বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: কোভিড-১৯ মহামারী ও পরবর্তী সময়ে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপের যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা নিরসনে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগও নিয়েছে। তবে চিপসংক্রান্ত অস্থির এ পরিস্থিতির আরো অবনমন ঘটবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা। খবর ব্লুমবার্গ।
চিপ সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট ইন্টেল ১ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগে জার্মানির ম্যাগডবার্গে উন্নত প্রযুক্তি-সংবলিত চিপ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি ছয় মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি অ্যারিজোনা ও ওহিওতে নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কথা জানিয়ে আসছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনে এবং চিপের জন্য এশিয়ানির্ভরতা কমানোর অংশ হিসেবে ইন্টেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্যাট গেলসিঙ্গার এ উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনে পরিকল্পনা অনেকটাই ভেস্তে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের এ উদ্যোগ গ্রহণে বাধ্য করেছে। পাশাপাশি বিশ্বে স্থিতিশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ সরবরাহ চেইন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
গেলসিঙ্গারের আকাঙ্ক্ষা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে ১০ হাজার কোটি ডলারের প্রকল্প গ্রহণ করবে। এর মাধ্যমে চিপের জন্য এশিয়ার দেশ চীনের ওপর নির্ভরতা কমানো হবে। বিশেষ করে যখন দেশটি নিজেদের চিপ উৎপাদনের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে। তবে এ খাতসংশ্লিষ্ট অনেকে আশঙ্কা করছেন চিপ উৎপাদন খাতে পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে চাপ প্রয়োগ করছে, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে যে পরিমাণ বিনিয়োগ ও সময়ের প্রয়োজন, সেটির পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট আরো প্রকট হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিরাপদ সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরিতে কাজ করলেও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো এখনো সাধারণ চাহিদাই পূরণ করতে পারেনি।
জার্মানির চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এক্সফ্যাব সিলিকন ফাউন্ড্রিজের সিইও রুডি ডি উইন্টার বলেন, সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন একটি সর্বজনীন ব্যবসা এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে এটি ভালো উদাহরণ তৈরি করেছে। বিশ্বের সব অঞ্চলে এটিকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং নিজস্ব উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের যে চেষ্টা করা হচ্ছে, তার পুরোটাই রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর এর মাধ্যমে রাশিয়া সেমিকন্ডাক্টরকে অন্যতম রাজনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহারের উদাহরণ তৈরি করেছে। চিপ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত অনেক উপাদানের সরবরাহ এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, যার প্রভাব দৃশ্যমান। ৯ মার্চ এক সাক্ষাত্কারে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী গিনা রাইমন্ডো জানান, চীন যদি রাশিয়ায় রফতানির ক্ষেত্রে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাহলে ওয়াশিংটন দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেবে।
গত কয়েক দশকে চিপের বাজারে পতনের মুখে থাকার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ পুনরায় শীর্ষে ফিরতে উদগ্রীব। ১৯৯০-এর দিকে মোট সিলিকন ওয়াফারের ৪০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন হতো। অন্যদিকে ইউরোপের অবদান ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। বর্তমানে এ হার যথাক্রমে ১৫ ও ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এশিয়ানির্ভরতা কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে সেমিকন্ডাক্টর-সংক্রান্ত গবেষণা, উন্নয়ন ও উৎপাদনে ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারের প্রকল্প উত্থাপন করেছেন।
চিপ উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একত্রে কাজ করার উদ্যোগ নিলেও প্রযুক্তিবিদ ও খাতসংশ্লিষ্টদের ধারণা এ দুটি অঞ্চলকে উপাদানের জন্য এশিয়ার ওপরই নির্ভর করতে হবে। ফলে যে সংকট এখন চলমান, সামনের দিনগুলোয় তা আরো বাড়বে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।