জুমবাংলা ডেস্ক : গাঙ্গেয় দ্বীপের জেলা ভোলার ২৫ লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের ভোলা-বরিশাল সেতু। এটি হলে বদলে যাবে ভোলার জনপদ ও মানুষের জীবনমান।
আর সেতুর সুবাদে প্রথমবারের মতে সারাদেশের সাথে সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে বিচ্ছিন্ন ভোলার। মুছে যাবে দ্বীপ জেলার ‘বিচ্ছিন্ন’ উপাধি। তবে কোনো আশ্বাস নয়, দ্রুত সেতুর কাজ শুরুর দাবি জেলাবাসীর।
ভোলার স্থানীয় বাসিন্দা মনির চৌধুরী, তালহা তালুকদার বাঁধন, মো: মঞ্জুর আলম ও সুমা বেগম জানান, দেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। এই জেলার সাথে সারাদেশের যোগাযোগের একমাত্র পথই হচ্ছে নৌপথ।
সরাসরি সারাদেশের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রয়েছে জেলার বাসিন্দারা।
তারা জানান, ভোলা জেলা প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধশালী হলেও হাতেগোনা ছোট বড় মিলে তিন থেকে চারটির বেশি শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি।
যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা কারণে শিল্প উদ্যোক্তারা আগ্রহী হননি ভোলায় শিল্পকারখানা করতে। তাই ভোলার উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরেই ভোলা-বরিশাল সেতুর দাবি জানিয়ে আসছিল জেলাবাসী। কিন্তু গড়ে ওঠেনি সেই স্বপ্নের সেতু।
গত ৮ মে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন ও সেতু বিভাগের সচিব মো: আবদুর রউফ ভোলা সফরে ভোলা-বরিশাল সেতুর স্থান পরিদর্শন করেন। এতে করে নতুন করে আবারো স্বপ্ন দেখাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত ভোলা-বরিশাল সেতু।
ভোলায় কাজের সুবাদে আসা মো: ইলিয়াছ, আকবর, মো: সাহাবুদ্দিন ও মো: কবির হোসেন জানান, তাদের বাড়ি বরিশালে। চাকরির সুবাদে তারা ভোলায় বসবাস করছেন। জেলাটি অনেক সুন্দর হলেও সন্ধ্যার পর লঞ্চ ও স্পিডবোট চলে না। তাই তাদের যদি জরুরিভাবে সন্ধ্যার পর বরিশাল যেতে হয়, তখন ভয়াবহ ভোগান্তি ও বিপাকে পড়তে হয়।
গাড়িচালক মো: ইসমাইন হোসেন, মো: হারুন মিয়া ও মো: মহসিন জানান, ভোলার সাথে সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। বাস ও ট্রাক নিয়ে আসা-যাওয়ার একমাত্র পথই হলো ভোলার ভেদুরিয়া ও বরিশালের লাহারহাট ফেরি সার্ভিস। আবার ফেরিঘাটে গিয়ে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কখনো বিকেলে ফেরিঘাটে পৌঁছালে পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। যদি ভোলা-বরিশাল সেতু হয়, তাহলে আর অপেক্ষা করতে হবে না। ভোলা থেকে ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যেই বরিশাল পৌঁছানো যাবে।
ভোলার সচেতন নাগরিক ও প্রবীন সাংবাদিক মোবাশ্বের উল্লাহ চৌধুরী ও নজরুল হক অনু জানান, পদ্মা সেতু করা হয়েছে ভোলাসহ ২১ জেলার সহজ যোগাযোগের জন্য। কিন্তু পদ্মা সেতুর সুবিধা ভোলাবাসী পায়নি।
কারণ ভোলা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ভোলায় প্রচুর গ্যাস থাকা সত্ত্বেও শিল্পকারখানা গড়ে মানুষের কর্মসংস্থান হয়নি।
তারা আরো জানান, ভোলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস, ইলিশ, ধান, গমসহ বিভিন্ন শষ্য সারাদেশে গেলেও ভোলাবাসী তেমন কিছুই পাচ্ছে না। ভোলা-বরিশাল সেতু হলে সারাদেশের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে। উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে ভোলায়। সেতু হলে একে একে গড়ে উঠবে শিল্পকারখানা।
তখন ভোলাসহ সারাদেশের হাজার হাজার মানুষ কারখানাগুলোতে চাকরি করবে। তাই সরকারের কাছে তাদের অনুরোধ, ভোলা-বরিশাল সেতু অধিক গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত নির্মাণ করার।
তবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন তখন জানিয়েছিলেন, ভোলা-বরিশাল সেতুটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু হবে। যা হবে দেশের দীর্ঘতম সেতু। সেতুটি নির্মাণ হলে বিশ্বের বৃহৎ সেতুগুলোর তালিকায় স্থান পাবে ভোলা-বরিশাল সেতু। এটির কাজ হয়ত জানুয়ারির মধ্যে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, তবে আমরা তারিখ ও মাস এখনো সঠিকভাবে বলতে পারব না। একুটু বলতে পারি ভোলা-বরিশাল সেতু হবে।
সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো: আবদুর রউফ জানান, ভোলা-বরিশাল সেতুটি প্রায় ১১ কিলোমিটারের হবে। ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এটি আরো বাড়তে পারে কিংবা কমতেও পারে।
সেতু মন্ত্রনালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জাপানের কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ‘মিয়াগাওয়া’ এ সেতুটি নির্মাণের আগ্রহ দেখিয়েছেন। আগামী ২৫ কিংবা ২৬ মে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের কথা রয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে সেই সফরকালেই জাপান সরকারের মাধ্যমে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো: আজাদ জাহান জানান, স্বপ্নের ভোলা-বরিশাল সেতু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই শুরু হতে পারে। সেতুটির কাজ শুরু করতে জাপান বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি।
সূত্র : বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।