বিনোদন ডেস্ক : ২০০৪ সালে স্টিভেন স্পিলবার্গ নির্মাণ করেন ‘দ্য টার্মিনাল’। টম হ্যাঙ্কস অভিনীত বিখ্যাত সিনেমাটির গল্প জনৈক ভিক্টর নাভরস্কিকে ঘিরে। পূর্ব ইউরোপের কাল্পনিক দেশ ক্রাকোজিয়া থেকে ভিক্টর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে আসেন। তখন রাতারাতি তার দেশে শুরু হয় রাজনৈতিক টানাপোড়েন। ভিক্টর আটকে পড়েন এয়ারপোর্টে। অপেক্ষা করতে থাকেন ইন্টারন্যাশনাল লাউঞ্জে।
স্পিলবার্গের বহুল প্রশংসিত সিনেমাটি কিন্তু অনেকাংশেই সত্য। অবশ্য বাস্তব জীবনে ভিক্টর না, তার নাম মেহরান কারিমি নাসেরি। তার জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত ‘দ্য টার্মিনাল’-এর পাটাতন। এক অদ্ভুত জীবনের সাক্ষী হয়ে সেই নাসেরি মৃত্যুবরণ করলেন গতকাল শনিবার। যেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার জন্যই শেষবারের মতো এসেছিলেন বিমানবন্দরে।
নাসেরির জন্ম ১৯৪৫ সালে ব্রিটিশ অধিকৃত ইরানের সোলেইমানে। বাবা ইরানীয় ও মা ব্রিটিশ। ইংল্যান্ডে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে ইরান ত্যাগ করেন তিনি। দেশে ফিরে গিয়ে শাহ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে কোন ধরনের পাসপোর্ট ছাড়াই তাকে নির্বাসিত করা হয়।
‘দ্য টার্মিনাল’-এর ভিক্টরের যুক্তরাষ্ট্রের আসার কাহিনিটি এর সঙ্গে মিলিয়ে নিন। অল্পতেই বোঝা যাচ্ছে, ভিক্টরের মতো রোমান্টিক ছিল না নাসেরির জীবন। তার শেষটুকু নানা নাটকীয়তা ও ট্র্যাজেডিতে ভরা।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন নাসেরি। যদিও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর তাকে রিফিউজি হিসেবে পরিচয়পত্র দেয়, যা চুরি হয়ে যায় প্যারিসের ট্রেন স্টেশনে। ফ্রান্স পুলিশ গ্রেফতার করলেও কাগজপত্র না থাকায় কোন ব্যবস্থাই নিতে পারেনি।
ফলে ১৯৮৮ সালের আগস্ট থেকে চার্লস দি গল এয়ারপোর্টে অবস্থান করতে থাকেন নাসেরি। পরবর্তীতে অভিবাসী আইন সংক্রান্ত নানা নিষেধাজ্ঞায় সেখানেই বসবাস করতে হয়েছে ১৮ বছর।
দেরিতে হলেও রিফিউজি পরিচয়পত্র দেয়া হয়। তবে ২০০৬ সালে হাসপাতালে ভর্তির আগে পর্যন্ত নাসেরি এয়ারপোর্টে অবস্থান করেন। ১নং টার্মিনালে একটা লাল প্লাস্টিকের বেঞ্চে ঘুমাতেন। সময় কাটত ডায়েরি লিখে, ম্যাগাজিন পড়ে আর পর্যটকদের যাওয়া-আসা দেখে।
দীর্ঘ সময়ে সেখানকার শ্রমিকদের সঙ্গে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। নিয়মিত যাত্রীদের কাছেও পরিচিতি লাভ করেন লর্ড আলফ্রেড নামে। যদিও মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েন। যেন একজন ক্লান্ত কয়েদি। শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সালে একটা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয় তার জন্য।
হোটেল, স্কুলসহ রয়েছে সবকিছুই, তবুও ফ্ল্যাটের দামে বিক্রি আস্ত গ্রাম
সপ্তাহ খানেক আগেই এয়ারপোর্টে ফিরে এসেছিলেন নাসেরি। শনিবার দুপুরের দিকে টুএফ টার্মিনালে হার্ট অ্যাটাক করেন। পুলিশ ও চিকিৎসকদের সম্মিলিত চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি। রাজনৈতিক টানাপোড়েনে পরিচয়হীন হয়ে পড়া নাসেরিকে মৃত্যু অন্তত একটা পরিচয় দিল, যা কেউ কেড়ে নিতে পারে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।