সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে ভূয়া রেজিষ্ট্রার বালাম বহিতে অবৈধভাবে বাল্য বিবাহ রেজিস্ট্রি ও সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার অভিযোগে মো. মামুনুর রশিদ নামের এক ভূয়া কাজীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জেলা কাজী সমিতির একাধিক সদস্য।
প্রায় দেড় মাস আগে জেলা প্রশাসক ও দুই সপ্তাহ আগে পুলিশ সুপার বরাবর ভূয়া কাজী মো. মামুনুর রশিদের নামে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোর্ট এলাকায় এখনো দিব্যি বাল্য বিবাহ রেজিস্ট্রি ও প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ভূয়া বালাম বহিতে বাল্য বিবাহ রেজিস্ট্রি ও প্রতারণার দায়ে এর আগে একাধিকবার জেল-জরিমানা হলেও থেমে নেই তার প্রতারণা। জেল থেকে বের হয়েই ফের শুরু হয় তার অবৈধ কার্যক্রম।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মামুনুর রশিদ দীর্ঘ দিন ধরে মানিকগঞ্জ কোর্ট এলাকায় নিজস্ব অফিস ও একাধিক সহকারী নিয়ে অবৈধভাবে বাল্য বিবাহ রেজিস্ট্রি ও সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। বিভিন্ন আইনজীবিদের চেম্বারে নিজের নামে ছাপানো ভিজিটিং কার্ড সরবরাহ করে নিজেকে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত কাজী পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। অথচ তিনি সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত কোন নিকাহ রেজিস্টার নন। ভূয়া পরিচয়ে হরহামেশাই বাল্য বিবাহ পড়াচ্ছেন এবং নিরীহ মানুষের সাথে আর্থিক প্রতারণা করে আসছেন তিনি। প্রতারণার কাজে সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত কাজীদের সিলমোহর ব্যবহার ও স্বাক্ষর জাল করে কাবিননামার সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করেন তিনি। তার এমন অপকর্মে পেশাদার কাজীদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
জেলা কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর বলেন, মামুনুর রশীদের কাজীর লাইসেন্স বা নিবন্ধন নেই। সে কোর্ট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভূয়া রেজিস্ট্রি করে আসছে। দুই সপ্তাহ আগে তার নামে এসপি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। শুনেছি অভিযোগটি থানায় তদন্তাধীন রয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে এখনো কিছু বলেনি বা জানানো হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে মো. মামুনুর রশীদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কাজী না, আমি কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শফিক কাজীর কেরানী। আমি শফিক সাহেবের বইয়ে কাজ করি। আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ হয়েছি শুনেছি, সেটা থানায় তদন্তাধীন। ওসি সাহেব আমাকে ফোন দিয়েছিল, উনার সাথে কথা হয়েছে। এ নিয়ে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাজী শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোর্ট এলাকা তো মামুন একা কাজ করেনা, সব কাজীর সহকারীরাই কাজ করে। তবে সহকারী হয়ে কেউ একা একা কাজ করতে পারেনা এবং কাবিননামায় স্বাক্ষর করতে পারে না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক মো. মাহমুদুল হাসান জানান, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামুনুর রশীদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকা হয়েছিল। কাগজপত্র দেখানোর জন্য ওসি স্যার তাকে একদিন সময় দিয়েছেন। তবে ওসি আব্দুর রউফ সরকার মামুনুর রশীদেকে থানায় ডেকে আনার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, এর আগেও তাকে একাধিকবার জেল-জরিমানা করা হয়েছিল। যদি সে আবারও এসব কাজ করে থাকে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, বাল্য বিবাহ পড়ানোর অভিযোগে ২০২০ সালে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে মামুনুর রশীদকে আট মাসের সাজা এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং একই অভিযোগে চলতি বছরের ২৭ মার্চ তাকে ৬ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।