জুমবাংলা ডেস্ক : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বিরাট রাজার ঢিবিতে (উঁচু ভূমি) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢিবিটি খনন শুরুর পর ইটের তৈরি প্রাচীন অবকাঠামোসহ এ পর্যন্ত নানা ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের আলামত পাওয়া গেছে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খননকারী দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা রাইজিংবিডিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এসব আলামতের মধ্যে বেশকিছু প্রাচীন অবকাঠামো ও প্রত্নতাত্ত্বিক চিহ্ন পাওয়া গেছে, যেগুলো প্রাচীন ও মধ্যযুগের হতে পারে বলে ধারণা করছে খনন কাজে নিয়োজিত রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক দল।
ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, প্রাচীন এই ঢিবিটি নিয়ে গত বছর কাজ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ঢিবিটির আকার ৫০ মিটার, প্রস্থ ৩৫ মিটার এবং ৪ মিটার উচ্চতা দৃশ্যমান হয়েছে। এর আশপাশে আরও ৪টি ঢিবির সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে, এসব ঢিবি কোন শাসন আমলের এবং কোন রাজার তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। আরও খননকাজ বাকি আছে। কেবল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত এখানে কিছু পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট (সাধারণত ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হতো), কিছু ভিত্তিপ্রস্তর (পিলার) পাওয়া গেছে, যা প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে। নিদর্শনগুলো ঠিক কোন সময়ের এবং এখানে কাদের বসবাস ছিল, সেটা জানতে আরও গবেষণা করতে হবে। অনুমান করে এসব বলা সম্ভব নয়। খনন কাজ সম্পন্ন হলে সঠিক এবং বিস্তারিতভাবে বলা যাবে।
তিনি স্থানীয় জনশ্রুতির বরাত দিয়ে বলেন, এখানে নাকি একসময় একটি প্রাচীন নগরী বা দূর্গ ছিল। নগরীর নিরাপত্তার জন্য সুউচ্চ এবং প্রশস্ত প্রাচীর ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, মূল অবকাঠামোর সঙ্গে আরও দুই-তিনটি ধর্মীয় উপসনালয়ের সংযোগ সড়ক ছিল, যা এখন অনেকটাই ধ্বংসপ্রাপ্ত।
গোবিন্দগঞ্জের স্থানীয় এক গবেষক খাজা এম এ কাইয়ুম দীর্ঘ ৪০ বছর বিরাট রাজার ঢিবি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার একটি নোটবুকে লেখা তথ্য অনুযায়ী, বিরাট রাজার গোটা ভারতবর্ষে ‘মৎস্যরাজ’ হিসেবে পরিচিতি ছিলেন। এই অঞ্চলে তিনি বড় বড় পুকুর খনন করে মাছ চাষ করতেন। তিনি এখানে তার জীবদ্দশায় ৯৯৯টি পুকুর খনন করেন।
অন্যদিকে, ১৯২৫-২৬ সালে রাখাল রাজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ১৯০৫ সালের দিকেও এ স্থানটি জঙ্গলে ঘেরা পরিত্যক্ত একটি ঢিবি ছিল। কয়েক বছর আগে স্থানীয় সাঁওতালরা জায়গাটি পরিষ্কার করে বসবাস শুরু করেন।
প্রত্নতত্ত্ব স্থানটির খনন কাজ শেষ হলে জায়গাটিকে সংরক্ষণ এবং সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলেও জানান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খননকারী দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা।
ছবিটি জুম করে দেখুন কি দেখতে পাচ্ছেন, উত্তরই বলে দেবে আপনার মানসিকতা
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চল গত বছর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিরাট রাজার ঢিবি খনন কাজ শুরু করে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত একটি খনন দল এ কাজটি করছে। দলের ৮ সদস্য হলেন- ড. নাহিদ সুলতানা (দলের প্রধান), ড. আহমেদ আবদুল্লাহ, রাজিয়া সুলতানা, হাবিবুর রহমান, এস এম হাসানাত বিন ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, তারিকুল ইসলাম ও উম্মে সালমা ইসা। বর্তমানে সেখানে বিশ জন শ্রমিক খনন কজে নিয়োজিত রয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।