জুমবাংলা ডেস্ক : দ্বীপ জেলা ভোলার উপকূলীয় এলাকা লালমোহনের খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় থেকে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ তথা গুড়া মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার সচেতন মহল ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই দেশীয় অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– জলাভূমির সাথে বিশেষ করে প্লাবনভূমির সাথে সংযোগখাল ভরাট, জলাশয়ে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা এবং প্রজনন মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া।
এছাড়া মনুষের সৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে– খাল ও নদীতে অবৈধ বিহন্দী, খুরছি ও মশারী জাল বসিয়ে মাছের পোনা ধ্বংস করা। জমিতে রাসায়নিক সার ও অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজননসক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার, মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করা এবং ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ সরঞ্জামের অবাধে ব্যবহার।
বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা এসব মাছের অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেসব মাছ পূর্ণবয়স্ক হলে ৫ থেকে ২৫ সেমি. পর্যন্ত লম্বা হয়, সেগুলোকে সাধারণত ছোট মাছ বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকে মলা, পুঁটি, চেলা, চান্দা, চাপিলা, মেনি, বাইম, খলিশা, টেংরা, ফলি, পাবদা, শিং, মাগুর ইত্যাদি ছোট মাছ এ দেশের মানুষের বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য তালিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ও প্রবীণ সমাজসেবক নুরুল ইসলাম মিয়া জানান, বিলে এক সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বাজারগুলোও ভরে যেত দেশীয় মাছে। অথচ বিলের অধিকাংশ এলাকা এখন ফসল চাষের আওতায় নেয়া হচ্ছে। এসব জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার ও পানি স্বল্পতার কারণে এখন আর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
মৎস্যজীবী মো: ছিদ্দিক, জাকির ও আব্দুল মালেক জানান, ‘ছোট প্রজাতির মাছের সরবরাহ অনেক হ্রাস পেয়েছে। ছোট মাছের চালান কমে গেছে। উৎপাদন ও কমে যাওয়া হচ্ছে প্রধান কারণ। এর সঙ্গে বেড়ে গেছে স্থানীয় চাহিদা।’
লর্ড হার্ডিঞ্জ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার ডা: মো: নাসির উদ্দীন বলেন, ‘প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে পুষ্টিগুণসম্পন্ন মাছ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্যও উদ্বেগজনক। আকারে ছোট হলেও এসব দেশীয় মাছ পুষ্টিগুণে সেরা। তাই এসব মাছ বিলুপ্তির কারণে পুষ্টির বড় উৎস হারিয়ে যাবে। বড় মাছে অধিক পরিমাণে প্রোটিন থাকে, কিন্তু ছোট মাছে প্রোটিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন ও ভিটামিন থাকে, যা চোখ ভালো রাখে এবং দেহগঠনে সহায়তা করে। এছাড়াও ছোট মাছ দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে, ফুসফুসের প্রদাহ কমায় এবং দাঁত ও হাড়ের গঠন ভালো রাখে।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ না ধরে প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমানে বিদেশী প্রজাতির কিছু মাছ স্বল্পসময়ে বৃদ্ধি ও লাভজনক হওয়ায় অনেক মৎস্যচাষী সেদিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে এক্ষেত্রে জলাশয়গুলোতে ডিমওয়ালা মাছ অবমুক্তকরণ, ছোট মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ, জেলে পরিবারগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ে মাছ ধরার পরিবর্তে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি আমরা।
এছাড়া সমন্বিত বালাইনাশক প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা সম্ভব। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।