জুমবাংলা ডেস্ক : নবান্ন উৎসব উপলক্ষে শনিবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলীতে বসেছিল মাছের মেলা। মেলায় দেড় হাজার মণের বেশি মাছ কেনাবেচা হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে ১৫ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, বাঘাইড়, ব্রিগেড, কার্পসহ হরেক রকমের মাছ বিক্রি হয় মেলায়।
তবে গত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
বিশালাকৃতির রুই-কাতলা, চিতল, বোয়াল ও বাঘাইড় মাছগুলো ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৪০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ১৮০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা দরে ব্রিগেড ও সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়। শত বছরের প্রাচীন উথলী মাছের মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের ২০ গ্রাম স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
পঞ্জিকানুসারে শনিবার পহেলা অগ্রহায়ণ হওয়ায় এদিন নবান্ন উৎসব পালন করা হয়।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই প্রতিবছর মাছের মেলা বসে উথলী হাটে। নবান্ন উপলক্ষে উথলী গ্রাম ছাড়াও পাশের রথবাড়ী, নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, শিবগঞ্জ, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবিপুর, গুজিয়া, মেদনীপাড়া, বাকশন, রহবল, মোকামতলাসহ ২০ গ্রামে ছিল উৎসবের আয়োজন। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়।
নবান্ন উপলক্ষে উথলী হাটে মাছের মেলা বসলেও জমি থেকে নতুন তোলা অন্যান্য শাক-সবজির পসরাও সাজানো হয় মেলা চত্বরে।
এই মেলায় নতুন আলু বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়াও মিষ্টি আলু ও কেশর (ফল) প্রতি কেজি ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ছিল নতুন শিম থেকে শুরু করে হরেক প্রকার সবজি।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার লোহাগাড়া নদীর (বাঙ্গালির শাখা) মাছ তুলে মেলায় বিক্রি করতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী কৃষ্ণ প্রামাণিক। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি হলেও বেচাকেনা হয়েছে আশানুরূপ।
প্রতি বছরই তিনি এই মেলায় মাছ বিক্রি করেন বলে জানান কৃষ্ণ।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি থেকে ২০টি বোয়াল নিয়ে মেলায় আসেন আশিক ইসলাম। তিনি বলেন, গত বছর মেলায় যতো ক্রেতা ছিল এবার তেমনটি নেই। তারপরও তিনি এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে আটটি বোয়াল বিক্রি করেছেন।
মাছ বিক্রেতা অখিল চন্দ্র সরকার জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা ৫ থেকে ১০মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলার এসব বিক্রেতার কাছে মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে ২০টি আড়ৎ খোলা হয়। সেসব আড়ৎ থেকে পাইকারি দরে মাছ কিনে অধিকাংশ দোকানি মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।
মেলায় আড়ৎ খুলে বসা মোকামতলা বাজারের ভাই ভাই মৎস্য আড়তের স্বত্বাধিকারী শাহীন আলম জানান, অধিকাংশ আড়ৎদার পিকআপভ্যান ও ভটভটিতে করে মাছ এনে নিমিষেই পাইকারি বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, পুরো মেলার ২০ জন আড়ৎদার মিলে কোটি টাকার ওপরে মাছ বিক্রি করেছেন।
আলীয়ার হাটের একতা মৎস্য আড়তের স্বত্বাধিকারী মোনায়েম আহমেদ এবার মেলায় ৫ ট্রাক মাছ বিক্রি করেছেন বলে জানান।
মেলায় মাছ কিনতে এসে শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, উথলীর নবান্ন মেলায় বিক্রির জন্য আশপাশের এলাকার পুকুরগুলোতে শৌখিন চাষিরা মাছ মজুদ করে রাখেন। এলাকার কে কতো বড় মাছ মেলায় তুলতে পারে যেন তারই প্রতিযোগিতা চলে চাষিদের মধ্যে। এছাড়া আড়ৎদাররা তো আছেই। এলাকার লোকজনও প্রায় প্রতিযোগিতা করে তুলনামূলক বড় মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যায়। মূল সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব করলেও আশপাশের গ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষই কেনাকাটা করে।
উথলী গ্রামের বাসিন্দা প্রবীর কুমার মোহন্ত জানান, প্রায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলাটি যেমন মাছের জন্য বিখ্যাত, তেমনি মেলার দিন নতুন শাক-সবজিতেও ভরপুর থাকে। এ কারণে আশপাশের লোকজন মেলায় ছুটে আসেন। তিনি বলেন, শুধু যে মাছ আর সবজিই নয়, মেলার আবহের জন্য সেখানে নাগরদোলা, শিশু-কিশোরদের খেলনার দোকান বসেছে। সেই সঙ্গে মিষ্টান্ন ও দইয়ের একটি বড় বাজারও বসেছে মেলা চত্বরে।
উথলী বাজারের ইজারাদার আজিজুল হক জানান, এবার মেলায় দেড় হাজার মণের বেশি মাছ কেনাবেচা হয়েছে যার আর্থিক মূল্য দুই কোটি টাকার মতো বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, মেলার বিষয়টি এতোটাই প্রচার পেয়েছে যে আশপাশের ২০ গ্রামের মানুষই শুধু নয় বরং বগুড়া শহর থেকেও অনেকে মাছ কেনার জন্য মেলায় যান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।