জুমবাংলা ডেস্ক : পাসপোর্ট-ভিসা ও বোর্ডিং পাস ছাড়াই রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েতগামী বিমানে উঠে দেশজুড়ে আলোচনায় আসা শিশু জুনাইদ মোল্লাকে বাড়িতে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। জুনাইদ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারইহাটি গ্রামের ইমরান মোল্লার ছেলে। ইমরান মোল্লা পেশায় একজন সবজি ব্যবসায়ী। গত সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি বিমানে উঠে পড়েছিল জুনাইদ।
পরিবারের সদস্যরা জানান, এর আগেও কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ায় জুনাইদকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। ৪ দিন আগে দাদিকে মাদ্রাসায় যাওয়ার ওয়াদা করে বের হয়ে ঢাকায় গিয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠে পড়ে বিমানে। জুনাইদকে এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় করেছে এলাকাবাসী।
গত বুধবার বিকালে জুনাইদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমের মধ্যে খাটের ওপর বসে রয়েছে জুনাইদ। পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে শেকলটি তালাবদ্ধ করা রাখা হয়েছে।
মা অন্যত্র চলে যাওয়ার পর সৎমায়ের কাছে বড় হতে থাকে জুনাইদ। ভর্তি করে দেওয়া হয় উজানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। এখন ওই মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে। তবে বিভিন্ন সময় বাড়ির কাউকে না বলে বাইরে চলে যায়। তবে এবার ঘটিয়েছে অবাক করা কাণ্ড।
জুনাইদ জানায়, দাদি আসমা বেগমকে বলে তালাবদ্ধ ঘর থেকে বাইরে বের হয় জুনাইদ। এরপর প্রথমে ইজিবাইকে করে মুকসুদপুর বাসস্ট্যান্ড। তারপর ঢাকার বাসে উঠে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে নামে জুনাইদ। সেখান থেকে বাসে করে বসুন্ধরা, এরপর এয়ারপোর্ট যায়। উপরে উঠতে গেলে বাধা পেয়ে অন্য পাশ দিয়ে ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠে। পরে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে সোজা চলে যায় কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের রাত ৩টা ১০ মিনিটের একটি ফ্লাইটে। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো বিমানের সিটে বসে থাকার পর ওই সিটের যাত্রী এসে তাকে সিট থেকে তুলে দেয়। তখন বিমানের আর কোনো সিট ফাঁকা ছিল না। পরে তাকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তারপর তাকে রাখা হয় বিমানবন্দর থানা হেফাজতে।
এয়ারপোর্ট থানা থেকে ফোন আসার পর জুনাইদের খোঁজ পায় পরিবার। পরে জুনাইদের চাচা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানেও এসে পালিয়ে যায় জুনাইদ। পরে খুঁজে বের করে পায়ে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করে ঘরের খুঁটির সাথে আটকে রাখা হয়েছে।
জুনাইদের ছোট চাচা ইউসুফ মোল্লা বলেন, এয়ারপোর্ট থানা থেকে তাকে মোবাইলে ফোন দিয়ে জুনাইদ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়ার পর ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়। বলা হয় তার মা অথবা বাবাকে এসে জুনাইদকে নিয়ে যেতে। গত মঙ্গলবার রাত তিনটার সময় জুনাইদকে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। বুধবার বাড়িতে আসার পর আবার পালিয়ে যায় জুনাইদ। পরে খালার বাড়ি থেকে তাকে ধরে আনা হয়েছে।
ইউসুফ মোল্লা আরও জানান, তার ভাতিজা জুনাইদ মোল্লা খুবই দুরন্ত। তাকে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে সে বারবার পালিয়ে আসে বলে তাকে বাড়ির পাশে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করা হয়েছে। তারপরও সে বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে হারিয়ে যায়, আবার একাই ফিরে আসে। এর আগে সে পালিয়ে ঢাকা, মোংলা, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছে।
জুনাইদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন, ১৮ মাস বয়সে অভাব-অনটনের কারণে জুনাইদের মা ওকে ফেলে গিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে। পরে তিনি আবার বিবাহ করেন। জুনাইদ ছাড়াও তার আরও এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ওর সৎমা অন্য ছেলেমেয়ের মতোই ওকেও ভালোবাসে। কিন্তু ছেলেটি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যায়। তাই বাড়ির পাশে আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। এ ঘটনার পর মনে হচ্ছে ওর মানসিক কোনো সমস্যা হয়েছে। শিগগিরই ওকে ভালো চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হবে এবং চিকিৎসা শেষে পায়ের শিকল খুলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পালিয়ে গেলে ঝামেলায় পড়তে হয় তাই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।