জুমবাংলা ডেস্ক : টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা বাসস্ট্যান্ডের গোলচত্বরে নামলেই নজরে পড়ে শিল্পী মৃণাল হকের দৃষ্টিনন্দন আনারস ভাস্কর্য। গোলাকৃতির সুউচ্চ মঞ্চে রংবিলাসের মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জায়েন্টকিউ, কেলেন্ডার আর হানিকুইন জাতের আনারস। এ রসালো ফলের প্রাচুর্যতায় মধুপুর এখন আনারস নগরী বলে খ্যাত।
কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের সময় ইউরোপে নিয়ে আসেন আনারস। পতুর্গীজরা অষ্টাদশ শতাব্দীতে তা ভারতের কেরালা হয়ে আনেন মেঘালয়ে। আর ১৯৪২ সালে মেঘালয় থেকে মধুপুরের ইদিলপুর গ্রামে গারো মিজিদয়াময়ী প্রথম আনারস আনেন। তারপর আট দশক। মধুপুর গড়ের মধুপুর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া ও ঘাটাইল উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার একরে ছড়িয়ে পড়ে আনারস চাষ। তবে সিংহভাগই মধুপুর উপজেলায়।
মধুপুর উপজেলার জলছত্র গ্রামের চাষি তৌহিদুল জানান, ক্যালেন্ডার জাতের আনারস সর্বোচ্চ পাঁচ কেজির হয়। বড় আকারের আনারস এবার সর্বোচ্চ ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বার ছিল ৬০/৬৫ টাকা। ফলে চাষিদের মন খারাপ।
মাগন্তিনগর গ্রামের হাফিজুর জানান, জলছত্র, গারো বাজার, মোটের বাজার ও আশ্রা আনারসের বড় পাইকারি বাজার। সারা দেশে এখান থেকেই ফল যায়। মধুপুর ট্রাক মালিক সমিতি ট্রিপ নিয়ন্ত্রণের নামে সিন্ডিকেট করে পরিবহন ভাড়া বাড়ানোয় মহাজন ও পাইকাররা ফলের দাম কমিয়ে দিয়েছে। ফলে চাষিরা ঠকছে।
জাঙ্গালিয়া গ্রামের চাষি শামসুল হক জানান, মৌসুমের শুরুতে বাইরের মহাজনরা শত শত বাগান আগাম কিনে নেন। সব ফল সাইজে বড় এবং এক সঙ্গে পাকানোর জন্য ইথরেল জাতীয় হরমোন স্প্রে করেন। এতে ফল দ্রুত পাকে, রং উজ্জ্বল হয়। তবে বিস্বাদ ও টক লাগে। কেমিক্যাল প্রয়োগের অভিযোগে ভারতে আনারস রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজার দরে।
ইদিলপুর আনারস চাষি সমিতির সাবেক সম্পাদক আব্দুল মান্নান জানান, ফলে কেমিক্যাল প্রয়োগ মারাত্মক সমস্যা। এটি বন্ধে প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই। পাহাড়ি এলাকার অনেক রাস্তাঘাট পাকা না হওয়ায় ফল পরিবহনে দ্বিগুণ খরচ হয়। ইদিলপুর আনারস প্রক্রিয়াজাত কারখানা বন্ধ হওয়ায় চাষিরা হতাশ হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফাও এগিয়ে এসেছে। তাদের সহযোগিতায় ৭০ কৃষক আনারস থেকে চিপস, জ্যাম ও জেলি বানিয়ে বাজারজাত করছেন। আনারস মহাজন সিদ্দিক হোসেন জানান, ভারতে রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর দেশি প্রাণ কোম্পানি গত বার থেকে আনারস কিনছে। প্রতিদিন তিন-চার ট্রাক করে আনারস নিচ্ছে।
বিষমুক্ত ও অর্গানিক ফল চাষের প্রবক্তা মহিষমারার সানোয়ার হোসেন জানান, এবারে আনারসের দাম কম হওয়ার পেছনে সিলেট ও উত্তর বঙ্গের বন্যাও কিছুটা দায়ী। দেশে ফল উৎপাদন বাড়লেও বিদেশ থেকে ফল আমদানি কমছে না। লোভী পাইকার ও মহাজনরা আনারসে ব্যাপক হারে কেমিক্যাল প্রয়োগ করায় ভোক্তারা আনারস খেতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। তিনি ক্ষতিকর কেমিক্যাল বন্ধের জন্য আনারস চাষিদের নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে অর্গানিক ফল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য কাজ করছেন। প্রশাসনিক সহযোগিতা ছাড়া এটির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, কেমিক্যাল মুক্ত ফল চাষে কাজ করছেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।