসি ঘোষিত দামে বাজারে এলপি গ্যাস বিক্রিতে চ্যালেঞ্জে পড়ছে। এটার দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি। লোকসান দিয়ে এভাবে এলপি গ্যাস সরবরাহ টিকিয়ে রাখা কঠিন।’
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে দেশের বাজারে প্রতি মাসে দাম সমন্বয়ের কাজ করে তারা। তবে বাজারে এর খুব একটা সুফল মেলেনি।
এদিকে, তীব্র সংকটের মধ্যেই দেশের ব্যাংক নির্বাহীরা ডলারের বিনিময় হার আরো ২৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গতকাল থেকে রফতানি ও রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম হবে ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ২৫ পয়সায় আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করতে পারবে।
গত বুধবার বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে ডলারের দর কমানোর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাফেদা ও এবিবির সভায় ডলারের দর ৫০ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সংগঠন দুটির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছিল। যদিও ডলারের বাজার পরিস্থিতি একেবারেই বিপরীত তথ্য দিচ্ছে। গতকালও দেশের অনেক ব্যাংক রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে ডলারপ্রতি ১২০ টাকার বেশি পরিশোধ করেছে। আর আমদানিকারকদের কাছে এর চেয়েও বেশি দরে ডলার বিক্রি করছে তারা। এবিবি ও বাফেদার ঘোষিত দরে দেশের কোথাও ডলার মিলছে না বলে অন্তত চারটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ‘বাফেদা ও এবিবির শীর্ষ নেতারা ডলারের বিনিময় হার নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশিত। বাজারে এখনো ডলারের তীব্র সংকট চলছে। অনেক ব্যাংক এ সংকটের কারণে এলসি দায় পরিশোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় ডলারের বিনিময় হার কমে যাবে এটি অসম্ভব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।