জুম-বাংলা ডেস্ক : রাজধানীসহ সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভর্তি ফি, বেতন ও অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে। একেক প্রতিষ্ঠানে একেক রকম টিউশন ফি নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের ওপর অনেকটা জোর করেই এই ফি চাপিয়ে দেওয়া হয়। অন্যান্য ফির ক্ষেত্রেও কোনো সামঞ্জস্য নেই। যে প্রতিষ্ঠান যেভাবে পারছে ফি আদায় করছে। এতে চাপ পড়ে অভিভাবকদের ওপর।
অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) নির্দেশনা বা সতর্কীকরণ নোটিশ দিলেও কোনো প্রতিষ্ঠানই তা আমলে নিচ্ছে না। তাই টিউশন ফির লাগাম টানতে এবার নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, সিটি করপোরেশন, মহানগর, জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি ও টিউশন ফি নির্ধারণ হবে অঞ্চলভেদে। মাসিক বেতন, ভর্তি, সেশন, বোর্ড পরীক্ষার ফরম পূরণ, স্কাউট, মিলাদসহ ২৮টির মতো কমন ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। আগামী সপ্তাহে এ নীতিমালা ঘোষণা করা হতে পারে। এদিকে বেসরকারি বিদ্যালয়ে উন্নীত ক্লাসে পুনঃ ভর্তি ফি আদায় বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
জানা গেছে, খসড়া নতুন নীতিমালা অনুযায়ী যেসব জেলার অবস্থান ভালো, মানুষজন উচ্চবিত্ত সেসব অঞ্চলের স্কুলগুলোর টিউশন ফি তুলনামূলক বেশি। অর্থাৎ ঢাকা, সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া অঞ্চলের স্কুলের মাসিক বেতন তুলনামূলক বেশি রাখা হয়েছে। অন্যদিকে যেসব এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি, তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে সেসব এলাকার স্কুলের ফি কম নির্ধারণ করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালায় বলা আছে, মফস্সল এলাকার বা পৌর উপজেলার বাইরের উপজেলাগুলোতে এমপিভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীপ্রতি টিউশন ফি বা মাসিক বেতন টিফিনসহ নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। বছরের হিসাবে এ ফি দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ টাকা।
বেতনের বাইরে এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য মোট বার্ষিক ফি ১ হাজার ৩৬০ টাকা হলেও নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের জন্য এ ফি ১ হাজার ৮১৫ টাকা। আর ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে এমপিও ও নন-এমপিও উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্য অভ্যন্তরীণ তিন ঘণ্টার প্রতি বিষয়ের পরীক্ষা বাবদ ৪০ টাকা ও তিন ঘণ্টার কম সময়ের জন্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কলেজ পর্যায়ের (একাদশ, দ্বাদশ ও স্নাতক পাশ) এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মফস্সল এলাকায় বার্ষিক ফি হবে ১ হাজার ৬৪৫ টাকা, আর নন- এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীপ্রতি গুনতে হবে ১ হাজার ৯৯০ টাকা। এমপিও ও নন-এমপিও উভয় স্তরের কলেজে অভ্যন্তরীণ তিন ঘণ্টার প্রতি বিষয়ের পরীক্ষা বাবদ ৫০ টাকা ও চার ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মহানগর ও জেলা কমিটির নির্ধারণ করা মাসিক বেতন-টিউশন ফি সংক্রান্ত সংক্ষিপ্তসার প্রতিবেদন কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। টিউশন ফি নির্ধারণে এলাকাভিত্তিক কমিটি থাকবে। জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি থাকবেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড মনোনীত সদস্য থাকবেন আরো পাঁচ জন। এর মধ্যে রয়েছেন-মফস্সল পর্যায়ের এমপিওভুক্ত কলেজের এক জন অধ্যক্ষ, পৌরসভা পর্যায়ের নন-এমপিও কলেজের এক জন অধ্যক্ষ, মফস্সল পর্যায়ের এমপিওভুক্ত স্কুলের এক জন প্রধান শিক্ষক, মফস্সল পর্যায়ের নন-এমপিওভুক্ত স্কুলের এক জন প্রধান শিক্ষক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। দরিদ্র-অসহায় শিক্ষার্থীদের ফুল ফ্রি বা হাফ ফ্রি বিষয়টি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কমিটি দেখবে।
মাসিক বেতন-টিউশন ফি নির্ধারিত খাতের ব্যাংকে হিসাব খুলে রাখতে হবে। কোনো একক খাতে বার্ষিক আদায় ১০ লাখ টাকার অধিক হলে এ খাতের জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। আদায় করা অর্থ খাতভিত্তিক ব্যয় করতে হবে। এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না। সব আদায় ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। টাকা আদায় ও অর্থ ব্যয় নিরীক্ষাযোগ্য হবে। হিসাব সংরক্ষণের সাধারণ নীতিমালা ও পদ্ধতি অনুসরণ করে পৃথক খাতভিত্তিক হিসাব রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি পঞ্জিকাবর্ষে দুই বার (জুন ও ডিসেম্বর) ক্যাশ বই ও ব্যাংক বিবরণী সমন্বয় করতে হবে। সব হিসাবপত্রের সফট কপি এবং হার্ডকপি ন্যূনতম ২০ বছর সংরক্ষণ করতে হবে। দায়িত্ব হস্তান্তরকালে প্রতিষ্ঠানপ্রধান দায়িত্ব গ্রহণকারী শিক্ষককে লিখিতভাবে বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন। এছাড়া নীতিমালায় অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, টিফিন, ম্যাগাজিন, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক উৎসব, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, লাইব্রেরি, পরিচয়পত্র, নবীনবরণ, শিক্ষা সফর, উন্নয়ন ফি ইত্যাদি খাতে কত টাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদায় করতে পারবে-এ বিষয়ও নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।