বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : গোটা ২০২৩ সালজুড়েই প্রযুক্তি খাতে বেশ কিছু নাটকীয় মূহুর্ত দেখা গেছে। হোক সেটা ইলন মাস্কের ‘একের পর এক আবদার’ বা জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা।
তবে, অনেক কোম্পানিই লাভের মুখ দেখায় এবারের বছরকে সম্ভবত খারাপ বলার উপায় নেই। আর এ খাতের সম্মুখসারীতে ছিল থ্রেডস ও এআই প্রযুক্তি। এ ছাড়া, অগমেন্টেড রিয়ালিটি’র সুবিধাওয়ালা ভিশন প্রো হেডসেট উন্মোচন করে চমক দেখিয়েছে মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যাপলও।
সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ২০২৩ সালের সবচেয়ে বড় বিজয়ীদের তালিকা প্রকাশ করেছে প্রযুক্তি সাইট এনগ্যাজেট।
থ্রেডস
প্রাথমিকভাবে উত্থান দেখার পর ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যাপটি ব্যবহারের আগ্রহ কমে আসতে দেখা গিয়েছিল। তবে, ১০ কোটি মাসিক ব্যবহারকারীর মাইলফলক স্পর্শ করে ‘বড় কামব্যাক’ দেখিয়েছে সোশাল মিডিয়া কোম্পানি মেটা’র তৈরি অ্যাপটি।
এদিকে, বছরের মাঝামাঝি সময়ে উন্মোচন ও এর কয়েক মাস পর ইইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোয় চালু হওয়ার পরও অ্যাপলের সর্বোচ্চ ডাউনলোড করা অ্যাপের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে আছে থ্রেডস অ্যাপটি।
এ ছাড়া, মাস্টোডনের মতো সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য ‘ক্রস প্ল্যাটফর্ম’ সুবিধাও চালু করছে থ্রেডস।
তবে এতো বাধার মুখে পড়ার পরও থ্রেডসের অগ্রগতি থেকে ইঙ্গিত মেলে, ব্যবহারকারীদের কাছে বিকল্প সামাজিক মাধ্যমের চাহিদা আসলেই বেশি।
থ্রেডসে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এর মতো উন্নত ফিচার না থাকলেও ইনস্টাগ্রাম ও মেটার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে। এনগ্যাজেটের প্রতিবেদক বলছেন, এখন থ্রেডসে এমন কিছু আছে, যা এক্স-এও নেই। সেটি হল ‘মোমেন্টাম’।
জেনারেটিভ এআই
২০২২ সাল শেষ হয়েছিল চ্যাটিজিপিটি’র আলোড়ন সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘বিং এআই’ উন্মোচন করে মাইক্রোসফট, যেখানে ওপেনএআইয়ের পরবর্তী প্রজন্মের চ্যাটবট ‘জিপিটি ৪’ ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে। এর পর থেকেই এআই নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির যুদ্ধ শুরু হয়।
বিংয়ের উন্মোচনের পরপরই নিজস্ব চ্যাটবট ‘বার্ড’-এর ঘোষণা দিতে বাধ্য হয় গুগল। তবে, জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বিষয়ক এক প্রশ্নের ভুল জবাব দেওয়ার পরই কোম্পানিটির শেয়ারমূল্য আট শতাংশ কমে যায়।
শেষ পর্যন্ত গুগলের এমন ভাবমূর্তি তৈরি হয় যে, বিং ও চ্যাটজিপিটি নিয়ে মাইক্রোসফট ও ওপেনএআই যে সাফল্য অর্জন করেছে, সেটির পেছনেই ছুটছে গুগল।
মাইক্রোসফট ও গুগল ছাড়াও ২০২৩ সালে গোটা প্রযুক্তি বিশ্বের ‘বাজওয়ার্ড’ ছিল এআই।
এআই কীভাবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে এখনও অনেক কিছু জানা বাকি। তবে, ‘ডিস্ট্রিবিউটেড এআই রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর প্রতিষ্ঠাতা টিমনিট জেব্রু ও মার্গারেট মিশেলের মতো গবেষকরা ক্রমাগতই এআইয়ের নৈতিক ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন।
ফোল্ডএবল ফোন
২০১৯ সাল থেকেই ফোল্ডএবল বা ভাঁজ করা যায় এমন ফোনের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে আছে স্যামসাং। তবে, ২০২৩ সালে পিক্সেল ফোল্ড ও ওয়ানপ্লাস ওপেনের মতো দুটি নতুন চ্যালেঞ্জার পেয়েছে কোম্পানিটি। ফোন দুটির কোনোটিই একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দাবি করতে না পারলেও কয়েকটি চমকপ্রদ উদ্ভাবনের দেখা মিলেছে ফোনগুলোয়।
ওপেন ফোনটির মাধ্যমে একটি বুদ্ধিদীপ্ত কার্ডভিত্তিক মাল্টিটাস্কিং ব্যবস্থা তৈরি করেছে ওয়ানপ্লাস, যার ফলে খুব সহজেই একটি অ্যাপ থেকে অন্য অ্যাপে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠেছে। স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি জি ফোল্ড ৫ থেকেও ওজনে হালকা ও দেখতে পাতলা হলেও ফোনটি খুবই ব্যয়বহুল। তবে, ফোনটি কেনার সময় বিক্রেতাকে অন্য যে কোনো ফোন জমা দিলে এর দাম কমে দাঁড়ায় দেড় হাজার ডলারে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীও কোনো ধরনের বাধার মুখে না পড়েই নতুন এ ফোন কেনার সুবিধা পেয়ে থাকেন।
ঠিক যে বছর স্যামসাংয়ের উদ্ভাবনের গতি কমে আসছে এমন ধারণা সৃষ্টি হল, একই সময় নতুন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি তাদের প্রতিযোগিতা বাড়িয়েছে। তবে, ফোল্ডএবল ফোন কিনতে ইচ্ছুক ব্যবহারকারীদের জন্য এটি লাভজনক বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এনগ্যাজেট।
অ্যাপল ভিশন প্রো
বিশ্বের প্রথম এমপি৩ প্লেয়ার অ্যাপল তৈরি করেনি। আর প্রথম স্মার্টফোন তো নিশ্চিতভাবেই নয়। তবে, আইপড ও আইফোন তৈরির মাধ্যমে প্রচলিত পণ্যে উদ্ভাবনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে কোম্পানিটি।
ভিশন প্রো’র বেলাতেও তেমনই ঘটেছে। তবে, এখনও সবার সামর্থ্যের নাগালে আসেনি ডিভাইসটি। একই ভিআর খাতে ‘অকুলাস (বর্তমানে মেটা’র মালিকানায়)’ ও ‘এইচটিসি ভাইভ’ গ্রাহক টানছে প্রায় এক দশক ধরে। তবে, এর চেয়েও বড় অগ্রগতি দেখিয়েছে ভিশন প্রো। যা একসময় শুধু কল্পনা করা যেত, ভিশন প্রো হেডসেটে ঠিক সেটিই নিয়ে এসেছে অ্যাপল। হোক সেটা ব্যবহারকারীর ডেস্কের ওপর ভাসতে থাকা অ্যাপ বা তার বেডরুমের দেয়ালে পিন করে রাখা ভিডিও অথবা ৩ডি স্পাশিয়াল ভিডিও’তে ব্যবহারকারীর পুরোনো কোনো মুহুর্ত পুনরায় ফিরিয়ে আনা।
পাশাপাশি, ‘ইমার্সিভ ভার্চুয়াল’ অভিজ্ঞতার সুবিধাও দিয়ে থাকে হেডসেটটি।
গেইমিং হ্যান্ডহেল্ড
‘হ্যান্ডহেল্ড’ গেইমিং পিসি আসলে ব্যবহারকারীর পছন্দের সবকিছুরই সমন্বিত রূপ, যা ‘গেইমবয় অ্যাডভান্স’ বা ‘পিএসপি’র চেয়ে বেশি ক্ষমতার। এ ছাড়া, পছন্দের যে কোনো গেইম খেলার সুবিধাও মেলে এতে।
২০২৩ সালে এমন বেশ কিছু চমকপ্রদ নকশার ডিভাইস বাজারে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে লেনোভো’র ‘লিজিয়ন গো’ থেকে শুরু করে নতুন করে ঢেলে সাজানো ‘ওলেড’ ডিসপ্লেওয়ালা ‘স্টিম ডেক’।
একই শ্রেণির আসুস রোগ অ্যালি’র মতো ডিভাইসে দেখা গেছে ঝকঝকে নকশা। এ ছাড়া, আয়ানেও, জিপিডি’র মতো ছোট উৎপাদকরাও নিজস্ব পণ্য এনেছে বাজারে। তবে, সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল, এগুলোর দাম গতানুগতিক গেইমিং ল্যাপটপের চেয়ে কম। সে হিসাবে, ২০২৩ সালে গেইমাররা ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অপশন পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে এনগ্যাজেট।
নিউরালিংক
মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের বাধার মুখে পড়ে ২০২৩ সালে প্রবেশ করেছিল ইলন মাস্কের চিপ স্টার্টআপ নিউরালিংক। ২০২২ সালে এক পিটিশনে কোম্পানিটির মানুষের ওপর চিপ বসানোর পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল এফডিএ, যেখানে তারা কারণ হিসেবে উল্লেখ করে, এর প্রোটোটাইপ পরীক্ষার সময় অনেক শুকর হত্যা করা হয়েছিল। একই বছরের জুলাই মাসে এক মানব রোগীর ওপর নিজস্ব ডিভাইস বসিয়ে নিউরালিংকের চেয়ে একধাপ এগিয়ে গেছে প্রতিদ্বন্দ্বী সিংক্রোন।
অন্যদিকে, নিউরালিংকের বিরুদ্ধে প্রাণী নিপিড়নের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইউএসডিএ’। ২০২২ সালের নভেম্বরে মাস্ক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে নিউরালিংকও পরীক্ষা চালাবে। তবে, এখনও তার বাস্তবায়ন ঘটেনি।
২০২৪ সালে প্রবেশের সময় আগের চেয়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় আছে নিউরালিংক। এরইমধ্যে কোম্পানির গবেষণাগার পরিদর্শন করেছে ইউএসডিএ। তবে, সেখানে কেবল একটি লঙ্ঘনের ঘটনা খুঁজে পাওয়া যা, যা ২০১৯ সালে নিউরালিংক নিজেই জানিয়েছে বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের হাতে আসা প্রতিবেদনে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।