বিনোদন ডেস্ক : সমুসা, শিঙাড়া, নিমকি ও সাদা পুরি কয়েক দিন আগেও ছিল পাঁচ টাকা করে। এখন এসব খাবার ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আগের ১৫ টাকা প্লেটের ভাতের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা। আর বিনামূল্যে যে সবজি ও ডাল দেওয়া হতো, তা এখন ১০ টাকা করে বাটি বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে মাছ, মুরগি ও খাসির মাংসেরও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি এভাবেই বর্ণনা করছিলেন সাদুল্যাপুর উপজেলা মোড়ের হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান।
হোটেল ম্যানেজার বিপুল কুমার জানান, কিছুদিন আগেও এই হোটেলে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন সেই বিক্রি কমে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দাঁড়িয়েছে। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে খাবারের পরিমাণ ঠিক রেখে দাম বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় মানুষ এখন একদম ক্ষুধার্ত না হলে আর হোটেলে খেতে চায় না। এভাবে চলতে থাকলে বন্ধ হয়ে যাবে এই প্রতিষ্ঠান।
শহরের একটি টিন দোকানে কাজের সহযোগী মোজা মণ্ডল জানান, গত রমজানের ঈদে সর্বশেষ তিনি গরুর গোশত খেয়েছিলেন। এরপর আর তিনি গরুর গোশত কিনতে পারেননি, সামর্থ্য নেই। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে সামনে কোরবানির ঈদে আবার গরুর গোশত খাবেন।
মুরগি বিক্রেতা মিলন মিয়া বলেন, মুরগির খাদ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সাদুল্যাপুর বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। ফলে ক্রেতাও কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা গোটাতে হবে।
ছয় সদস্যের পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাওয়া মাছ বিক্রেতা আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, নদীতে পানি বাড়লেও চাহিদামতো মাছ মিলছে না। এজন্য যেতে হচ্ছে খামারিদের কাছে। তবে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাছের দামও বেড়েছে, কমে গেছে ক্রেতা।
শহরের ঝালমুড়ি বিক্রেতা ফুল মিয়া বলেন, বিক্রি কমে গেছে। ফলে ঋণের কিস্তির টাকা জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আগের ৭০ টাকা প্যাকেটের চানাচুর এখন কিনতে হচ্ছে ১২৫ টাকায়। ছোলা-বাদামের দামও বেড়েছে। ফলে একটু কম দিলেই ক্রেতারা কটু কথা শুনিয়ে দেন। এভাবে চলতে থাকলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
উপজেলা শহরে লেপ-তোষক তৈরির কারিগর আব্দুস সামাদ মিয়া। ৩৫ বছর ধরে তিনি এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই আয় দিয়েই চলে তাঁর পাঁচ সদস্যের পরিবার। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এ পরিবারটি আর কুলিয়ে উঠতে পারছে না।
আব্দুস সামাদ মিয়া বলেন, মানুষ উচ্চমূল্যে তুলা, কাপড়, সুতা কিনে তাঁকে দিয়ে লেপ-তোষক তৈরি করে নিচ্ছেন। তবে তাঁকে মজুরি দেওয়ার সময় আগের মতোই দিচ্ছেন। এভাবে তাঁর আর সংসার চলছে না। তাঁর প্রশ্ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখীর বাজারে খেটে খাওয়া মানুষ কোথায় যাবে। বাজারদরের সঙ্গে তাদের শ্রমের মূল্য বাড়ছে না কেন।
সাদুল্যাপুর বাজারের লতা ভ্যারাইটিজ স্টোরের মালিক নরেশ চন্দ্র সাহা বলেন, তাঁর দোকানে আড়াই শতাধিক ধরনের পণ্য আছে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। পণ্যের মূল্য নিয়ে প্রায়ই ক্রেতার সঙ্গে বাগ্বিত া হচ্ছে। বেচা-বিক্রিও অনেকে কমেছে।
রাসেল কনফেকশনারির মালিক হাফেজ এনায়েতুল মোস্তাফিজ রাসেল বলেন, বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তা ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ঝগড়া বাধতেই থাকবে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখীর বাজারে কম মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে কাঁচা সবজি। সাদুল্যাপুর বাজারের বিক্রেতা মুন্না সাহার তথ্যানুযায়ী, গত শনিবার এখানে প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা, করলা ১৫ টাকা, কাঁকরোল ১০ টাকা, ঝিঙা ১০ টাকা, বরবটি ১৫ টাকা, আলু ১৮ টাকা, কদোয়া ১০ টাকা ও ঢ্যাঁড়শ ১০ টাকা।
সাদুল্যাপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সাবু বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর হতে হবে। তা ছাড়া মানুষ চরম আর্থিক সমস্যায় ভুগবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগম বলেন, কেউ অবৈধ মজুদ গড়ে উচ্চ মূল্য নিলে কিংবা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।