আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার সরকারি বাসভবনে আগুন লাগে। দমকল আগুন নেভানোর সময় প্রচুর টাকা পায়। পুলিশও সেখানে ছিল। এই খবর সামনে আসার পরই ভয়ংকর আলোড়ন দেখা দিয়েছে। খবর ডয়চে ভেলের।
ঘটনাটি যখন ঘটে তখন বিচারপতি ভার্মা দিল্লিতে ছিলেন না। তার পরিবারের সদস্যরা দমকলে খবর দেন। দমকল আগুন নিয়ন্ত্রণ করার পর একটি ঘরে রাশি রাশি নোট পায়।
বিচারপতি ভার্মা শুক্রবার হাইকোর্টে যাননি। বলা হয়েছে, তিনি ছুটিতে আছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই খবর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জানায়। এরপরই প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না সুপ্রিম কোর্টের কলিজিয়ামের বৈঠক ডাকেন। এই কলিজিয়ামের সদস্য হলেন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ প্রবীণ বিচারপতি। বিচারবিভাগ নিয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেন।
কলিজিয়াম ঠিক করেছে, প্রথমেই বিচারপতি ভার্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলি করা হবে। কারণ, তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকেই বদলি হয়ে দিল্লি হাইকোর্টে এসেছিলেন।
কী হয়েছিল?
গত ১৪ মার্চ রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ দিল্লিতে বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার তুঘলক রোডের সরকারি বাসভবনে আগুন লাগে। তার বাসভবন থেকে ফোন পেয়ে দমকল ও পুলিশ সেখানে পৌঁছায়।
আগুন নেভানোর পর বিপুল পরিমাণ টাকার সন্ধান পান এক দমকলকর্মী। এরপর দিল্লি পুলিশের তরফ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঘটনার রিপোর্ট পাঠায়। মন্ত্রণালয় সেই রিপোর্টটি পাঠিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে।
২০ মার্চ কলিজিয়ামের বৈঠকে ঠিক হয়, বিচারপতি ভার্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলি করা হবে।
কী করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট?
১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটা নীতিনির্দেশিকা তৈরি করে। সেখানে বলা হয়েছিল, কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অন্যায় কাজ করা, বিচারবিভাগীয় বেনিয়মের অভিযোগ উঠলে কীভাবে তা নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সেই নীতি-নির্দেশিকা বলছে, কোনো বিচারক বা বিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে প্রধান বিচারপতি অভিযুক্তের কাছ থেকে জবাব চাইবেন। যদি তার জবাবে তিনি সন্তুষ্ট না হন অথবা তার মনে হয়, তদন্ত করা দরকার তাহলে তিনি অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করবেন। সেই কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের একজন ও হাইকোর্টের দুইজন বিচারপতি থাকবেন।
তদন্তের পর যদি কমিটির মনে হয়, যে অভিযোগ করা হয়েছে তা গুরতর এবং তার অপসারণ দরকার, তাহলে তারা প্রধান বিচারপতিকে সেই রিপোর্ট দেবেন। তখন প্রধান বিচারপতি তাকে ইস্তফা দিতে বলবেন।
তিনি পদত্যাগ না করলে প্রধান বিচারপতি সরকারকে জানাবেন, সংসদ তাকে ইমপিচ করতে পারে।
‘বিচারবিভাগের দুর্নীতির প্রসঙ্গ গুরুতর’
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবাল বলেছেন, বিচারবিভাগের দুর্নীতির প্রসঙ্গটা খুবই গুরুতর বিষয়। এই প্রথম প্রবীণ আইনজীবীরা এই উদ্বেগ জানাচ্ছেন এমন নয়। এটা বেশ কিছু বছর ধরে চলছে।
তার মতে, নিয়োগ প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ হওয়া দরকার। দুর্নীতি খুবই গুরুতর বিষয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যা বলেছেন ঠিক আছে, কিন্তু দুর্নীতি বেড়েছে।
সাবেক বিচারপতি আর এস সোনি টিভি চ্যানেলে বলেছেন, অভিযুক্ত বিচারপতিকে বদলি করা হয়েছে মানে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো। এটা একটা অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। এটা হওয়া উচিত নয়। বিচারপতিরাও আইনের উপরে নয়। তবে তাদের দুর্নীতির উপরে থাকতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন প্রধান বিকাশ সিং বলেছেন, বিচারবিভাগের উপর মানুষের আস্থা আছে। তাতে ধাক্কা লাগা উচিত নয়। যদি বিচারপতির বাড়ি থেকে এত টাকা পাওয়া য়ায় এবং তার কোনো ব্যাখ্যা না আসে, তাহলে মানুষের আস্থায় ধাক্কা লাগতেই পারে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী স্বপ্নিল কোটারিও বলেছেন, শুধুমাত্র বদলি করলে বিচারবিভাগের উপর আস্থা ফিরবে না। আমরা অপেক্ষা করব। দেখব সুপ্রিম কোর্ট কী করে। এটা তাদের কাছেও কঠিন পরীক্ষা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।